শীতে শিশুর যত্ন

শওকত আলী রতন

প্রকৃতি জানান দিচ্ছে শীতের আগমনবার্তা। দরজায় কড়া নাড়ছে শীত। ঋতুবৈচিত্র্যে অন্য যেকোনো ঋতুর চেয়ে শীত একটু আলাদাই। এ সময়ে শিশুদের স্বাস্থ্য মায়েদের ভাবিয়ে তোলে। শীতে শিশুর যত্নে প্রত্যেক বাবা- মাকে রাখতে হবে বাড়তি সতর্কতা।

শীতের আগমনের সাথে সাথেই শিশুর ত্বকে বেশ পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। শীতে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে শুষ্ক আবহাওয়া থাকায় ত্বকে দেখা দেয় এক ধরনের রুক্ষতা। এ ছাড়া শিশুর ঠাণ্ডা লাগা, কাশি, জ্বর অথবা পেটের অসুখ-বিসুখ দেখা দিতে পারে। তাই তাদের প্রতি একটু বাড়তি যত্ন নিলে শীতের সমস্যা থেকে শিশুকে রক্ষা করা সম্ভব।

শিশু শীতে অসুস্থ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এ বিষয়ে ঢাকা বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক গাজী জহিরুল হাসান জানান, শীতকালীন অসুখ-বিসুখে সর্বপ্রথম শিশুরাই আক্রান্ত হয়ে থাকে। তাই এ সময় শিশুদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। ঠাণ্ডা সর্দি-কাশির বেশির ভাগই ভাইরাসজনিত।

শীতে শিশু ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হলে সেরে উঠতে একটু সময় লাগে। ভাইরাসজনিত যেকোনো সমস্যায় প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো দরকার পড়ে না। তাই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অহেতুক অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার করলে শিশুর ক্ষতি হতে পারে। প্রাথমিকপর্যায়ে ঘরোয়া চিকিৎসাতেই বেশির ভাগ সর্দিজ্বর ও কাশি সেরে যায়।

শীতের সময় ঈষদোষ্ণ পানি দিয়ে শিশুদের গোসল করাতে হবে। নাক যদি বন্ধ হয়ে যায় এ জন্য ফার্মেসিতে নাকের ড্রপ পাওয়া যায়। পাতলা কাপড় বা কটন বাডে দুই ফোঁটা ড্রপ লাগিয়ে নাক পরিষ্কার করে নিতে হবে।

শীতের কিছু সাধারণ সমস্যা যেমন- জ্বর, সর্দি, কাশি, হাঁপানি বেড়ে যায়। এ জন্য ঘাবড়ে না গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এ সময় শিশু যেন মেঝেতে খালি পায়ে না হাঁটে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শিশুর জন্য বাসায় ব্যবহার উপযোগী জুতা কিনতে পারেন। ঘরের মেঝেতেও কার্পেট অথবা মোটা কাপড় বিছিয়ে দিতে পারেন। তাহলে মেঝেতে বসে খেলা করলেও সহজে ঠাণ্ডা লাগবে না।

এ ছাড়া শিশুর বিছানা-বালিশ প্রতিদিন রোদে গরম করে নিলে শিশু আরাম বোধ করবে। প্রতিবার ডায়াপার ভিজিয়ে ফেলার পর তা পাল্টে দিতে হবে। তা না হলে শিশুর ঠাণ্ডা লেগে নিউমোনিয়া অথবা অন্য সমস্যা হতে পারে। শীতে শুষ্ক আবহাওয়ায় ধুলোবালু বেশি থাকে। খেয়াল রাখতে হবে শিশুর গায়ে যেন ধুলোবালু না লাগে এবং কাপড়চোপড়ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। শিশুকে পর্যাপ্ত শীতের কাপড় পরাতে হবে।

শীতের কাপড় যেন আরামদায়ক হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। দিনে দু-তিনবার বেবি অয়েল বা ভ্যাসলিন দিতে হবে। সকাল-বিকেল কানটুপি ও হালকা শীতের কাপড় পরিয়ে রাখতে হবে। রাতে ডায়াপার পরিয়ে শোয়াতে হবে। শিশুর নাক-মুখ যেন লেপ, কম্বল দিয়ে ঢেকে না যায় তার জন্য সতর্ক থাকুন। শিশুকে পর্যাপ্ত সময় রোদে রাখতেও ভুলবেন না। শীতে গোসল করতে কিন্তু বাধা নেই। কুসুমগরম পানি দিয়ে শিশুকে নিয়মিত গোসল করাতে পারেন। তবে গোসল করানোর সময় কানে যাতে পানি প্রবেশ না করে সেদিকে খেয়াল রাখুন।

শীতে শিশুদের মোটা সুতি কাপড় পরিয়ে দিন। আঁটসাঁট বা উলের কাপড় পরালে তাদের শরীর ঘেমে যেতে পারে, এদিকেও সতর্ক থাকতে হবে। রাতে ঘুমানোর সময় শিশুর গলা ও মাথায় পাতলা কাপড় পেঁচিয়ে রাখলে ভালো হয়। তবে মোজা পরে শিশুকে কখনোই ঘুমাতে দেয়া উচিত নয়। শীতকালে শিশুর যত্ন নিন ও তাকে সুস্থ রাখুন।

About পরিবার.নেট

পরিবার বিষয়ক অনলাইন ম্যাগাজিন ‘পরিবার ডটনেট’ এর যাত্রা শুরু ২০১৭ সালে। পরিবার ডটনেট এর উদ্দেশ্য পরিবারকে সময় দান, পরিবারের যত্ন নেয়া, পারস্পরিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করা, পারিবারিক পর্যায়েই বহুবিধ সমস্যা সমাধানের মানসিকতা তৈরি করে সমাজকে সুন্দর করার ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। পরিবার ডটনেট চায়- পারিবারিক সম্পর্কগুলো হবে মজবুত, জীবনে বজায় থাকবে সুষ্ঠুতা, ঘরে ঘরে জ্বলবে আশার আলো, শান্তিময় হবে প্রতিটি গৃহ, প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের মানবিক মান-মর্যাদা-সুখ নিশ্চিত হবে । আগ্রহী যে কেউ পরিবার ডটনেট এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ যেকোনো বিষয়ে লেখা ছাড়াও পাঠাতে পারেন ছবি, ভিডিও ও কার্টুন। নিজের শখ-স্বপ্ন-অনুভূতি-অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে দিতে পারেন সবার মাঝে। কনটেন্টের সাথে আপনার নাম-পরিচয়-ছবিও পাঠাবেন। ইমেইল: poribar.net@gmail.com

View all posts by পরিবার.নেট →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *