শিশুরা অপরাধী হয় কেন?

ডা: জ্যোৎস্না মাহবুব খান

বিজ্ঞানের ভাষায় অপরাধপ্রবণতার কারণ হলো ক্রমোজোমগত ত্রুটি। এ ছাড়া সন্তানদের অপরাধী হওয়ার পেছনে আরো অন্যতম দু’টি কারণ রয়েছে তা হলো- সামাজিক এবং পরিবেশগত কারণ। সামাজিক কারণের মধ্যে প্রথমেই আসে তার পরিবার। পরিবার হচ্ছে- সমাজের মধ্যে সবচেয়ে ছোট একক। সন্তান বড় হয় তার পরিবারে, যেখানে ছোটবেলা থেকেই তার মনে এক স্থায়ী প্রভাব পড়ে পরিবারের সদস্যদের আচার-ব্যবহার, নীতিবোধ এবং পারস্পরিক সম্পর্ক থেকে। তাদের স্নেহ ভালোবাসা ও সুশাসনে তাদের মানসিক বিকাশ ঘটে সঠিকভাবে।

যৌথ পরিবারে বাচ্চাদের লালন-পালন করা যতটা সহজ ও সুষ্ঠু হয় একক পরিবারে ততটা নয়। যৌথ পরিবারে মা-বাবা কর্মরত থকালেও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা তাদের অভাব অনেকটা পূরণ করতে পারে। আজকাল যৌথ পরিবার বিলুপ্তির পথে, ফলে একক পরিবারে তাদের লালনপালনের ভার থাকে কাজের লোকের ওপর। ফলে তাদের সুষ্ঠু প্রতিপালন ব্যাহত হয়। তারা নিরাপত্তার অভাব বোধ করে। তাদের মানসিক অস্থিরতা বাড়ে ফলে অপরাধপ্রবণতা বাড়ে। সন্তানকে কখনো অতিরিক্ত বকাবকি বা শাসন করা ঠিক নয়, তহলে তার মনে ক্রোধের উদ্রেক হয়, একগুঁয়েমি হয়ে যা খুশি তা-ই করবে, অপরাধমূলক কাজ করতে দ্বিধাবোধ করবে না।

সন্তানকে বুঝিয়ে শাসন করা উচিত যাতে সে তার ভুল বুঝতে পারে। সন্তান অপরাধী হওয়ার পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো- মা-বাবার কলহ, ভুল বোঝাবুঝি, বিয়েবিচ্ছেদ বা মৃত্যু, সন্তানের সামনে মা-বাবার কখনো ঝগড়া করা উচিত নয়, এতে সন্তানের মানসিক বিকাশ ব্যাহত হয়।

কিছু কিছু বাবা-মা আছেন যারা তাদের সন্তানকে বাইরের পরিবেশে মিশতে দেন না। এসব শিশুরা হঠাৎ বদসঙ্গে এসে পড়লে নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না, ফলে অপরাধমূলক কাজকর্মে ঝুঁকে পড়ে। তাই তাদের বাইরে মিশতে দিতে হবে, আবার নজরও রাখতে হবে।

তাদের অপরাধপ্রবণতার ব্যাপারে আধুনিক প্রচারমাধ্যমেরও অনেক ভূমিকা রয়েছে। স্থূল ও উপজীবনযাপনের ওপর নির্মিত অনুষ্ঠান তাদের বেশি আকৃষ্ট করে তার মানসিকতা ও মূল্যবোধ পরিবর্তন করে ফেলে। এসব দেখতে তাদের বিরত রাখাই ভালো।

নেশাজাতীয় জিনিস খেয়ে কখনোই বাচ্চাদের সামনে মাতলামি করা উচিত নয়, এটা তাদের সুস্থ মানসিক বিকাশের পরিপন্থী, যা পরে তাকে অপরাধের দিকে ঠেলে দেবে। সুতরাং তাদের সুস্থ মানসিক বিকাশের জন্য প্রত্যেক বাবা-মায়ের উচিত তার সন্তানকে শত ব্যস্ততার মধ্যেও বেশি বেশি সময় দেয়া। তার সাথে গল্প করা, খেলা, হৈহুল্লোড় করা, বন্ধুত্ব করা ইত্যাদি। এতে সন্তানের জীবন গড়বে সঠিক সুন্দরভাবে।

লেখক : জেনারেল প্রাকটিশনার (মহিলা ও শিশু), হাসান ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্স
মেইন রোড, মুক্তাগাছা, পো: মুক্তাগাছা, উপজেলা-মুক্তাগাছা, জেলা-ময়মনসিংহ

About পরিবার.নেট

পরিবার বিষয়ক অনলাইন ম্যাগাজিন ‘পরিবার ডটনেট’ এর যাত্রা শুরু ২০১৭ সালে। পরিবার ডটনেট এর উদ্দেশ্য পরিবারকে সময় দান, পরিবারের যত্ন নেয়া, পারস্পরিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করা, পারিবারিক পর্যায়েই বহুবিধ সমস্যা সমাধানের মানসিকতা তৈরি করে সমাজকে সুন্দর করার ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। পরিবার ডটনেট চায়- পারিবারিক সম্পর্কগুলো হবে মজবুত, জীবনে বজায় থাকবে সুষ্ঠুতা, ঘরে ঘরে জ্বলবে আশার আলো, শান্তিময় হবে প্রতিটি গৃহ, প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের মানবিক মান-মর্যাদা-সুখ নিশ্চিত হবে । আগ্রহী যে কেউ পরিবার ডটনেট এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ যেকোনো বিষয়ে লেখা ছাড়াও পাঠাতে পারেন ছবি, ভিডিও ও কার্টুন। নিজের শখ-স্বপ্ন-অনুভূতি-অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে দিতে পারেন সবার মাঝে। কনটেন্টের সাথে আপনার নাম-পরিচয়-ছবিও পাঠাবেন। ইমেইল: poribar.net@gmail.com

View all posts by পরিবার.নেট →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *