ব্যক্তিগত সমস্যা শেয়ারে উত্সাহ দেয়া
ব্যক্তিগত সমস্যা শেয়ার করার ব্যাপারে সন্তানকে উৎসাতি করতে হবে বাবা-মাকেই। প্রতিনিয়ত নানা ধরনের সমস্যা হয়। এসব সমস্যা শেয়ার না করলে দুশ্চিন্তা বাড়ে। কাজে অমনোযোগী হয়ে পড়ে। বেখেয়ালে আরো ভুল করে সমস্যা আরো জটিল করে তোলে।
সম্মানজনক আচরণ করা
সন্তানের সাথে সম্মানজনক আচরণ করতে হবে। যাতে সে খোলা মনে কিছু বলতে পারে। জনসম্মুখে বা অন্যদের সামনে তার সমালোচনা করা যাবে না। তার ব্যক্তিত্বে আঘাত দিয়ে, লজ্জা দিয়ে ক্ষতি হবে। সন্তানকে সম্মান দেওয়ার মধ্য দিয়ে পিতামাতার ভালোবাসা পূর্ণতা পায়। সন্তান পরিপূর্ণ মানুষ হওয়ার পর থেকেই তাকে সম্মান দিন।
অনেককেই সন্তানের সামনেই সন্তান সারাদিন কী কী দুষ্টুমি করে, খাবার নিয়ে বিরক্ত করে সেসব বলতে থাকেন। সন্তান ছোট মানুষ এই কথা ঠিক, কিন্তু তার ব্যাপারে সব কিছু সবার সামনে বলা সে পছন্দ নাও করতে পারে। সে নিজে নিজে ছোট হতে থাকে। যখন তখন যার তার সামনেই শাসন করাটাও ঠিক নয়। সন্তান এতে হীনমন্যতায় ভুগতে থাকে। সন্তানও যে একটা আলাদা ব্যক্তিসত্তা, তার নিজস্ব মতামত আছে, সম্মানবোধ আছে এবং এগুলো তার অধিকার- তা বুঝতে হবে।
সিদ্ধান্ত নিতে পথ দেখানো
মা-বাবার স্বপ্ন অনেক সময় সন্তানের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। মা-বাবা ও পরিবারের অন্যরাও তাদের মতামত চাপিয়ে দেন ছোটদের ওপর। সন্তান কী হবে, তার কী ইচ্ছা—সেসব শুনতে চান না অনেক মা-বাবা। নিজের সিদ্ধান্ত সন্তানের ওপর জোর করে চাপিয়ে দেন। নিজের অপূর্ণ ইচ্ছা বা স্বপ্ন সন্তানের মধ্য দিয়ে পূরণের চেষ্টা সন্তানের মানসিক বিকাশকে ব্যাহত করে। চাপিয়ে দেওয়া কোনো কিছুতে ভালো ফল আসে না।
সাহায্য-সহায়তা করা
সন্তান যদি সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে, তাহলে তাকে সাহায্য করা যেতে পারে। কোনো বিষয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকলে তা সন্তানের সঙ্গে আলোচনা করুন। এমন যদি হয় সন্তান ভুল করছে, তাহলে বুঝিয়ে বলতে হবে। নানা রকম উদাহরণ দিতে পারেন। যারা জীবনে সফল, তাদের সঙ্গেও আলোচনা করিয়ে দিতে পারেন। সফলভাবে যেন সে তার ভবিষ্যৎ গড়তে পারে, সে বিষয়ে সহযোগিতা করা উচিত মা-বাবার। তা না হলে শিশুর মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে।
সন্তানকে অন্যের সাথে তুলনা না করা
সন্তানের ঠিক যেই সময়টাতে সম্মান এবং অধিকারবোধ বেশি প্রয়োজন ঠিক তখনই আমাদের অভিভাবক সমাজ সবচেয়ে অসম্মান করে থাকেন। আর সেই বয়সটি হল বয়ঃসন্ধিকাল। এই সময় সন্তান তার নিজের সোশ্যাল এবং বায়োলজিক্যাল অস্তিত্বকে আবিষ্কার করে এবং নিজেকে নতুন করে চিনতে থাকে। কিন্তু এই সময়টাতে আমাদের সমাজের অভিভাবকরা সন্তানের কথার গুরুত্ব না দেওয়া, সন্তানকে অন্যের সাথে তুলনা করা, সন্তানকে যে কারো সামনে ছোট করা, আর্থিক চাপে রাখা এইসব কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে থাকেন।
কথা শুনা
নির্দেশের ভঙ্গিতে কথা বললে তা শিশুর পক্ষে বোঝা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। বরং তাকে খেলার ছলে নির্দেশ দিন। সংক্ষেপে বলুন আর শিশুর বয়স অনুপাতে শব্দ প্রয়োগ করুন। শিশু যাতে বুঝতে পারে ঠিক কী করলে সে বকুনি খাবে না। সন্তান যখন কথা বলে, কিছু বোঝাতে চায়, তখন তার কথার গুরুত্ব দিতে হবে। কেবল নিজের চাহিদা ও তার ভুল-ত্রুটি নিয়েই ধমকালে হবে না।
দৈনন্দিন জীবনের সাথে যুক্ততা
অনেক সন্তান আছে, যারা ইচ্ছাকৃতই বাবা-মায়ের অবাধ্য হয়। খুব ছোটবেলাতেই এমন স্বভাবের হদিশ পেলে তাকে প্রথমেই শাসন করে আরও একগুঁয়ে করে তুলবেন না। তার চেয়ে তার এই অভ্যাস বদলাতে তার বেড়ে ওঠায় কিছু নিয়মশৃঙ্খলা আনুন।
একই সাথে বন্ধু ও পিতামাতার ভূমিকা পালন
সামান্য অবাধ্য হলেই কি তাকে কড়া শাসন করে ফেলেন? এমন হলে নিজেকে একটু নিয়ন্ত্রণ করুন। সন্তানের হিতে যে কাজটা করছেন, তা যেন তার মনে উল্টো প্রভাব ফেলে আপনাকেই তার দূরের মানুষ করে না তোলে। তার চেয়ে ছোটখাটো ভুল করলে একটু বন্ধুর মতো বোঝান না, দেখবেন, ফল মিলছে হাতেনাতে।
শিশু যাতে অক্ষম অনুভব না করে
সারাক্ষণ সন্তানের সমালোচনাই করে যান? অন্যের সঙ্গে তুলনা করে তাকে খাটো করেন? এতে সন্তাম বাবা-মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা হারায়। এমন স্বভাব নিজের থাকলে আগে তা বদলান। সন্তান যেন কখনও আপনার কাছে তার নিজের মূল্য নিয়ে সংশয়ে না থাকে।
মতামত শুনা
শিশুরা জান্নাতের ফুল, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। আমাদের স্বপ্ন তাদের মাধ্যমেই বাস্তবায়িত হবে। তারাই দেশ, সমাজ, জাতির ভবিষ্যত, ভবিষ্যতের কর্ণধার৷ বাবা-মার কাছে সন্তানের চেয়ে বড় আর কিছুই হতে পারে না৷ তাদের ঘিরেই তো সমস্ত পরিকল্পনা, সব স্বপ্ন৷ ফলে তাদেরকে গুরুত্ব না দেয়া, তাদের মতামতের মূল্য না দেয়া। আমাদের অভিভাবকদের সবচেয়ে বড় একটি সমস্যা হচ্ছে যে তারা ধরেই নেন সন্তান তেমন কিছু বোঝে না, জানে না। সুতরাং তার মতামতের গুরুত্ব দেন না। অথচ সে ছোট বলে তার কথার গুরুত্ব নেই এই ধারণা করা মোটেও সমীচীন নয়।
সিদ্ধান্ত গ্রহণে অন্তর্ভুক্ত করা
শিশুর মন খুব সূক্ষ্ম আর সংবেদনশীল। তাই তার মনে আঘাত দেওয়া ঠিক নয়। কোনো বিশেষ চরিত্র বা মানুষকে তার সামনে উপস্থাপন করা যেতে পারে। সে যদি উত্সাহিত বোধ করে, তাহলে সে বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানতে আগ্রহী হবে। বেড়ে ওঠার একটি পর্যায়ের পরে তার সব ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করে চিন্তা ও সিদ্ধান্তগ্রহণের স্বাধীনতা দিন।
সিদ্ধান্ত গ্রহণে অন্তর্ভুক্ত করা না হলে ভবিষ্যতে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন পড়লে তারা আর তা নিতে পারে না। কারণ সব সময় বাবা-মায়ের ওপর নির্ভরশীল ছিল। আবার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় তাদের সিদ্ধান্ত আরেকজন নেওয়াতে ভালো-মন্দের পার্থক্য করতে পারছে না। এসব ক্ষেত্রে তারা খুব সহজেই অন্যের কথায় প্রভাবিত হতে পারে। সংকট দেখা দেয় আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদারও। কোনো কিছুই নিজের চাহিদামাফিক না হওয়ার ফলে তৈরি হতে পারে হতাশা, দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ। বাবা-মায়ের ওপর চাপা ক্ষোভ তৈরি হওয়াও অস্বাভাবিক নয়।
সারাক্ষণ তিরস্কার নয়
তিরস্কার বা সারাক্ষণ আদেশ-নির্দেশ করতে থাকলে সন্তান ভাবতে পারে যে আপনি বোধ হয় তার প্রতিপক্ষ। তাই সন্তানকে তিরস্কার থেকে বিরত থাকুন। কারণ আপনি সন্তানের বন্ধু-এই অনুভূতিটি তার বিকাশের জন্যেই জরুরি। আর বড়দের মতো ছোটদের জন্যেও এই ব্যাখ্যাটা জরুরি যে সে কেন কাজটি করবে।
সন্তানকে বুঝতে দিন যে তাকে বোঝেন
যত আপনার সন্তান বুঝবে যে আপনি তাকে বোঝেন তত সে আপনার অনুগত হবে। আপনার কথা শুনবে। অতএব তাকে শোনানোর জন্যে আগে তাকে শুনুন। তার কথায় মনোযোগ দিন। তাকে বুঝতে দিন যে আপনি তাকে বোঝেন।
সন্তানের ব্যাপারে একমত হওয়া
সন্তানের ব্যাপারে বাবা-মার ঐকমত্য গুরুত্বপূর্ণ। একই ব্যাপারে বাবা-মা ভিন্ন মত দেবেন না। এতে সন্তান বিভ্রান্ত হয়। আগেই সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে নিন। আর কোনো ব্যাপারে দ্বিমত হলে তা নিয়ে কখনো সন্তানের সামনে বিতর্কে জড়াবেন না। নিজেরা কথা বলুন।
সন্তানের প্রশ্নের জবাব দেয়া
আপনি যদি আপনার সন্তানের প্রশ্নের জবাব না দেন, জবাবের জন্যে সে হয়তো খুঁজে নেবে এমন কাউকে বা এমন কিছুকে যার পরিণতি আপনার জন্যে অতটা সুখকর না-ও হতে পারে।
জেনারেশন গ্যাপকে মিটিয়ে ফেলা
সন্তানের সাথে জেনারেশন গ্যাপের একটা কারণ হলো বাবা-মায়েরা চান তারা তাদের ছোটবেলায় যেমন ছিলেন, সন্তানও ঠিক তেমন হবে। ফলে এই অবাস্তব প্রত্যাশার জন্যে সৃষ্টি হয় ভুল বোঝাবুঝি। কাজেই কিছু কিছু ব্যাপারে আপনাকে সহনশীল হতে হবে। সন্তানের চাহিদা, দৃষ্টিভঙ্গি এবং পছন্দের সাথে আপনার চাহিদা, দৃষ্টিভঙ্গি এবং পছন্দের একটা ভারসাম্য আনতে হবে।
আত্মমর্যাদাবোধকে নষ্ট না করা
শিশুদেরও যে আত্মমর্যাদাবোধ আছে এটা আমরা অনেক সময় ভুলে যাই। আমরা হয়তো অন্যের সামনে তাকে বকাবকি করি, ভুল ধরিয়ে দেই বা অপ্রস্তুত করি। এ ধরনের আচরণের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন।
তা-ই বলা যা নিজে পালন করেন
শিশুরা তাদের বাবা-মায়েরা কী বলছে সেটা নয়, কী করছে সেটাই অনুকরণ করে। কাজেই আপনার সন্তানকে এমন কিছু করতে বলবেন না যা আপনি নিজেই করেন না।
ভুল করলে প্রয়োজনে শাস্তি দেয়া
আপনার সন্তান যদি বোঝে যে আপনার কথা না শুনেও সে পার পেয়ে যাচ্ছে, তাহলে সে অবাধ্য হতে উৎসাহ পাবে। তাই সারাক্ষণ চিৎকার চেঁচামেচি না করে শান্ত থাকুন, কিছু শাস্তির ব্যবস্থা করুন। এ ব্যাপারে দৃঢ় হতে ভয় পাবেন না। কারণ সন্তান যদি বুঝতে পারে যে এই অবাধ্য হবার জন্যে তাকে শাস্তি পেতে হবে, তাহলে সে সাবধান হবে।
একই কথা বার বার না বলা
একই কথা বার বার বললে তার গুরুত্ব কমে যায়। এর চেয়ে ১ বার বলুন। তাকে বুঝতে দিন না শোনার শাস্তি।