মাটির ফলকের লেখা আদি যুগের গ্রন্থ, প্যাপিরাসের বা তালপাতায় হাতে লেখা বইয়ের যুগ এবং যান্ত্রিক ছাপাখানায় লক্ষ লক্ষ কপি বইয়ের পর্যায় পেরিয়ে তাবৎ পৃথিবী এখন প্রবেশ করেছে ডিজিটাল যুগের ই-বইয়ের জগতে। আস্ত একটি লাইব্রেরি এখন মানুষের হাতের মুঠোয়-ধরা মোবাইল ফোনের ভেতরে স্থান পেয়েছে।
যে কোনো জায়গা থেকে ইন্টারনেটের সুবাদে পৃথিবীর প্রধান প্রধান গ্রন্থাগারগুলোর বইপত্র পাঠ করাও এখন আর অসম্ভব নয়। হাতে লেখা পত্রিকা, দেয়াল পত্রিকা, হাতে লেখা বই যেন রপকথার গল্প। পড়ার সুযোগ থাকলেইতো হবে না, পড়ার মানসিকতা বা অভ্যাসতো থাকতে হবে!
পরিবর্তন: অতীত থেকে বর্তমান
একসময় লেখা হতো মাটির ফলকে, পাতায়, পাথরে, কাঠে, গাছের ছালে। কাগজ আবিষ্কারের পূর্বে তাম্রপাত্র, ভূর্জপত্র, কাপড়, পাটের পাল্প কাগজ এবং পার্চমেন্টকে লিখন উপাদান হিসেবে ব্যবহার করতো। বাঁশের কঞ্চি কেটে তৈরি করা বাঁশের কলম, কলাপাতার লেখার পাত, কলাপাতা কেটে তাতে ‘হোম-টাস্ক’ করে বান্ডিল নিয়ে স্কুলে যাওয়া হতো।
রান্নায় ব্যবহারিত কড়াইয়ের তলায় জমা কালি লাউপাতা দিয়ে ঘষে তুলে বাটিতে রাখা পানিতে গুলে হরতুকী ঘষে বা আতপ চাল ভেজে পুড়িয়ে বেটে মিশায়ে খুন্তির গোড়ার দিকটা পুড়িয়ে লাল টকটক করে ছ্যাঁকা দেওয়া পানি ন্যাকড়ায় ছেঁকে দোয়াতে ঢেলে কালি বানানো হতো।
বাঁশের কলম, মাটির দোয়াত, ঘরে তৈরি কালি আর কলাপাতা দিয়ে চলতো! বাঁশের, নল-খাগড়ার, পাখির পালক আর ব্রোঞ্জের শলাকার কলম । দোয়াত কলম, ঝরনা কলম বা ফাউন্টেন পেন! চীনে বাঁশের তৈরি শিটের উপর লেখার প্রচলন ছিল। মোমের তৈরি ফলকেও কোথাও কোথাও লেখা হতো। বইয়ের রচনায় প্রথম বড় ধরনের পরিবর্তন আসে প্যাপিরাস আসার পর। এখন শ্লেট আর শ্লেট-পেনসিলতো ইতিহাস। আর বল-পেনও হাতছাড়া হওয়ার উপক্রম! কি-বোর্ডেই চলে!
সাড়ে ১৩ কোটি মুদ্রিত বই
চলতি বছরে ইতোমধ্যেই তিন লাখ ১২ হাজার ৯৩টি বই মুদ্রিত হয়েছে। গুগলের অ্যাডভান্সড অ্যালগরিদম অনুসারে ২০১০ সালের হিসাবে, সারা বিশ্বে ১২৯৮৬৪৮৮০টি তথা প্রায় ১৩ কোটি মুদ্রিত বই রয়েছে। আইএসবিএন (ইন্টারন্যাশনাল স্টান্ডার্ড বুক নাম্বারস) না নিয়ে প্রকাশিত বই হিসাবে আসেনি।
যেহেতু ১৯৭০ সাল থেকে থেকে পশ্চিমা বিশ্বে ব্যাপকভাবে বইয়ের অনন্য শনাক্তকারী হিসেবে আইএসবিএন নাম্বার ব্যবহার হচ্ছে; সেহেতু এর আগে প্রকাশিত অনেক বই হিসাবে আসেনি। তবে বিশ্বের অনেক বড় বড় লাইব্রেরিগুলো থেকে তথ্য নেয়ার কারণে পুরাতন বা অনেক আগে প্রকাশিত কিছু বই হিসাবে এসেছে।
তবে ২০১৬ সালের এক হিসাবে দেখানো হয় ১৩ কোটি ৪০ লাখ ২১ হাজার ৫৩৩টি বই রয়েছে। আরেকটি হিসাবে দেখানো হয় সাড়ে ১৩ কোটি বই ছাপানোভাবে প্রকাশিত হয়েছে। অ্যামাজন দাবি করেছে – ৬৭ কোটি ৫০ লাখ মুদ্রিত বই রয়েছে এবং ৩০০ কোটি ই-বুক রয়েছে।
সমস্ত মুদ্রিত উপাদান ডিজিটালাইজ করা
আসলে জোহানেস গুটেনবার্গ যখন ১৪৪০ সালে মুদ্রণযন্ত্রটি আবিষ্কার করেছিলেন, তখন তিনি ভাবতেও পারেননি যে তার এই সৃষ্টি কীভাবে বিশ্বব্যাপী শিল্পকে ছড়িয়ে দেবে এবং প্রতিবছর কয়েক মিলিয়ন বই প্রকাশিত হবে। আর এই যন্ত্রটি আবিষ্কারের পর থেকেই মূলত বই প্রকাশে নতুন ধারা তৈরি করে।
পরে ই-বুক এসে সেই ধারাকেও ধাকাকা দেয়! আসলে গুগলের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য হলো সমস্ত মুদ্রিত উপাদান ডিজিটালাইজ করা, এক ডাটাবেসে বিশ্বের যাবতীয় জ্ঞানকে নিয়ে এসে তা ব্যবহারের সুযোগ করে দেওয়া।
মুদ্রিত বইয়ের ৪০ ভাগই যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশিত
২০১১ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে ২২ লাখ ৬৭ হাজার ২৬৫টি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। ২০১১ থেকে ২০১৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আইএসবিএন নেয়া দশ লাখ বই প্রকাশিত হয়। অর্থাৎ সারা বিশ্বের ছাপা বইয়ের প্রায় ৪০ ভাগই যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত হয়।
১৯৯০ এর দশকের শুরুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫০ হাজার বই প্রকাশিত হতো; এই দশকেরই মাঝামাঝি সময়ে দেশটিতে প্রতি বছর ১ লাখ বই প্রকাশিত হয়েছিল। ধারণা করা হয় একই বইয়ের একাধিক সংস্করণ বাদ দিলে সম্ভবত প্রতি বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১০ লাখ বই প্রকাশিত হয়। তবে প্রকৃত সংখ্যাটা বলা কঠিন কারণ তাদের একটি বড় অংশই আইএসবিএন পায় না।
বছরে গড়ে ২০ লাখ বই প্রকাশিত
আরেকটি হিসাবে দেখানো হয়েছে হার্ডকভার, পেপারব্যাক, পিডিএফ, ই-বুক এবং অডিওবুকের মতো বিভিন্ন ফরমেটে বছরে গড়ে ২০ লাখ বই প্রকাশিত হয়। আমাজন দাবি করে নতুন ২০ লাখ বইয়ের ১০ লাখই স্ব-প্রকাশিত। দশ বছর আগেও যেখানে বছরে ২ লাখ বই প্রকাশিত হতো, সেখানে ২০ লাখ বই প্রকাশিত হচ্ছে।
বই কিনলে লেখক বাঁচবে, লেখক বাঁচলে নতুন বই আসবে
বই বিক্রির মাধ্যমে কোনও অর্থ উপার্জনের জন্য প্রকাশিত বইগুলোর অবশ্যই কমপক্ষে ১০০০ কপি বিক্রি করতে হবে। লেখককে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট করে লেখার অভ্যাস থাকতে হবে।
ভালো লেখকদের একটি দলে যোগ দিতে হবে। লেখককে নিজেকে নিজের সাথে সৎ হতে হবে। অন্য কেউ লেখাগুলোকে ভালো বলে দিলে ভালো আর খারাপ বলে দিলে খারাপ এমন বিবেচনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
বাড়ছে লেখক, বাড়ছে বই, বাড়ছে পাঠক
নতুন বই প্রকাশিত হয়-
- ২০১০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৩ লাখ ২৮ হাজার ২৫৯টি
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৩ সালে ৩ লাখ ৪ হাজার ৯১২টি
- ২০০৫ সালে যুক্তরাজ্যে ২লাখ ৬ হাজারটি
- যুক্তরাজ্যে ২০১১ সালে ১ লাখ ৮৪ হাজারটি
- ২০১০ সালে চীনে ১ লাখ ৮৯ হাজার ২৯৫টি
- চীনে ২০১৩ সালে ৪ লাখ ৪০ হাজারটি
- ২০০৮ সালে রাশিয়ায় ১ লাখ ২৩ হাজার ৩৩৬টি
- ২০১৩ সালে রাশিয়ায় ১লাখ ১ হাজার ৯৮১টি
- ২০০৯ সালে জার্মানিতে ৯৩ হাজার ১২৪টি
- ২০০৮ সালে স্পেনে ৮৬ হাজার ৩০০টি
- ২০০৪ সালে ভারতে ৮২ হাজার ৫৩৭টি (হিন্দিতে ২১,৩৭০ এবং ইংরেজিতে ১৮,৭৫২)
- ২০০৯ সালে জাপানে ৭৮ হাজার ৫৫৫টি
- ২০১৭ সালে জাপানে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৭৮টি
- ২০১০ সালে ইরানে ৬৫ হাজারটি
- ২০১৮ সালে ইরানে ১ লাখ ২ হাজার ৬৯১টি
- ২০১০ সালে ফ্রান্সে ৬৩ হাজার ৬৯০টি
- ২০১১ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় ৪৪ হাজার ৩৬টি,
- ২০১০ সালে তাইওয়ানে ৪৩ হাজার ৩০৯টি
- ২০১১ সালে তুরস্কে ৪৩ হাজার ১০০টি
- ১৯৯৩ সালে নেদারল্যান্ডসে ৩৪ হাজার ৬৭টি
- ২০০৫ সালে ইতালিতে ৩৩ হাজার ৬৪১টি
- ২০১০ সালে পোল্যান্ডে ৩১ হাজার ৫০০টি
- ২০০৯ সালে ভিয়েতনামে ২৪ হাজার ৫৮৯টি
- ২০০৯ সালে ইন্দোনেশিয়া ২৪ হাজার+
- ২০১০ সালে আর্জেন্টিনায় ২২ হাজার ৭৮১ টি
- ১৯৯৬ সালে কানাডায় ১৯,৯০০টি
- ২০১০ সালে ব্রাজিলে ১৮ হাজার ৭১২টি
- ২০১১ সালে মালয়েশিয়ায় ১৭ হাজার ৯২৩টি
- ২০০৮ সালে রোমানিয়া ১৪ হাজার ৯৮৪টি
- ২০০৪ সালে ইউক্রেনের ১৪ হাজার ৭৯০টি
- ২০০৫ সালে হংকংয়ে ১৪ হাজার ৬০৩টি
- ১৯৯১ সালে বেলজিয়ামে ১৩ হাজার ৯১৩টি
- ২০০৬ সালে ফিনল্যান্ডে ১৩ হাজার ৬৫৬টি
- ২০০৯ সালে থাইল্যান্ডে ১৩ হাজার ৬০৭টি
- ২০০৯ সালে বেলারুশে ১২ হাজার ৮৮৫টি
- ১৯৯৬ সালে ডেনমার্কের ১২ হাজার ৩৫২টি
- ২০১০ সালে কলম্বিয়ায় ১২ হাজার ৩৩৪টি
- ২০০১ সালে সুইজারল্যান্ডে ১২ হাজার ১৫৬টি
- ২০০৭ সালে সিঙ্গাপুরে ১২০০০+
- ১৯৯৬ সালে চেক প্রজাতন্ত্রে ১০ হাজার ২৪৪টি
- ১৯৯৬ সালে হাঙ্গেরিতে ৯ হাজার ১৯৩টি
- ২০১০ সালে মেক্সিকোতে ৯০৭৫টি
- ২০০০ সালে মিশরে ৯০২২টি
- ২০০৪ সালে অস্ট্রেলিয়ায় ৮৬০২টি
- ১৯৯৬ সালে অস্ট্রিয়াতে ৮০৫৬টি
- ১৯৯৬ সালে পর্তুগালে ৭৮৬৮টি
- ২০০৬ সালে ইসরাইলে ৬৮৬৬টি
- ২০০২ সালে গ্রীসে ৬৮২৬টি
- ১৯৯৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় ৫৪১৮টি
- ২০১১ সালে চিলিতে ৫৩২৬টি
- ১৯৯৬ সালে শ্রীলঙ্কায় ৪১১৫টি
- ২০০৬ সালে পেরুতে ৪১০১টি
- ২০১০ সালে সুইডেনে ৪০৭৪টি
- ১৯৯৬ সালে সৌদি আরবে ৩৯০০টি
- ২০০৫ সালে লেবাননে ৩৬৮৬টি
- ১৯৯৩ সালে মিয়ানমারে ৩৬৬০টি
- ২০০৩ সালে নিউজিল্যান্ডে ৩৬০০টি
- ২০১০ সালে ইকুয়েডরে ২৮৫৪টি
- ১৯৯০ সালে আফগানিস্তানে ২৭৯৫টি
- ২০০৩ সালে ভেনিজুয়েলায় ২০৬১টি
- ২০০১ সালে লাক্সেমবার্গে ২০০টি
- ১৯৯৬ সালে লাটভিয়া ১৯৬৫টি
- ২০০৭ সালে আইসল্যান্ডে ১৫৩৩টি
- ১৯৯৬ সালে ফিলিপাইনে ১৫০৭টি
- ২০০৩ সালে কিউবাতে ১৪৮৮টি
- ২০০৩ সালে কোস্টা রিকাতে ১৩১৫টি
- ১৯৯১ সালে নাইজেরিয়াতে ১৩১৪টি
- ১৯৯৬ সালে কাজাখস্তানে ১২২৬টি
- ২০০৪ সালে সিরিয়াতে ১১৩৮টি
- ২০০৫ সালে পাকিস্তান ১০৩৬টি
- ১৯৯৬ সালে উজবেকিস্তানে ১০০৩টি
- ১৯৯৬ সালে সাইপ্রাস ৯৩০টি
- ১৯৯৬ সালে মরক্কোতে ৯১৮টি
- ১৯৯৬ সালে তিউনিসিয়া ৭২০টি
- ২০০৩ সালে ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রে ৭০৫টি
- ১৯৯৬ সালে আলজেরিয়ায় ৬৭০টি
- ২০০৩ সালে উরুগুয়েতে ৬০৫টি
- ২০০৩ সালে বলিভিয়াতে ৫৮৪টি
- ১৯৯৮ সালে জর্জিয়ায় ৫৮১টি
- ১৯৯৬ সালে আজারবাইজানে ৫৪২টি
- ১৯৯৬ সালে জর্ডানে ৫১১টি
- ২০০৩ সালে পানামায় ৫০৬টি
- ১৯৯৪ সালে তুর্কমেনিস্তানে ৪৫০টি
- ২০০৩ সালে গুয়াতেমালাতে ৪৪৬টি
- ১৯৯৮ সালে কিরগিজস্তানে ৪২০টি
- ১৯৯৫ সালে মাল্টায় ৪০৪টি
- ১৯৯৪ সালে ফিজিতে ৪০১টি
- ১৯৯৬ সালে আর্মেনিয়ায় ৩৯৬টি
- ২০০৩ সালে প্যারাগুয়ে ৩৯০টি
- ১৯৯১ সালে আলবেনিয়ায় ৩৮১টি
- ২০০৩ সালে নিকারাগুয়াতে ৩০৬টি
- ১৯৯৪ সালে কেনিয়ায় ৩০০টি
- ১৯৯৩ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত ২৯৩টি
- ২০০৩ সালে হন্ডুরাসে ২৯০টি
- ১৯৯৬ সালে উগান্ডা ২৮৮টি
- ১৯৯২ সালে মঙ্গোলিয়া ২৮৫টি
- ২০০৩ সালে এল সালভাদোরের ২৮৫টি
- ১৯৯১ সালে ইথিওপিয়ায় ২৪০টি
- ১৯৯২ সালে জিম্বাবুয়েতে ২৩২টি
- ১৯৯৬ সালে ভ্যাটিকান সিটিতে ২২৮টি
- ১৯৯৬ সালে কাতার ২০৯টি
- ১৯৯২ সালে কুয়েতে ১৯৬টি
- ১৯৯০ সালে তানজানিয়ায় ১৭২টি
- ১৯৯১ সালে বোতসোয়ানা ১৫৮টি
- ১৯৯৬ সালে তাজিকিস্তান ১৩২টি
- ১৯৯১ সালে পাপুয়া নিউ গিনিতে ১২২টি
- ১৯৯৬ সালে মাদাগাস্কারে ১১৯টি
- ১৯৯৬ সালে মালাউইতে ১১৭টি
- ১৯৯৬ সালে প্যালেস্টাইনে ১১৪টি
- ১৯৯০ সালে নামিবিয়ায় ১০৬টি
- ১৯৯৩ সালে ইরিত্রিয়ায় ১০৬টি
- ২০০৯ সালে ব্রুনেই দারুসালামে ৯১টি
- ১৯৯৫ সালে লাওসে ৮৮টি
- ১৯৯৪ সালে বেনিনে ৮৪টি
- ১৯৯৬ সালে মরিশাসে ৮০টি
- ১৯৯২ সালে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে ৬৪টি
- ১৯৯৬ সালে বাহরাইনে ৪০টি
- ১৯৯২ সালে ঘানায় ২৮টি
- ১৯৯৪ সালে লিবিয়ায় ২৬টি
- ১৯৯৫ সালে মালিতে ১৪টি
- ১৯৯৬ সালে গাম্বিয়ায় ১৪টি
- ১৯৯৬ সালে বুর্কিনা ফাসোতে ১২টি
- ১৯৯৬ সালে ওমানে ৭টি
এই যে দেশে দেশে এত এত বই প্রকাশিত হচ্ছে, লেখকরা লিখছেন, ছাপাখানায় ছাপা হচ্ছে, প্রকাশক প্রকাশ করছেন। প্রকাশনী ব্যবসা না থাকলে, পাঠক ভালো না থাকলে কি আর এমনটা হতো!
বছরের পর বছর ধরে জ্ঞান প্রদান
এই সমস্ত বই বছরের পর বছর ধরে আমাদের জ্ঞান প্রদান করছে এবং আমাদের ব্যক্তিত্ব গঠনে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আমরা যা কিছু পড়ি তা আমাদের মাথায় নতুন তথ্য গেঁথে দেয় এবং সেই তথ্য কখনো কখনো কার্যকর হয়। আপনার যত বেশি জ্ঞান রয়েছে, আপনি যে কোনও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে তা মোকাবেলা করার জন্য বেশি সজ্জিত। বই পড়া খুব গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্বের বৃহত্তম গ্রন্থাগার
লাইব্রেরি অফ কংগ্রেস হলো বৃহত্তম গ্রন্থাগার । বই ও অন্যান্য প্রিন্ট ম্যাটিরিয়ালসের সংখ্যা আনুমানিক ১৬ কোটি ৮০ লাখ। শুধু বই আছে প্রায় সাড়ে তিন কোটির মতো। এটি একটি সংরক্ষণাগার গ্রন্থাগার।
আমেরিকার ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত । বিখ্যাত লাইব্রেরিটিতে ৪৭০ ভাষার প্রকাশনা রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশিত প্রতিটি বইয়ের একটি অনুলিপি লাইব্রেরীকে কিনতে হয়। তারা স্ব-প্রকাশিত বই এবং ইবুকগুলোকে সাধারণত তালিকাভুক্ত করে না!
প্রতিদিন সাড়ে চার সহস্রাধিক বই
প্রতিদিন সাড়ে চার হাজারের বেশি বই প্রকাশিত হয়। বলা হয়ে থাকে যে, প্রতিদিন ১০০০ নতুন বই অ্যামাজনে আপলোড করা হয়, যা বছরে ৩৬৫ হাজার হবে। এর মধ্যে কিছু ব্যক্তিগতভাবে প্রকাশিত, লেখক কর্তৃক প্রকাশিত; আবার কিছু প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত, বাণিজ্যিকভাবে প্রকাশিত। আবার অনেক বই রয়েছে যা লিখিত হয়েছে তবে কখনও ছাপানো হয়নি এবং অনেক বই কখনই ছাপানো হবে না।
অনেক বই হারিয়ে গেছে
আসলে পৃথিবীতে কত বই প্রকাশিত হয়েছে মোট বইয়ের সংখ্যা গণনা করা যায় না এমনকি এটি অনুমানও করা যায় না। ১৯৫টি দেশসহ ২৩৫টি দেশ-অঞ্চলে রয়েছে ৭৮৪ কোটি ৫৫ লক্ষ ৬৪ হাজার মানুষ। তারাও অনেকে বই লিখেছিলেন, যার অনেক বই হারিয়ে গেছে, নষ্ট হয়ে গেছে, যুদ্ধে বিজিতরা পরাজিতদের বই-পুস্তক ধ্বংস করেছে।
লাইব্রেরিও জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিয়েছে।কোনো কোনো বই হয়তো একটি পাণ্ডুলিপিতেই সীমাবদ্ধ ছিল, কোনোটা বিক্ষিপ্তও ছিল। হাতে লেখা কাগজ কিংবা কাঠে-পাতায়-পাথরে লেখাও নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে বর্তমানে থাকা বই মানুষের লেখা মোট বইয়ের মাত্র তিনভাগ বলে ধরা হয় অর্থাৎ ৯৭ ভাগেরই আর অস্তিত্ব নেই।
বইয়ের কারণেই বিখ্যাত অনেক শহর
অনেক শহর আছে যেগুলো শুধু সাহিত্যের জন্য বা বিভিন্ন বইপত্রে উল্লেখের জন্য বিখ্যাত। বই অনেক শহরকে প্রসিদ্ধ করেছে। বইয়ের কারণেই অনেক শহর বিশ্বপরিচিতি পেয়েছে। ‘আরব্য রজনী’ বা ‘আলিফ লায়লা’র আখ্যানের টানে রোমাঞ্চিত বিশ্বব্যাপী মানুষ বোগদাদ, দামেস্ক নগরীর নাম জেনেছেন। প্রাচীনকালে প্যাপিরাসের জন্য মিশরের কথা জেনেছে মানুষ। প্রাচীন বা মধ্যযুগের মতোই আজকের এই অতি–আধুনিক বিশ্বেও বইয়ের কারণে বিখ্যাত হয়েছে অসংখ্য শহর।
মুদ্রণ সংস্কৃতি
আধুনিক নগর সভ্যতার সঙ্গে মুদ্রণ সংস্কৃতির মেলবন্ধন রয়েছে। ১৪৫৪ সালে জার্মানিতে গুটেনবার্গের ধাতব ও চলমান টাইপ আবিষ্কারের ফলে নববিপ্লব সাধিত হয়। প্রথম দিকে প্রকাশিত হয় বাইবেলসহ ধর্মীয় কিছু গ্রন্থ।
ভারতেও খ্রিস্টান মিশনারির মাধ্যমে যান্ত্রিক মুদ্রণের সূচনা ঘটে ষোড়শ শতকের মধ্যভাগে। পূর্ববঙ্গের ঢাকাতে মুদ্রণযন্ত্র স্থাপিত হয় ১৮৪৮ সালে। যদিও ১৮৪৭-এ রংপুরে রংপুর বার্তাবহ পত্রিকার জন্য মুদ্রণযন্ত্র স্থাপিত হয়েছিল। এই যাত্রায় অনেক পথ পেরিয়েই ঢাকায় মুদ্রণ ও প্রকাশনা বিকশিত হয়।
সূত্র: শ্রীপান্থ রচিত হারিয়ে যাওয়া কালি কলম, ওয়ার্ল্ডোমিটার, www.unesco.org, টেলিগ্রাফ, www.loc.gov, www.quora.com, en.wikipedia.org , searchengineland.com ও ourworldindata.org
বি.দ্র. হিসাবের ক্ষেত্রে বইয়ের পরিমাণ বা সংখ্যার ক্ষেত্রে ১টি বই মানে ১টি স্বতন্ত্র-নতুন বই অর্থাৎ কোনো বইয়ের যদি ১০ লাখও কপি থাকে সেটিও ১টিই ধরা হয়েছে।