দক্ষতা উন্নয়নমূলক কর্মশালায় বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইজাজ আহমেদ বলেছেন, প্ল্যান বি কাজ না করলে প্ল্যান সি নিয়ে কাজ করতে হবে। প্রত্যেক দিন নিজের সাথে সময় কাটাতে হবে, নিজের জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে ভাবতে হবে। মানুষের জীবনে মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে লড়াই করা, শুধু টিকে থাকা নয়। তোমাদের–আমাদের জীবনের স্বপ্ন যদি হত শুধু বেঁচে থাকা তাহলে সেই পরীক্ষায় আমরা সবাই ফেল করতাম। তাই সাফল্যের সাথে নিজেকে এগিয়ে নিতে লড়াই করতে হবে। যে যার এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে হবে নিজ নিজ ক্ষেত্র থেকে। তাই নিজেদের শেকড় ভুলে গেলে চলবে না। অন্য কেউ এসে আমাদের সমস্যার সমাধান করবে না।
তিনি আরো বলেন- এখন আমরা বিশ্বায়নের যুগে বাস করছি, কেবল যেকোন একটি বিষয় সম্পর্কে জেনে এই যুগে টিকে থাকা সম্ভব নয়, যেটি ৫০ বছর আগেও সম্ভব ছিল, এখন আপনাকে যেমন রাজনীতি সম্পর্কে জানতে হবে, তেমনি জানতে হবে ইকোনোমিক্স সম্পর্কে, ট্রেড সম্পর্কে, তাই এখন শিশুদের ছোটবেলা থেকেই আমাদের এই নতুন বিশ্বের জন্য প্রস্তুত করতে হবে, আর শিশুর প্রস্তুতিতে সাহায্য করবে এই বই, কেন শিশুদের হাতে অন্য উপহারের চাইতে বই দিলে তাদের মানসিক উন্নয়নে সাহায্য হবে।
ইজাজ আহমেদ বলেন- প্রথমত- বিশ্বাস রাখতে হবে, নেতৃত্ব শেখা যায়; দ্বিতীয়ত- সর্বদা কিউরিয়াস বা জানার আগ্রহ থাকতে হবে এবং শেষত- এখন জানার সুযোগ বিশাল, আপনার প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে ইন্টারনেটে সার্চ করতে পারেন। আমরা সবাইকে নেতৃত্ব অনুশীলনের জন্য অফিস বা যে ধরনের কাজের সাথেই থাকুন না কেন নেতৃত্ব অনুশীলনের জন্য সর্বদা মনোযোগী হতে বলি। আমাদের একটা ভুল ধারণা রয়েছে যে, রাজনীতি করাই কেবল লিডারশিপ; বিষয়টি কিন্তু তেমন নয়। যেমন- আপনি অফিসে একটা টিমকে ভালোভাবে তৈরি করছেন, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে অফিস বা আপনার কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন, এটাও কিন্তু লিডারশিপ। সমাজের প্রত্যেকে যদি নেতৃত্ব বা লিডারশিপ কোয়ালিটি অর্জন করেন তখন দেশ অনেক এগিয়ে যাবে। নেতা বা নেতৃত্ব হচ্ছে এমন এক বিষয়- যিনি নেতা হবেন তিনি অবশ্যই অন্যের সুখ-দুঃখ বুঝবেন; তিনি অবশ্যই সবার মত ও অধিকারকে প্রাধান্য দিবেন। এককথায় নেতা বা নেতৃত্ব তৈরি হয়- যদি সবার ভালোটা তিনি বোঝেন। অন্যদিকে- আমাদের দেশে আজও বেশির ভাগক্ষেত্রেই দেখা যায়- সবাই আমরা কর্তৃত্ব পরায়ন। আমরা শুধু নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত। সাধারণের দিকে আমাদের নজর নেই। অন্যের ভালো-মন্দ না ভেবে কর্তৃত্ব দেখিয়ে নিজের মত চাপিয়ে দিতেই ব্যস্ত থাকি।
তিনি আরো বলেন- ভাষা নিয়ে একটি সমস্যা আছে; একইসাথে শিক্ষার কারিকুলাম যেমন- দেশে এখন বাংলা, ইংরেজি আবার আরবি এই তিনভাবে শিক্ষা ব্যবস্থা চলছে। আরও একটি সমস্যা হলো- আমরা নিজেদের পরিবর্তন করতে পারি এটা বিশ্বাস করতে পারি না। তাই আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে। আমরা ভাবি, আমাদের সব পরিবর্তনই বোধহয় রাজনীতিবিদরা এনে দেবে। রাজনীতিবিদদের সাথে সাথে দেশ গঠনে আমাদের প্রত্যেকেরই তৈরি হওয়ার দরকার। আমরা টাকার কারণে গরিব না; নেতৃত্বের কারণে গরিব। আমাদের চেয়ে খারাপ অবস্থানে থাকার পরেও অনেক দেশ আজ আমাদের চেয়ে উন্নত। আমাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতা দরকার। আর একটা সমস্যা হলো- এখানে কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না।
এখানে নেতৃত্বের অনুশীলনের অভাব। আমাদের দেশে নেতৃত্ব চর্চার সুযোগ কম। আমি কিন্তু দলকেন্দ্রিক রাজনীতি চর্চার কথা বলছি না। নেতৃত্ব চর্চা বা নেতা বলতে শুধু রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকা আর না থাকাকেই বোঝায় না। আপনি সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক যেকোনো কর্মকাণ্ডে নিজেকে যুক্ত রাখতে পারেন। সেসব কাজে সামনে থেকে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে সফল সমাপ্তি এনে দেয়া যায়, সেটাও কিন্তু নেতৃত্বের মধ্যেই পড়ে।
ইজাজ আহমেদ বলেন- একজন ভালো নেতার মধ্যে অন্তত তিনটি গুণ থাকা প্রয়োজন। প্রথমত- যোগ্যতা; দ্বিতীয়ত- সহানুভূতি; তৃতীয়ত- সাহস। এই তিনটি বিষয় যার মধ্যে থাকবে, তিনি ভালো নেতৃত্বের উদাহরণ হবেন। দেশের তরুণ সমাজ নিয়ে আমি শতভাগ আশাবাদী। অফিস-আদালত থেকে শুরু করে যদি নেতৃত্ব চর্চার ক্ষেত্র প্রস্তুত করি এবং সব জায়গায় নেতৃত্ব অনুশীলন করি, তাহলে অবশ্যই আমাদের তরুণরা নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমার কাছে সফলতা মানে অর্থপূর্ণ জীবন-যাপন করা। আত্মকেন্দ্রিক না হয়ে আশ-পাশের সবাইকে নিয়ে ভালো থাকা। ঠিক তেমনি অফিসে একা ভালো কাজ বা সিদ্ধান্ত নিলেই কিন্তু অফিস ভালো কিছু পাবে না; এর জন্য আপনাকে অফিসের সবাইকে নিয়ে ভালো পলিসি তেরি করে এগিয়ে নিতে হবে।
সূত্র : জাগো নিউজ, দক্ষতা উন্নয়নমূলক কর্মশালায় প্রদত্ত বক্তৃতা ও Rokomari.com