বই পড়া, বই লেখা, বই প্রকাশ ও পাঠাগার সংস্কৃতি

বই বলতে লেখা, ছাপানো অক্ষর, বা ছবিবিশিষ্ট কাগজ বা অন্য কোনো মাধ্যমের তৈরি পাতলা শিট বা ডিজিটাল পৃষ্ঠার সমষ্টি বোঝায়, যা এক ধারে বাঁধা থাকে এবং মলাটের ভেতরে রক্ষিত থাকে। এর প্রতিটি পাতলা শিটকে পৃষ্ঠা বা পাতা বলে। বইয়ের সমার্থক শব্দ গ্রন্থ, কিতাব, পুস্তক। যে ব্যক্তি বই লেখেন, তাকে লেখক বলে। ই-বুক নামে এক ধরনের বই আছে, যা কম্পিউটার, মোবাইল, ট্যাবলেট কম্পিউটার ইত্যাদি ব্যবহার করে পড়তে হয়। বই শিক্ষা অর্জনের প্রধানতম মাধ্যম।

এক নজরে দেখে নিন লুকিয়ে রাখুন

বই পড়ায় আনন্দ, বুদ্ধি ও সক্ষমতা

ফ্রান্সিস বেকন Of Studies নামক প্রবন্ধে বলেন, বই পড়া থেকে আনন্দ, বুদ্ধি ও সক্ষমতা অর্জিত হয়। বই পড়তে হয় একাকী এবং তাতে অবসর ভরে ওঠে নির্মল আনন্দে, বুদ্ধি আসে বইয়ের কথামালা থেকে, আর সক্ষমতা আসে গ্রন্থগত বিদ্যার সঙ্গে বিষয়বুদ্ধির সংশ্লেষে। চালবাজ লোকেরা পাঠকে ঘৃণা করে, সাধারণ লোকেরা প্রশংসা করে এবং জ্ঞানী লোকেরা ব্যবহার করে। তারা অভিজ্ঞতার মারফত বুঝতে পারে পাঠার্জিত জ্ঞানকে কীভাবে বাস্তব জীবনে কাজে লাগাতে হবে। কিছু বই পড়তে হয় স্বাদ নেওয়ার জন্য, কিছু বই গিলে ফেলার জন্য, কতিপয় বই চিবিয়ে খেয়ে হজম করে ফেলতে হয়।  কিছু বই অন্যের সহায়তা নিয়ে পড়া যায়, অন্যরা বইয়ের সারসংক্ষেপ তৈরি করে দিতে পারেন।  পাঠ একজন মানুষকে পরিপূর্ণ করে, বাগানুশীলন একজন মানুষকে চটপটে করে এবং লেখালেখি একজন মানুষকে যথাযথ করে। কাজেই যে ব্যক্তি লেখালেখি করে না তার স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। যে ব্যক্তি কথার চর্চা কম করে, তার প্রজ্ঞায় ভাটা পড়ে। আর যে ব্যক্তি বই কম পড়ে, জানার ভাব দেখানোর জন্য তার ধূর্ততার প্রয়োজন হয়। ইতিহাসের পঠন মানুষকে জ্ঞানী করে, কবিতাপাঠ বুদ্ধিদীপ্ত করে, গণিতচর্চা যুক্তিবোধকে শাণিত করে, প্রাকৃতিক দর্শন নৈতিকতার ভিত্তি সুদৃঢ় করে।

বই পড়ায় মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি

Joseph Addison বলেছেন, Reading is to the mind what exercise is to the body. সঠিক ধরণের সাহিত্য যেকোনো বিষয় সম্পর্কে একটি নতুন দৃষ্টিকোণ দিতে সক্ষম। যেটা মনকে সতেজ করে তুলে, মানসিক চাপ কমিয়ে পুনর্জীবিত করে তোলে, মেজাজ ঠিক করে, মনের ব্যাটারি রিচার্জে সাহায্য করে,  নানা ধরণের মানসিক পীড়া থেকে মুক্তি দেয় আর মন পুরো পরিশুদ্ধ নতুনের মতো হয়ে যায়। বইয়ের মাধ্যমে  বিশ্ব ভ্রমণ করা যায়, নিজেকে আরও ভালভাবে জানা যায়।

জীবনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, চিন্তায় শৃঙ্খলা আনতে সাহায্য করে,  অগোছালো মনে শৃঙ্খলা আনতে পারে, হতাশা থেকে বের করিয়ে এনে মনকেও আশা যোগায়, হতাশ মনকে প্রবোধ দেয়, ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে এবং তরুণদের মনকে সহায়তা করে। সংকোচের কারণে  সবার সঙ্গে বলতে  না পারা কথাও  পড়ে নেয়া যায় নিঃসংকোচে।

বই পড়ায় সফলতা

বই-ই হচ্ছে মানুষের শ্রেষ্ঠ সম্পদ । আজ যারা সফলতার চরম শীর্ষে পৌঁছেছে তারা সকলেই  বই পড়তে আগ্রহী । বই পড়ার মধ্য দিয়ে তারা রোজ নিজেকে সমৃদ্ধ করে তোলেন । Warren Buffett পেশা জীবনের শুরুতে প্রতিদিন ৬০০-১০০০ পৃষ্ঠা নিয়মিত পড়তেন । তিনি বলেন – ” Read 500 pages like this everyday . That’s how knowledge works . It builds up , like compound interest. All of you can do it , but I guarantee not many of you will.“ Bill Gates প্রতিবছর ৫০টি বই শেষ করেন । Mark Cuban প্রতিদিন ৩ ঘন্টার বেশি বই পড়েন। Elon musk রকেট সায়েন্সের বিদ্যা বই পড়ার মাধ্যমে অর্জন করেছেন ।

বই পড়া জ্ঞান বৃদ্ধি করে

একটি ভালো বই থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান কখনও নিঃশেষ হবে না , তা চিরকাল হৃদয়ে জ্ঞানের প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখবে ।  বই পড়ার মাধ্যমে জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃতি লাভ করে । যত বেশি বই পড়া যাবে , তত বেশি জ্ঞান বৃদ্ধি পাবে । ভিক্টর হুগো বলেন, বই বিশ্বাসের অঙ্গ, বই মানব সমাজকে টিকাইয়া রাখিবার জন্য জ্ঞান দান করে। অতএব, বই হইতেছে সভ্যতার রক্ষাকবচ।

বই পড়ায় মানসিক উদ্দীপনা

বই পড়ার অভ্যাস মানুষকে ” Dementia এবং Alzheimer’s” নামে দুটি রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে । মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে । মস্তিষ্ককে সবল ও কর্মচঞ্চল রাখে।

মানসিক চাপ কমায় বই পড়া

মাত্র ছয় মিনিটের জন্য বই পড়লে স্ট্রেস লেভেল ৬৮% পর্যন্ত কমে যায় । বই পড়ায় যে বিষয়গুলি অমনোযোগী করে বা স্ট্রেস লেভেল বাড়িয়ে দেয় তা অনেকটাই কমে যায় । বই পড়া প্রতিদিনের বাস্তবতা , সমাজ সংসারের নানা দুঃখ কষ্ট থেকে  রেহাই দেয়ায় মানসিক চাপ অনেকটাই কমে যায় ।

শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ করে দেয় বই পড়া

একটি বইতে লেখক তার জীবনের উত্থান ও পতন দুটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন । লেখকের গল্প থেকে শিক্ষা নেয়া যায় এবং কোন পথে গেলে সফল হবে তা জানা যায় । বই নতুনভাবে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে ও মস্তিষ্ককে চিন্তা করতে উপযোগী করে গড়ে তোলে । Andre maurois বলেন, The art of reading is in great part that of acquiring a better understanding of life from ones encounter with it in a book .

কল্পনা শক্তি বৃদ্ধি করে বই পড়া

যতবেশি বই পড়বে ততবেশী কল্পনা শক্তি বৃদ্ধি পাবে ।  বইয়ে বর্ণিত জগতের সাথে বই পড়ার মধ্যে দিয়ে সংযোগ স্থাপন করতে পারি ।  পড়ার মাধ্যমে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে যেতে পারি ,নতুন জগতের নতুন চিত্র , নতুন বর্ণনা নতুন নতুন ভাবে উপলব্ধি করতে পারি ।

স্মরণ শক্তি বাড়ে বই পড়ায়

বইয়ের ভিতরে থাকা অগণিত তথ্য মনে রাখায় আমাদের মস্তিষ্কের অনেক এক্সারসাইজ হয় যার ফলে মস্তিষ্কের সক্ষমতা বৃদ্ধি পায় । এছাড়াও বই মস্তিষ্কের নতুন নতুন কানেকশন তৈরি করার ফলে নতুন করে জানার আগ্রহ , মনে রাখার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ।

বই পড়ায় বৃদ্ধি পায় শব্দভাণ্ডার

দেশি বিদেশি বিভিন্ন ভাষার বই পড়লে ঝুলিতে নতুন নতুন শব্দের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে ।  বইপড়ার মাধ্যমে শব্দ সহজেই শিখে কথা বলার সময় সেগুলোব্যবহার ক’রে বাচনভঙ্গিকে স্পষ্ট , সুন্দর ও তাৎপর্যমন্ডিত করা যায় । । নতুন ভাষা শিখতেও বই পড়া আবশ্যক । চাইনিজ প্রবাদ আছে A book is like a garden carried in the pocket  অর্থাৎ একটি বই পড়া মানে হলো একটি সবুজ বাগানকে পকেটে নিয়ে ঘোরা।

লেখনী শক্তি বৃদ্ধি করে বই পড়া

নিয়মিত বই পড়ার ফলে  চিন্তা-ভাবনাকে প্রকাশ করার ক্ষমতা বেড়ে যায় । সুন্দর কথা বলার মতো বেড়ে যায় লেখনীর দক্ষতাও ।

বই পড়ায় বাড়ে ক্রিটিক্যাল থিংকিং

বই পড়ার উপকারিতা  হচ্ছে ক্রিটিক্যাল থিংকিং এর ক্ষমতা বাড়ে। মস্তিষ্ক আরও ক্ষুরধার হয় , চিন্তা ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায় । চীনা প্রবাদ আছে, একটি বই পড়া মানে হলো একটি সবুজ বাগানকে পকেটে নিয়ে ঘোরা।

একাগ্রতা বৃদ্ধি করে বই পড়া

রোজ নিয়ম করে বই পড়লে বেড়ে যায় একাগ্রতা শক্তি  ।  মাল্টিটাষ্কিং -এর অভ্যাসের ফলে স্ট্রেস লেভেল বেড়ে যায় আর প্রোডাক্টিভিটি কমে যায় । বই পড়ার অভ্যাস আমাদের একাগ্রতা শক্তি বৃদ্ধি করে ।

বই পড়ায় বাড়ে প্রশান্তি

পছন্দের বই পড়লে অনেক শান্ত ও প্রশান্তি অনুভব করি । আধ্যাত্মিক বই পড়লে মনে প্রশান্তি আসে । আধ্যাত্মিক বই পড়লে রক্তচাপ কমে যায় অনেকটাই । জন মেকলে বলেন, প্রচুর বই নিয়ে গরীব হয়ে চিলোকোঠায় বসবাস করব তবু এমন রাজা হতে চাই না যে বই পড়তে ভালবাসে না।

 সহানুভূতি বোধ তৈরি হয় বই পড়ায়

বই পড়ার মাধ্যমে তৈরি হয় এক সহানুভূতিপূর্ণ মানসিকতা । কল্পনা নির্ভর বই পড়ার মাধ্যমে চরিত্রের সঙ্গে সুখ দুঃখ অনুভূতির একাত্মবোধ গড়ে ওঠে । বাস্তব জীবনেও এইসমস্ত মানুষ অনেক বেশি সহানুভূতিপ্রবণ হৃদয়ের হয়ে থাকেন ।

বই পড়া তৈরি করে আত্মসম্মান বোধ 

বই পড়ে মানুষ সমাজের কাছে ভালোমন্দ মানবিক গুণগুলির মূল্য বুঝতে শেখে , তাই নিজের এমন একটা আত্মসম্মান বোধ তৈরি হয় যেটা অন্যভাবে এতটা হতে পারে না । Virginia Woolf বলেন,  Books are the mirrors of the soul .

সংলাপ দক্ষতা বাড়ায় বই পড়া

শব্দভাণ্ডার ও শব্দের সঠিক প্রয়োগ বই পড়ে ভালো শেখা যায় । বাস্তব জীবনেও সেগুলোর যথাস্থানে প্রয়োগের মাধ্যমে বা কারো সাথে কথোপকথনে ব্যবহারের ফলে সুন্দর যোগাযোগের দক্ষতা বাড়ে , বাড়ে অপরের কথার সঙ্গে তাল মিলিয়ে যুক্তিসই কথা বলার দক্ষতাও ।

বই পড়া ভালো ঘুমাতে সাহায্য করে

যদি ঘুমানোর আগে একটি ভালো বই পড়া যায় তাহলে মস্তিষ্ককের কোষগুলি শান্তভাবে কল্পনার রাজ্যে বিচরণ করে , ফলে খুব তাড়াতাড়ি ঘুম চলে আসে । আর মস্তিষ্কে প্রশান্তির ফলে গাঢ় ঘুম হবার প্রবণতাও তৈরি হয় । Vera Nazarian বলেন , Whenever you read a good book , somewhere in the world a door opens to allow in more light .

বিশ্লেষণী চিন্তা বাড়ায় বই পড়া

Analytical thinking কে উন্নত করা। Ralph Waldo Emerson বলেন, If we encounter a man of rare intellect, we should ask him what books he reads.

বই পড়া নিয়ে উক্তি

জোসেফ ব্রডস্কি বলেন, বই পোড়ানোর চেয়েও গুরুতর অপরাধ অনেক আছে। সেগুলোর মধ্যে একটি হল বই না পড়া।

মার্ক টোয়েইন বলেন, বই পড়ার অভ্যাস নেই আর পড়তে জানেনা এমন লোকের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, বই পড়াকে যথার্থ হিসেবে যে সঙ্গী করে নিতে পারে,তার জীবনের দুঃখ কষ্টের বোঝা অনেক কমে যায়।

দেকার্তে বলেন, ভালো বই পড়া যেনো গত শতকের মহৎ লোকের সাথে আলাপ করার মতো।

সৈয়দ মুজতবা আলী বলেন, পৃথিবীর আর সব সভ্যজাত যতই চোখের সংখ্যা বাড়াতে ব্যস্ত, আমরা ততই আরব্য উপন্যাসের একচোখা দৈত্যের মতো ঘোঁত্ ঘোঁত্ করি, আর চোখ বাড়াবার কথা তুলতেই চোখ রাঙাই। চোখ বাড়াবার পন্থাটা কি? প্রথমতঃ বই পড়া এবং তার জন্য দরকার বই পড়ার প্রবৃত্তি।

পিয়ারসন স্মিথ  বলেন, যে বই পড়ে না,তার মধ্যে মর্যাদাবোধ জন্মে না।

মাও সেতুং বলেন, পড়, পড় এবং পড়।

অস্কার ওয়াইল্ড বলেন, একজন মানুষ ভবিষ্যতে কী হবেন সেটি অন্য কিছু দিয়ে বোঝা না গেলেও তার পড়া বইয়ের ধরন দেখে তা অনেকাংশেই বোঝা যায়।

আর ডি কামিং  বলেন, একটি ভালো বইয়ের কখনোই শেষ বলতে কিছু থাকে না।

নর্মান মেলর বলেন, আমি চাই যে বই পাঠরত অবস্থায় যেন আমার মৃত্যু হয়।

বই পড়া নিয়ে বিল গেটসের টিপস

বই পড়া বিষয়ক বিল গেটসের তিনটা টিপস  হচ্ছে-

বইয়ের পাশে ইচ্ছেমতো নোট নেওয়া।

কোনো বই শুরু করলে সেটা শেষ করা।

প্রতিদিন অন্তত এক ঘন্টা টানা পড়া।

বই নিয়ে উক্তি

রবীন্দ্রনাথ বলেন, বই হচ্ছে অতীত আর বর্তমানের মধ্যে বেঁধে দেয়া সাঁকো।

মার্কাস টুলিয়াস সিসারো বলেন, বই ছাড়া একটি কক্ষ আত্মা ছাড়া দেহের মত।

সিডনি স্মিথ বলেন, গৃহের কোনো আসবাবপত্র বইয়ের মতো সুন্দর নয়।

টুপার বলেন, একটি ভালো বই হলো বর্তমান ও চিরকালের জন্য সবচেয়ে উৎকৃষ্ট বন্ধু।

সুইফট বলেন, বই হচ্ছে মস্তিষ্কের সন্তান।

এনড্রিউ ল্যাঙ বলেন, আইনের মৃত্যু আছে কিন্ত বইয়ের মৃত্যু নেই।

ভিনসেন্ট স্টারেট বলেন, আমরা যখন বই সংগ্রহ করি, তখন আমরা আনন্দকেই সংগ্রহ করি।

জেমস রাসেল বলেন, বই হলো এমন এক মৌমাছি যা অন্যদের সুন্দর মন থেকে মধু সংগ্রহ করে পাঠকের জন্য নিয়ে আসে।

আর ডি কামিং বলেন, একটি ভালো বইয়ের কখনোই শেষ বলতে কিছু থাকে না।

নেপোলিয়ান বলেন, অন্তত ষাট হাজার বই সঙ্গে না থাকলে জীবন অচল।

প্রতিভা বসু বলেন, বই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ আত্মীয়, যার সঙ্গে কোনদিন ঝগড়া হয় না,কোনদিন মনোমালিন্য হয় না।

ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, জীবনে তিনটি জিনিসের প্রয়োজন- বই, বই এবং বই।

ফ্রাঞ্জ কাফকা বলেন, আমাদের আত্মার মাঝে যে জমাট বাধা সমুদ্র সেই সমুদ্রের বরফ ভাঙার কুঠার হলো বই।

স্পিনোজা বলেন, ভালো খাদ্য বস্তু পেট ভরে কিন্ত ভালো বই মানুষের আত্মাকে পরিতৃপ্ত করে।

বই লেখা

লেখালেখি আবেগের রোলারকোস্টারে ঘোরাতে থাকে।  মানসিক ট্রমা বা আবেগ বের করে দিতে লেখা লেখি দুর্দান্তভাবে কাজে আসে। কোন বই পাঠকের   ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে বা পাঠককে সুস্থ করে তোলে। ওই বইয়ের লেখকের জন্য এরচেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কিছুই হতে পারে না।

যিনি বই লেখেন তিনি তাঁর বইয়ের প্রতিটি পাতায় তাঁর দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার কথা ব্যক্ত করেন লেখার মাধ্যমে , তাঁর সেই জ্ঞানের আলোয় আমরা আলোকিত হয়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করার সুযোগ পেয়ে থাকি । তুমি কি নেপোলিয়ন হিলের লেখা ” থিন্ক অ্যান্ড গ্রো রিচ ” বইটি পড়েছো ? বইটির পৃষ্ঠা সংখ্যা ২৩৮ জানো কী লেখকের বইটি লিখতে কত সময় লেগেছে ? নানা গবেষণা করে বইটি শেষ করতে লেখকের ২০ বছর সময় লেগেছে ।

বই লেখা নিয়ে উক্তি

বার্ট্রান্ড রাসেল বলেন, বই লেখাটা নিষ্পাপ বৃত্তি এবং এতে করে দুষ্কর্ম থেকে নিজেকে রক্ষা করা যায়।

বেঞ্জামিন ডিজরেইলি বলেন, কোনো বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত হতে চাইলে তা নিয়ে বই লেখা শুরু করাই ভালো।

জি কে চেস্টারটন বলেন, একটি ভালো উপন্যাস আমাদের সামনে নায়ক সম্পর্কে সত্য তুলে ধরে কিন্তু বাজে উপন্যাস লেখক সম্পর্কে  সত্য তুলে ধরে।

হুমায়ুন আজাদ বলেন, আমার লেখার যে অংশ পাঠককে তৃপ্তি দেয়, সেটুকু বর্তমানের জন্য; আর যে অংশ তাদের ক্ষুব্ধ করে সেটুকু ভবিষ্যতের জন্য। এক বইয়ের পাঠক সম্পর্কে সাবধান।

গ্যেঁটে বলেন, কতকগুলো বই সৃষ্টি হয় আমাদের শিক্ষা দেবার জন্য নয়, বরং তাদের উদ্দেশ্য হলো আমাদের এই কথা জানানো যে, বইগুলোর স্রষ্টারা কিছু জানতেন।

লেখক হওয়ার  উপায়

সময় পেলেই পড়া। টিভি না দেখা। সমালোচনা ও ব্যর্থতার জন্য প্রস্তুত থাকো। নিজের দায়িত্ববোধ থেকে লেখা। যা ভালো লাগে, তা-ই নিয়ে লেখা। জীবন ও সমাজের কোনো জটিল সমস্যার ওপর আলোকপাত করা।আড়ালে থাকা বিষয়কে তুলে আনা।  সমস্ত জগৎ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে একাগ্রচিত্তে লেখা। গুরুগম্ভীর শব্দ ও জটিল বাক্য ব্যবহার এবং ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে বলার অভ্যাস পরিহার। ক্রিয়াবিশেষণ কম ব্যবহার করা এবং অনুচ্ছেদ ছোট রাখা। গল্প লেখার সময় কাহিনির দিকে নজর দেয়া,  ব্যাকরণের দিকে নয়। শৈল্পিক বর্ণনার কৌশল রপ্ত করা। গল্পকে বেশি তথ্যবহুল না করা। মানুষজন বাস্তবে কী করে তা থেকে গল্পের উপাদান গ্রহণ করা। নতুন বিষয় নিয়ে লেখা। অন্য কোনো লেখককে হুবহু অনুকরণ না করে নিজের স্টাইল তৈরি করা। লেখালেখিকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করা।  প্রতিদিন কিছু না কিছু লেখা। কোনো কিছু লেখার পর সেটি পুনরায় দেখা। নিজের শরীর ও মনের যত্ন নেওয়া। তিন মাসে একটি বইয়ের খসড়া সম্পন্ন করা। প্রতিদিন ১০ পৃষ্ঠা করে লিখলে, তিন মাসে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার শব্দ হয়ে যায়।

নতুন লেখক থেকে জনপ্রিয় লেখক

তরুণদেরও উচিত সব মাধ্যমে লেখালেখি করা।  লেখা পত্রিকায় প্রকাশ করা।  পত্রিকা ছাড়াও ব্লগে লেখা যায়। ব্লগ তো এখন দ্বিতীয় গণমাধ্যম। সেই সঙ্গে শক্তিশালী মাধ্যম। সেখানে তরুণদের বেশি বেশি লিখে নিজের লেখাকে আরো সমৃদ্ধ করে তোলা যায়। সেখান থেকে পাঠকও তৈরি হবে। বই প্রকাশে বিবেচ্য বিষয়টি হলো পান্ডুলিপির মান। তাই প্রকাশকদের সম্পাদনা পর্ষদ থাকা জরুরি।   তরুণ লেখকদের প্রথম বই প্রকাশের আগে বিভিন্ন দৈনিক বা সাপ্তাহিকের সাহিত্য পাতায়, লিটল ম্যাগাজিন, ফেসবুক, সাহিত্য পত্রিকা কিংবা ব্লগে নিয়মিত লেখা উচিত। তাহলে তার পাঠক তৈরি হবে। লেখকের পরিচয় তৈরি হয়। একজন লেখকের ক্ষেত্রে পাঠকই মূল। লেখালেখি কোনো মৌসুমী বিষয় নয়, শৌখিন বিষয়ও নয়। একজন লেখকের জন্য লেখাই তার ধ্যান-জ্ঞান, তার জীবনযাপন। নিজেকে ওভাবে প্রস্তুত করতে পারলে বই প্রকাশের সব বাধাই দূর হয়ে যায়। লেখালেখি করে যাওয়াটা জরুরি। সব জনপ্রিয় লেখকই একসময় নতুন লেখকই থাকে।

বই প্রকাশ

বনফুল বলেন, ছাপাখানার কল্যাণে আজকাল ভাল বই খারাপ বই একইভাবে সজ্জিত হইয়া বাহির হয়। তৃতীয় শ্রেণির পুস্তকও সমালোচকদের প্রশংসা লাভ করে এবং বিজ্ঞাপনের কৌশলে প্রথম শ্রেণির পুস্তকের পাশে সমগৌরবে স্থান পায়। প্রকাশকের জন্য বই প্রকাশ একদিকে লেখার প্রতি ভালোবাসা অন্যদিকে ব্যবসাও। কাজেই প্রকাশের আগে বইটি ব্যবসা সফল হবে কিনা, সেই বিবেচনাও প্রকাশকের মাথায় থাকতে পারে।

বই কেনা নিয়ে উক্তি

ভলতেয়ার বলেন, সেদেশ কখনো নিজেকে সভ্য বলে প্রতীয়মান করতে পারবে না যতক্ষণ না তার বেশিরভাগ অর্থ চুইংগামের পরিবর্তে বই কেনার জন্য ব্যয় হবে।

প্রমথ চৌধুরী বলেন, বই কিনলেই যে পড়তে হবে, এটি হচ্ছে পাঠকের ভুল। বই লেখা জিনিসটা একটা শখমাত্র হওয়া উচিত নয়, কিন্তু বই কেনাটা শখ ছাড়া আর কিছু হওয়া উচিত নয়। বই কিনে কেউ কোনোদিন দেউলিয়া হয় না।

জন রাসকিন বলেন, যদি বইটা হয় পড়ার মতো তা কেনার মতো বই।

পাঠাগার সংস্কৃতি

বই দেওয়া-নেওয়ার একটি সংস্কৃতি গড়ে উঠা দরকার।  পাঠাগার হতে পারে সংস্কৃতি চর্চার জন্য  ভালো জায়গা।  দেশজ সংস্কৃতির বিকাশে সুনির্দিষ্ট কিছু কাজ পাঠাগারকে কেন্দ্র করে হতে পারে। বইপাঠ প্রতিযোগিতা আযোজন হতে পারে। পাঠাগার সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে যাওয়া অশুভ লক্ষণ।  জ্ঞান চর্চা জগতে পাঠাগার অনন্য ভূমিকা রাখতে পারে ।

বাংলাদেশে শিশুদের বই

শিশুদের অধিকাংশ বই মানহীন, অজস্র ভুলে ভরা। শিশুর মনস্তত্ব বুঝে যত্ন নিয়ে লেখা খুব কম।  উত্কট রং ব্যবহার, চড়া দাগের ইলাস্ট্রেশনের বই বেশি। বানান ভুল, ছড়ায় ছন্দ ভুলতো রয়েছেই। অযত্ন আর ভুলে ভরা খুব নিম্নমানের এসব বই কিনে শিশুরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মা-বাবারাও না দেখে, না বুঝে সেসব বই শিশুদের হাতে তুলে দিয়ে অজান্তেই তাদের ক্ষতি করেন।  শিশুরা কোনটা ভুল বা ঠিক সেটা জানে না। তাই ভুল শিক্ষা হলে সেটা সারাজীবন বয়ে বেড়ায়।

তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ায় বড়দের সঙ্গে শিশুরাও বই থেকে মুখ পিরিয়ে নিচ্ছে। পাঠ্যবইয়ের বাইরে বইগুলো পড়লেও যে শিশুর জ্ঞানের ভাণ্ডার আরও বিকাশিত হয় তা অনেক অভিভাবক বুঝতে পারছেন না। শুধু পাঠ্যবইয়ে সীমাবদ্ধ রাখতে চাওয়ায় এবং গল্প-ছড়া-জীবনী বই পড়তে না দেয়ায় স্মার্টফোন, কার্টুন আর মোবাইল গেমের কারণে অনেক শিশুর মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস হারিয়ে যেতে বসেছে। শিশুরা বই পড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলার কারণ বইগুলো তাদের বয়স উপযোগী নয়। শিশুর বয়স ৪-৫ বছরের নিচে হলে বইয়ে একটি পৃষ্ঠায় ৩-৪ লাইন করে থাকলে ভালো। ছোট শিশুদের জন্য আরও কম লাইন হলে ভালো হয়। কালারফুল বই হতে হবে অবশ্যই। লেখার ভাষা হতে হবে খুব সহজ।

শিশুদের আলাদা একটা জগৎ আছে, চাহিদা আছে। শিশুদের নিজের ইচ্ছেমতো পড়তে দিতে হবে। বর্তমান সময়ে বাবা-মা রা সব চেয়ে চিন্তিত থাকেন সন্তানের শিক্ষা নিয়ে। কিন্তু দৈনন্দিন জীবনের সকল কর্মব্যাস্ততার ভেতর সন্তানের জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া খুবই দুঃসাধ্য। তাই ভালো শিশুতোষ বই এমন পরিস্থিতিতে শিশুর শিক্ষায় সহায়ক হতে পারে। শিশুদের বইয়ের উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ- কল্পনাশক্তির বীজ তুলে দেয়া, উৎসুক মনটাতে জানার আগ্রহ তৈরি, জানার পরিধি বিস্তৃত করা, নতুন কিছু শেখার প্রতি ভালোবাসা বাড়বে এবং জগৎ ও জীবন সম্পর্কে ধারণা।

প্রকাশনা সংস্থা

প্রকাশনা সংস্থা খুলতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন হবে ট্রেড লাইসেন্স। সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এ লাইসেন্স নিতে হবে। বাংলাদেশ রাইটার্স গিল্ডের স্বত্বাধিকারী পারভেজ রানা জানান, ট্রেড লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজন হবে অফিস ভাড়ার দলিলপত্র, শোরুমের ঠিকানা। ট্রেড লাইসেন্স ফি অফিসভেদে একেক রকম হয়। সাধারণত এ ফি সাত হাজার থেকে ১৩ হাজার টাকা হয়ে থাকে। অন্য কেউ যেন একই নামে নিবন্ধন নিতে না পারে, সে জন্য আগারওগাঁওয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস থেকে নিবন্ধন নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে খরচ পড়বে এক হাজার ৩০০ টাকা।

প্রকাশনা

বইয়ের লেখা, প্রচ্ছদ, ভেতরের অলঙ্করণ, বাইন্ডিং, অক্ষরসজ্জা সব কিছুই গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রকাশককে রুচিশীল ও শিক্ষিত হওয়া চাই।

বই প্রকাশনায় খরচ কেমন?

পাণ্ডুলিপি কম্পোজ করতে হলে পার পৃষ্ঠা ২০ টাকা। প্রতি ফর্মা কম্পোজ ও ট্রেসিং পেপার বের করে দেওয়ার জন্য খরচ পড়বে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। প্রুফের হিসাবও হয়ে থাকে ফর্মা অনুসারে। প্রুফ দেখানোর ক্ষেত্রে পার ফর্মাপ্রতি খরচ হয় ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা। প্রচ্ছদ, কভারে ফ্ল্যাপ সেটিং এর জন্য ১৫০০ থেকে দশ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন শিল্পীরা। কারণ প্রচ্ছদ শিল্পীর খ্যাতির উপর নির্ভর করে প্রচ্ছদের দাম। বইয়ের ভেতরের ইলাস্ট্রেশনের জন্য সম্মানী দুইভাবে হয়। ছবি ও ফর্মা অনুসারে। ছবিপ্রতি ২০০ থেকে ৫০০ টাকা। ফর্মার ক্ষেত্রে তা দুই হাজার থেকে চার হাজার টাকা হয়ে থাকে।

ফর্মা সেটিং ও প্লেট মেকআপ পার ফর্মা ১৫০ টাকা। প্লেট তৈরি (ডবল ডিমাই): পার প্লেট ৪০০ টাকা (এক কালার বইয়ের জন্য), ১৬০০ টাকা ( ফোর কালার বইয়ের জন্য)। কভার প্লেট, প্রিন্ট, কাগজ, স্পট ও লেমিনেশন এবং পোস্তানি সহ (২০০ কপি বইয়ের জন্য): ৩৫০০ টাকা। সাধারণত ১০০-১২০ গ্রাম আর্ট পেপার ব্যবহার করা হয় প্রচ্ছদে।এক রিম আর্ট পেপারের দাম পড়ে তিন হাজার থেকে তিন হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত। প্রিন্টের জন্য (ডবল ডিমাই): ভেতরের পাতার জন্য পার প্লেট ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা (এক কালার বইয়ের জন্য)। ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা (ফোর কালার বইয়ের জন্য)। এক হাজার কপি বইয়ের প্রচ্ছদ ছাপানোর জন্য খরচ পড়বে এক হাজার ৬০০ থেকে দুই হাজার টাকা।

কাগজ পার রিম ১৭০০ থেকে ২০০০ টাকা। ফর্মা হলো ২৩”×৩৬” সাইজ কাগজ। এতে ৮টা ভাঁজ হয়। তথা আট পাতা বা ১৬ পৃষ্ঠা। ১ফর্মা মানি ১শীট কাগজ, যা দিয়ে ১৬ পৃষ্ঠা হয়। ৫০০সিটে এক রিম। পাঁচ ফর্মার ২০০ কপি একটা বইয়ে কাগজ লাগবে পাঁচ শীট। সুতরাং ২০০ বইয়ে কাগজ লাগবে ১০০০ শীট। তথা দুই রিম তথা ন্যূনতম দাম ৩৪০০টাকার ইনার কাগজ। তবে আরো ১৫০শীট কাগজের দাম বেশি যোগ করবে, কারণ ২০০বই টিকাতে ২৩০কপি বইয়ের টার্গেট নিতে হয়। কেননা প্রিন্ট ও বাঁধাইয়ে কিছু কাগজ বা বই নষ্ট হয়ে থাকে। ভেতরে সাধারণত ৭০ বা ৮০ গ্রাম অফসেট পেপার ব্যবহার করা হয়। এক রিম ৮০ গ্রাম অফসেট পেপারের দাম এক হাজার ৭০০ থেকে এক হাজার ৮৫০ এবং এক রিম ৭০ গ্রাম অফসেট পেপারের দাম এক হাজার ৫৫০ থেকে এক হাজার ৬৫০ টাকা।

কাগজে সলিড মারা বলতে বুঝায় – কাগজকে সাদা হতে কোনো একটি কালারে রূপ দেয়া, এতে কাগজ একটু মোটাও হয়ে থাকে, দেখতে সুন্দর লাগে। সলিড খরচঃ পার রিম ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা। তবে সলিড না মারলেও বই হয়। এটা ঐচ্ছিক। পিন বাইন্ডিং ৪টাকা, বোর্ড বাইন্ডিং পাঁচ থেকে ১০ ফর্মার একটি বইয়ের জন্য খরচ হবে ১২ থেকে ২০ টাকা। ১০ থেকে ২০ ফর্মার একটি বইয়ের বাঁধাইয়ের জন্য খরচ হবে ৪০ থেকে ৫০ টাকা পার বই। আইএসবিএন চার্জ ৫০০ টাকা যাতায়াত খরচ সহ। সিস্টেম লস চার্জ ২০০০ টাকা। প্রিন্টে কিছু কাগজ নষ্ট হবে। বাঁধাইয়ে কিছু বই নষ্ট হবে। তাই কাগজের খরচটা বাড়বে।কাগজ ক্রয়ে ব্যক্তির যাতায়াত খরচ, কাগজ প্রেসে পাঠানোর খরচ, প্রেস হতে বাইন্ডিংয়ে পাঠানোর খরচ, বাইন্ডিং হতে গোডাউনে আনার খরচ, গোডাউন ভাড়া।এসব হলো সিস্টেম লস।

সাধারণত বইয়ের গায়ে থাকা মূল্যের ১৫ শতাংশ সম্মানী লেখক পেয়ে থাকেন। লেখকের সঙ্গে সম্পর্ক অনুসারে এ সম্মানী বইয়ের পাণ্ডুলিপি জমার আগে কিছু অংশ আবার বই বিক্রির পরে বাকি অংশ দেওয়া হয়ে থাকে। অফিসের খরচ, কর্মচারীর বেতন, লেখকের সম্মানী, কাগজ, প্রেসসহ সব খরচ হিসাব করে বইয়ের মূল্য নির্ধারণ করা হয়। সাধারণত সব খরচ বাদ দিয়ে ২৫ শতাংশ লাভ ধরা হয়। বিজ্ঞাপন দিলে এ লাভ নেমে আসে ২০ শতাংশে।

About পরিবার.নেট

পরিবার বিষয়ক অনলাইন ম্যাগাজিন ‘পরিবার ডটনেট’ এর যাত্রা শুরু ২০১৭ সালে। পরিবার ডটনেট এর উদ্দেশ্য পরিবারকে সময় দান, পরিবারের যত্ন নেয়া, পারস্পরিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করা, পারিবারিক পর্যায়েই বহুবিধ সমস্যা সমাধানের মানসিকতা তৈরি করে সমাজকে সুন্দর করার ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। পরিবার ডটনেট চায়- পারিবারিক সম্পর্কগুলো হবে মজবুত, জীবনে বজায় থাকবে সুষ্ঠুতা, ঘরে ঘরে জ্বলবে আশার আলো, শান্তিময় হবে প্রতিটি গৃহ, প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের মানবিক মান-মর্যাদা-সুখ নিশ্চিত হবে । আগ্রহী যে কেউ পরিবার ডটনেট এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ যেকোনো বিষয়ে লেখা ছাড়াও পাঠাতে পারেন ছবি, ভিডিও ও কার্টুন। নিজের শখ-স্বপ্ন-অনুভূতি-অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে দিতে পারেন সবার মাঝে। কনটেন্টের সাথে আপনার নাম-পরিচয়-ছবিও পাঠাবেন। ইমেইল: poribar.net@gmail.com

View all posts by পরিবার.নেট →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *