প্রতিষ্ঠান চালানোর জন্য চাই সঠিক অবস্থানে যোগ্য মানুষ। উপযুক্ত লোক নিয়োগের কাজটা খুবই কঠিন। প্রার্থী যেনতেনভাবে নির্বাচিত হলে ক্ষতি হতে পারে! এজন্য অনেক দিকে খেয়াল রেখে কাজ করতে হয়। সঠিক ব্যক্তিদের বাছাই করে দায়িত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ করতে পারলে লক্ষ্যে পৌঁছানো সহজ হয়ে যায়।
অনেক খুঁজে সঠিক প্রার্থী বাছাই করতে হয়। না হলে নিয়োগ প্রক্রিয়া যেমন পণ্ডশ্রমে পরিণত হয়, তেমনি কর্মপ্রক্রিয়াও ব্যাহত হয়। যেকোনো কোম্পানির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হচ্ছে তাদের জনসম্পদ বা জনবল।
নিয়োগদাতার বিবেচ্য বিষয়
যোগ্য লোকের যোগ্যতার সঠিক মূল্যায়ণ করলে তিনি প্রতিষ্ঠানটিকে সঠিক জায়গা পর্যন্ত পৌঁছতে অবদান রাখতে পারেন। কোম্পানির কোন সময়ে কোন লোক দরকার তা বুঝলে সঠিক লোককে নায্য সম্মানী দিয়ে নিয়োগ দেয়া যায়।
যোগাযোগহীনতা দূর করা
প্রথমে নিয়োগদাতা ও নিয়োগপ্রার্থীর মধ্যে যোগাযোগহীনতা দূর করতে হবে। কোম্পানি চাহিদা-প্রত্যাশা অনুযায়ী যোগ্য লোক তখনই খুঁজে পাবে যখন যোগ্য লোকও সেখানকার কাজের পরিবেশ ও পারিশ্রমিককে সম্মানজনক মনে করবে।
কর্পোরেট জগত সম্পর্কে ধারণা
যিনি লোক বাছাই করবেন তাকে কর্পোরেট জগত সম্পর্কে সুগভীর ও সুবিস্তৃত ধারণা রাখতে হবে। কে, কোথায়, কী পদে, কতদিন ধরে কর্মরত আছেন, এর আগে কোন কোম্পানিতে-প্রতিষ্ঠানে কতদিন, কোন পদে ছিলেন, কার কী পেশাগত সাফল্য-ব্যর্থতা, কার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কতখানি, কার বাড়ি কোথায়, কে দেশের কোন প্রান্তে কতদিন কর্মরত ছিলেন, সর্বোপরি কে কত টাকা বেতন-ভাতা-সম্মানী ও সুযোগ-সুবিধা পান, সে ব্যাপারে সম্যক ধারণা রাখতে হবে।
বেশি খোঁজ-খবর নেয়া
যে যত বেশি খোঁজ-খবর নিতে পারবেন, তাঁর লোক নিয়োগের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হবার ঝুঁকি তত কমবে এবং ব্যবসায়িক সম্ভাবনা তত বাড়বে। উপযুক্ত প্রার্থীর সিভি সংগ্রহে ব্যক্তিগত নেটওয়ার্কিং গুরুত্বপূর্ণ।
সঠিক তথ্যভাণ্ডার সংরক্ষণ এবং নিয়মিত আপটুডেট করা জরুরি। না থাকলে ব্যক্তিগত ও পেশাগত যোগাযোগকে কাজে লাগিয়ে উপযুক্ত প্রার্থীদের খুঁজে সম্ভাব্য চাকরি সম্পর্কে ধারণা দিতে হয় এবং সিভি জমা দিতে বলা হয়।
সঠিক প্রার্থীকে খুঁজে বের করা
সিভি-ভাণ্ডার সংরক্ষণ, অনেক পেশাজীবী ভালো চাকরির প্রত্যাশা বিবেচনাকরণ গুরুত্বপূর্ণ। সুপরিচিত-সুপ্রতিষ্ঠিত কর্পোরেট গ্রুপ ও সমধর্মী প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে।
দরকারি মুহূর্তে কোম্পানিগুলোর চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে সঠিক প্রার্থীকে দ্রুত খুঁজে বের করতে যথাযথ কলাকৌশল জরুরি।
প্রথমে চাহিদাপত্র ঠিক করা
কোনো পদ শূন্য হলে, সিনিয়র লেভেলে নতুন কোনো পদ সৃষ্টি হলে, কাউকে প্রতিস্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিলে প্রথমে চাহিদাপত্র ঠিক করতে হয়। কোন পদের জন্য প্রার্থী দরকার? প্রার্থীর ন্যূনতম যোগ্যতা কী হবে? সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কত বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে?
বিশেষ কোনো যোগ্যতা আবশ্যক কিনা? প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা/পৈতৃক বাড়ি/পেশাগত অভিজ্ঞতার কোনোরূপ বাছ-বিচার আছে কিনা? আর কোনো শর্ত প্রযোজ্য কিনা? সর্বোচ্চ কত টাকা পর্যন্ত বেতন/সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হতে পারে?
নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ
কোম্পানির চাহিদার সঙ্গে পুরো কিংবা আংশিক মিলে যাওয়া সিভিগুলো নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ করে বাছাই করতে হয়। বোঝার চেষ্টা করতে হয় প্রার্থী মানসিকভাবে প্রস্তুত কিনা।
প্রত্যাশার সঙ্গে মিলে গেলে সিভিগুলো আলাদা করে সাক্ষাৎকার প্রার্থীদের আমন্ত্রণ জানাতে হয়। কর্পোরেট সংস্কৃতি যিনি বোঝেন তিনি সহজে যোগ্য লোক চিনতে ও খুঁজে বের করতে পারেন।
কোম্পানির সংস্কৃতি-স্টাইল-ধারা বিবেচনা
একেক কোম্পানির সংস্কৃতি-স্টাইল-ধারা একেক রকম। একেক মালিকের পছন্দ-অপছন্দও ভিন্ন ভিন্ন। কোম্পানির অন্দরমহলের খোঁজ-খবর জানলে প্রার্থীদের মধ্য থেকে সঠিক লোক বাছাই সহজ হয়। সাক্ষাৎকারে কেমন পোশাক পড়েন, কী বলেন, কী বলেন না- তা দেখে নির্বাচনে ভূমিকা রাখা যায়।
যার নিজেরই যোগ্যতার ঘাটতি আছে তিনি সঠিক লোক বাছাই দূরে থাক, সঠিক সিভিও বাছাই করতে পারবেন না। অযোগ্য লোকের হাতে লোক বাছাইয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়া প্রতিষ্ঠানের জন্য আত্মঘাতিমূলক। যেকোনো জায়গায় যোগ্য মানুষরা এগিয়ে না এলে অযোগ্যরা ইচ্ছেমতো দাপিয়ে বেড়ায়!
নানা ধাপের প্রয়োজন বোঝা
ছোট থেকে বড় হওয়া দেশীয় অনেক মালিকেরা সঠিক লোক বাছাইয়ে নানা ধাপের প্রয়োজন ও গুরুত্ব বোঝেন না। তাঁরা ভালো লোক চান, যোগ্য লোক চান, কিন্তু বেতন দিতে চান কম! আবার মনে করেন- যখন তখন চাইলেই তো লোক পাওয়া যায়, আবার বাদও দেয়া যায়।
তাহলে লোক নিয়োগ দিতে এত ভাবনা চিন্তা করতে হবে কেন! অথচ দরকার মতো যোগ্য লোক খুঁজে বের করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বপূর্ণ কাজ; যা কোম্পানির জন্য লাভজনক ও অনেক সময় বাঁচায়।
বাছাই করাদের প্রশিক্ষণ
সম্ভাবনাময় কর্মীদের জন্য ব্যাপকতর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দূরদৃষ্টি সম্পন্ন করে গড়তে হবে। দায়িত্ব পালনে প্রয়োজনীয় খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কেও ওয়াকিফহাল করে তুলতে হবে। সঠিক প্রতিনিধিত্ব করার যোগ্যতা তাদের মাঝে বিকশিত করতে হবে। প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই।
চাকরি প্রার্থীদের যা দেখে নেয়া জরুরি
চাকরির ইন্টারভিউ দেয়ার চেয়েও কঠিন কোন কাজ হলো নিয়োগকারী হিসেবে স্বয়ং প্রার্থীদের ইন্টারভিউ নেয়া কিংবা কাকে নিয়োগ দিতে হবে সে ব্যাপারে মত দেয়া। কোম্পানির জন্য সঠিক প্রার্থীকে বাছাই করা বা সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়াটা একটি প্রতিষ্ঠানের সাফল্য ও ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোন ভুল লোককে নিয়োগ দিলে বা নিয়োগ দেয়ার সময় ভুল করলে কোম্পানির সম্মান ও ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মুখে পড়ে যেতে পারে।
ছোট ছোট বিষয়েও মনোযোগ দিন
নিয়োগের জন্য সঠিক ট্যালেন্টদের খুঁজে বের করতে হবে। কিছু মূল বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করে দেখতে হবে। অনুপযুক্ত বা বেমানান প্রার্থীদের বাদ দিতে হবে। সম্ভাবনাময় ও উপযুক্ত লোকগুলিকে বেছে নিতে হবে।
সিভি দেখে উপযুক্ত বা পারফেক্ট লোক মনে হলেও, সামনা সামনি কথা বলার অনুপযুক্ত মনে হতে পারে। শিক্ষাগত যোগ্যতা ও কাজের অভিজ্ঞতার বাইরেও কিছু বাড়তি গুণ দেখতে হবে।
উচ্চাকাঙ্ক্ষা
ইন্টারভিউ বোর্ডে সব প্রার্থীই চাকরির পদবীর দিকে তাকিয়ে আসেন না। কিছু লোক মাস শেষের বেতনটাকে বেশি প্রাধান্য দেন, কিছু লোক চাকরিটি থেকে নতুন কিছু শিখতে বেশি আগ্রহী এবং ভবিষ্যতের কথা ভাবেন। দীর্ঘমেয়াদী ও সমর্পণকারী লোকেরা সুযোগ সন্ধানী ও আত্ম-উন্নয়নের ব্যাপারে উচ্চাকাঙ্ক্ষী।
কাকে নিলে কোম্পানির সাথে বেশি দিন টিকে থাকবেন এবং প্রয়োজনের জন্য যেকোনো ধরণের কাজের চ্যালেঞ্জ নিবেন তা বুঝতে হবে। উচ্চাকাঙ্ক্ষীরা কোম্পানির জন্য সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পারফর্ম করতে চাইবেন, তাই তাদেরকে ট্রেনিং দেয়াটাও বিনিয়োগ। শেখা ও ক্যারিয়ারে উপরের দিকে ওঠার অনুপ্রেরণাগুলো কোম্পানির জন্যও উপকারী হয়ে দাঁড়াবে।
ইতিবাচক মনোভাব
কৌতুহল ও উদ্যম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইন্টারভিউয়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়ার সময় যাদের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব এবং উদ্যমী স্বভাব ফুটে ওঠে তাদেরকে এগিয়ে রাখুন। যদি তারা নম্রভাবে হাসেন, বিনয়ী থাকেন এবং আশাবাদী মনোভাব নিয়ে কঠিন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন, তাহলে তো খুবই ভালো।
উদ্যমী মানুষ খুবই ভালো কর্মী হিসেবে গণ্য হন, তারা কাজের পরিবেশে এক ধরণের নতুন এনার্জি নিয়ে আসবেন। আশাবাদী মানুষ কাজের সময় সবচেয়ে কঠিনতম সমস্যাটি সমাধান করার সময়ও একটি গঠনমূলক ভঙ্গিমায় কাজ করতে পারবেন। এরকম একজন কর্মী কোম্পানিতে থাকলে বাকি সবার জন্যও কাজের পরিবেশ অনেকটাই ইতিবাচক হয়ে উঠবে।
একজন প্রার্থীর মনোভাব পরীক্ষা করার জন্য ইন্টারভিউয়ের সময় তাকে নানা রকম পরিস্থিতি সংক্রান্ত প্রশ্ন করে দেখতে পারেন। ইন্টারভিউয়ের সময় কাল্পনিক কোনো সমস্যার সমাধান করতে দিন। এতে প্রার্থীর মধ্যে নিয়োগ পাওয়ার পর বাস্তব জীবনে তৈরি হওয়া সমস্যাগুলো কার্যকরী ভাবে সমাধান করার মত যোগ্যতা ও দক্ষতা আছে কি না তা বোঝা যায়।
যোগাযোগের দক্ষতা
ভালো যোগাযোগের দক্ষতা থাকাটা আবশ্যক। ইন্টারভিউয়ের প্রশ্নগুলোর উত্তর সাবলীল ভাবে দিতে পারা, ইন্টারভিউ চলাকালীন অবস্থায় নিজের ব্যাপারে একটি আকর্ষণীয় বা কৌতুহল জাগানো গল্প বলতে পারা – এর যে কোন একটিই একজন প্রার্থীর মধ্যে থাকা শক্তিশালী যোগাযোগের দক্ষতার পরিচয় দিতে পারে।
ভালো মৌখিক যোগাযোগ, যেমন ফোন কলে কথা বলার সময় ভদ্রতার পাশাপাশি একজন প্রার্থীর লৈখিক যোগাযোগ বা লেখালেখির ক্ষমতাটাও (যেমন- রিপোর্ট ও ইমেইল) বেশ গুরুত্ব বহন করে। অন্যদের সাথে ভালোভাবে আলাপ করার ক্ষমতা একটি দারুণ স্বকীয় বৈশিষ্ট্য বা সফট স্কিল হিসেবে কাজ করে, বিশেষ করে যখন একজন কর্মী কাস্টমারদের সাথে সরাসরি কাজ করেন।
একজন কর্মীর মৌখিক ও লৈখিক যোগাযোগের দক্ষতা পরীক্ষা করার জন্য দারুণ একটি উপায় হলো তাকে কোন একটি প্রাতিষ্ঠানিক প্রেজেন্টেশন লেখা ও পারফর্ম করতে দেয়া। ইন্টারভিউয়ের সময় বা লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রার্থীদেরকে বিস্তারিত প্রশ্ন করে দেখতে পারেন তারা একেক ধরণের কথোপকথনে কীভাবে উত্তর দিচ্ছেন আর কী রকম প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন।
মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা
যেকোনো ধরণের পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নেয়ার দক্ষতা সবার থাকে না। যেকোন প্রতিষ্ঠানের জন্য এমন একজন প্রার্থী বা কর্মী অনেক মূল্যবান, যারা দ্রুত যেকোন পরিবর্তন ও পরিস্থিতির সাহে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন।
একটি ব্যবসার লক্ষ্য এবং কৌশল গুলো সব সময়ই পরিবর্তনশীল, আর তাই সেখানে এমন সব কর্মী থাকা জরুরি যারা অভিযোজনে দক্ষ ও সহনশীল। জেদি ও অনমনীয় কর্মীরা একটা সময় প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতায় বাধার সৃষ্টি করে থাকেন, কেননা তারা কর্মক্ষেত্রে কোনো ধরণের পরিবর্তনকে মেনে নিতে চান না।
অন্যদিকে নমনীয় ও সহনশীল কর্মীরা বিপদের সময়ে কাজে আসবেন, বিশেষ করে যখন জনবল কম থাকে। তারা এ ধরণের পরিস্থিতিতে যেখানে যেভাবে সম্ভব সাহায্য করতে ও কোম্পানিকে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনার জন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ে কাজ করে যাওয়ার চেষ্টা করবেন।
ব্যক্তিত্ব
চাকরি প্রার্থীদের কেউ কেউ অতিমাত্রায় আত্মবিশ্বাসী হবেন, কেউ অনেক উদ্যমী ও কর্মশক্তিতে পরিপূর্ণ থাকবেন, যেখানে কেউ কেউ আবার লাজুক বা নার্ভাস প্রকৃতির হবেন। সহজাত ও আত্মবিশ্বাসী প্রবণতা থাকাদের অগ্রাধিকার দিন। তাদের ব্যক্তিত্বের সূক্ষ্ম দিকগুলোতেও খেয়াল করুন।
প্রার্থীর বিনয়ী স্বভাব ও আন্তরিকতা ফুটে ওঠতে পারে- আগের অর্জন ও প্রাপ্তিগুলোর কথা বলার সময় নম্রতা, কিংবা আগের নিয়োগকারী ও কলিগদের ব্যাপারে ভালো মন্তব্য করার মাধ্যমে। এরা বেশির ভাগ কোম্পানির জন্যই দারুণ কর্মী হতে পারেন, কেননা তাদের সাথে মিলেমিশে কাজ করা ও সম্পর্ক রাখা সহজ।
প্রত্যেকটি কোম্পানিই নিজ নিজ বৈশিষ্ট্যে আলাদা এবং তাদের প্রাতিষ্ঠানিক রীতিনীতিও ভিন্ন। এমন লোককে নিয়োগ দেয়া ভালো, যে পুরো কোম্পানির বাকিদের সাথে ভালোভাবে মিশতে পারবেন। নতুন ও বর্তমান সব কর্মীরা একে অপরের সাথে মেলামেশা করতে ও ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন।
নির্ভরযোগ্যতা
কোন প্রার্থীর সাথে আলাপের পর যদি এমন মনে হয় যে তারা ঠিক ততটা নির্ভরযোগ্য নন, তাহলে সেই ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়া কোন ভাবেই সঠিক হতে পারে না। নির্দিষ্ট সময়সীমার দিকে খেয়াল রাখা, যত্ন সহকারে ও সঠিকভাবে কাজ সম্পন্ন করা এবং চাকরিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকার মত বেসিক গুণগুলো আছে কিনা দেখুন।
অবিশ্বস্ত কর্মী মাঝে মাঝে ন্যূনতম পরিমাণ কাজ করতেও অনীহা দেখাতে পারেন এবং কর্মক্ষেত্রে অনৈতিক কাজকর্ম করার প্রবণতাও থাকতে পারে। কাজের মধ্যে ফাঁকি দেয়া বা অসম্পূর্ণ কাজ করার চেষ্টা করতে পারেন, কিংবা কিছু কিছু ভুল কাজকে উপেক্ষা করে চলতে পারেন।
এসব সমস্যা একটা সময় কোম্পানির সম্মান ও মর্যাদাকে নষ্ট করে দিতে পারে, কাস্টমারদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তাই তাদের নিয়োগ দেয়া ও ধরে রাখার চেষ্টা করা আবশ্যক, যারা কোম্পানির জন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ে নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত বলে প্রমাণিত।
সেরাদেরই নিয়োগ দিন
প্রতিষ্ঠানের অনবদ্য অংশ হতে পারেন, এমন ব্যক্তিদের খুঁজে বের করাটা অসম্ভব রকম চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। সম্ভাব্য সেরা প্রার্থী বাছাই নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়াটা কোম্পানির ভবিষ্যতের জন্য মূল্যবান ধাপ।
কেননা কাকে কাকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে তারা একটি ব্যবসাকে গড়ার কিংবা ভাঙার ক্ষমতা রাখেন। অতএব চেষ্টা করুন যেন মার্কেটের সব প্রার্থীদের মধ্যে শুধু সেরাদেরই আপনার কোম্পানিতে নিয়োগ দিতে পারেন সব সময়।
নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রচলিত গল্প
১০০টি করে ইট রেখে দিন। যারা চাকরিপ্রার্থী হবে তাদের ২-৩ জন করে গ্রুপ করুন। প্রত্যেকটি গ্রুপকে বলুন ১ ঘন্টার মধ্যে ইটগুলো নির্দিষ্ট দূরত্বে রেখে আসতে হবে। ১ ঘন্টা পর কাজের অগ্রগতি করুন। দূর থেকে তাদের কর্মকান্ড লক্ষ্য করুন এবং উপযুক্ত লোক বাছাই করুন।
যদি কেউ ইট গুনতে শুরু করে সে একাউন্টস ডিপার্টমেন্টে উপযুক্ত। যদি কেউ বার বার গুনতে থাকে তবে সে অডিট ডিপার্টমেন্টে উপযুক্ত। ডদি কেউ ইটের সাইজ, ওজন, ধরণ মাপতে লেগে পড়ে তবে সে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে উপযুক্ত।
যদি তারা কে কয়টা নিবে কিভাবে নিবে ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা শুরু করে তবে তারা প্ল্যানিং ডিপার্টমেন্টে উপযুক্ত। যদি তারা একে অপরের দিকে ইট ছুড়াছুড়ি করে তবে তারা অপারেশন ডিপার্টমেন্টে উপযুক্ত। যদি কেউ ঘুমিয়ে পড়ে তবে সে সিকিউরিটিতে উপযুক্ত।
পরিবহনের সুবিধার জন্য কেউ ইট ভেঙে টুকরা করলে বুঝতে হবে আইট ডিার্টমেন্টে উপযুক্ত। যদি তারা কাজ না করে অলসভাবে বসে থাকে তবে বুঝতে হবে তারা হিউম্যান রিসোর্স ডিপার্টমেন্টে উপযুক্ত।
যদি তারা কোনো কাজ না করে বসে থাকে এবং পরবর্তীতে বলে এই সাইজ ও ধরণ সমস্যঅজনক এবং ইটের মানোন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পরামর্শ দেয় বুঝতে হবে তারা মার্কেটিং ও সেলস ডিপার্টমেন্টের উপযুক্ত। যদি তারা একটা ইটেও হাত না দিয়ে একজন আরেকজনকে কাজের অর্ডার দিতে থাকে তাদেরকে সরাসরি ম্যানেজমেন্টে নিয়োগ দিন।
কিছু প্রাসঙ্গিক বিবেচনা
কোম্পানি পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেক ধরণের কাজ রয়েছে। সেইগুলো এক ব্যক্তির পক্ষে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। তাই একটি টিম গড়ে তুলতে হয়। বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর অর্পণ করতে হয় বিভিন্ন বিভাগের কাজ। বিভিন্ন কাজের জন্য লোক বাছাই করার ক্ষেত্রে খুব সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।
সঠিক মেজাজ ও সঠিক মানের লোক বাছাই না হলে ম্যাল এডজাস্টমেন্ট সমস্যা দেখা দিতে বাধ্য। অথচ কাউকে কোন পদে নিযুক্ত করা যতো সহজ, পদচ্যুত করা ততোখানি সহজ নয়। অপসারণকে সহজে মেনে নেয়ার মতো বাহাদুর ব্যক্তি কমই দেখা যায়।
ফলে জটিলতার সৃষ্টি হয়। তাই নিযুক্তির আগেই বারবার ভাবতে হবে, ব্যক্তি চয়নের যথার্থতা সম্পর্কে নিঃসংশয় হতে হবে। ভেবে চিন্তে, জেনে শুনে এবং ভবিষ্যত সম্ভাবনার দিকে লক্ষ্য রেখে লোক নিয়োগ করা বিচক্ষণ মালিকের একটি বিশেষ যোগ্যতা।
নিয়োগে সাধারণ ভুল
সফলতার জন্য সঠিক কর্মী নির্বাচন করা প্রয়োজন। উপযুক্ত কর্মী ছাড়া কোন প্রতিষ্ঠান-ই তাদের লক্ষ্যের দিকে আগাতে পারে না। যেসব কর্মী, পদের জন্য নির্ধারিত যোগ্যতার সাথে নিজেদের মিলিয়ে নিতে পারে না তাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হলে ভবিষ্যতে তা প্রতিষ্ঠানে অনেক অযাচিত সমস্যা এবং অদরকারি খরচ বয়ে আনে।
চাকরিতে নিয়োগের সময় সাধারণ যে ভুলগুলো হয় তা এড়াতে, নিয়োগ কর্তাদের জানা উচিত, সঠিকভাবে কিভাবে কর্মী নিয়োগ করা উচিত যেনো পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানকে কোন ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে না হয়। কেননা যদি ভুল কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয় সেক্ষেত্রে, একটা সময় কোন না কোন ভাবে হয় তারা চাকরিচ্যুত হয় বা নিজে থেকেই চাকরি ছেড়ে চলে যায়। যার ফলস্বরুপ নিয়োগকর্তাদের আবারো নিয়োগের পুরো পদ্ধতির পুনরাবৃত্তি করতে হয়।
বৈচিত্রতা উপেক্ষা করে শর্টলিস্ট
উপযুক্ত কর্মী নিয়োগের জন্য, যারা ভালো ক্যান্ডিডেট আছেন তাদের শর্টলিস্ট করা জরুরি কিন্তু এই কাজটা প্রাথমিক বাছাইয়ের সময় থেকেই করা উচিত নয়। প্রাতিষ্ঠানিক সাফল্য লাভের অন্যতম চাবিকাঠি হচ্ছে বৈচিত্র্যতা। বৈচিত্র্যতা বলতে, প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, বয়সের মানুষের কাজের সুযোগ তৈরি করা বোঝায়।
বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ডের থেকে সঠিক কর্মী বাছাই, তাদের নানা ধরণের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এবং মতাদর্শ যেসব নতুন এবং ব্যতিক্রমী চিন্তাভাবনার মিশ্রণ ঘটাবে কর্মস্থলে তা প্রতিষ্ঠানটিকে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় ব্যতিক্রমী করে তুলবে।
প্রাথমিক ধারণাতেই স্থির থাকা
ইন্টারভিউ এর মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় আবেদনকারী প্রার্থীর ব্যাপারে নিয়োগকর্তারা কিছু একটা ধারণা পোষণ করবেন। একজন প্রার্থীর কথা বলার ধরণ, তার আচার-আচরণ এবং তার হাব-ভাব সকল কিছুর উপরেই নির্ভর করে একজন ইন্টারভিওয়ার তার ব্যাপারে এবং নির্দিষ্ট পদটির জন্য সে কতটুকু যোগ্য তা নিয়ে মতামত পোষণ করেন।
একজন নিয়োগকর্তা যদি নিয়োগের চূড়ান্ত সিন্ধান্ত নেয় শুধুমাত্র প্রার্থীর প্রতি তার নিজস্ব ধারণার উপর ভিত্তি করে তবে এতে করে ভুল প্রার্থী নির্বাচনের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। একজন প্রার্থীর হয়তো নির্দিষ্ট পদের জন্য দরকারি সকল জ্ঞান এবং দক্ষতা দুইটিই আছে, কিন্তু নার্ভাসনেস কিংবা ইন্টারভিউতে সঠিকভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে না পারায় প্রথম ইমপ্রেশন খারাপ হয়ে গেছে।
এতে করে নিয়োগকর্তাদের মনে হতে পারে ব্যক্তিটি পদটির জন্য উপযুক্ত নয়। এতে করে প্রতিষ্ঠানটিও একজন দক্ষ এবং যোগ্য লোককে হারানোর সম্ভাবনা বেড়ে যায়। নিয়োগ কর্তাদের উচিত ইন্টারভিউ এর সময় প্রার্থীদের সিভিতে উল্লিখিত দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার পাশাপাশি অন্যান্য যেসব সহকারী তথ্য দেওয়া থাকে তার উপর প্রাধান্য দেওয়া। নিয়োগের ক্ষেত্রে দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা ছাড়া অন্যান্য বিষয়াদির উপর গুরুত্ব প্রদান করা না হলে নিয়োগ কর্তাদের পক্ষে যোগ্য প্রার্থী বাছাই করতে সুবিধা হবে।
পূর্ব-প্রস্তুত না করা
প্রার্থীর দক্ষতা ও প্রতিষ্ঠানের সাথে সে কতটুকু খাপখাওয়াতে পারবে সেটা বুঝাটা গুরুত্বপূর্ণ। নিয়োগকর্তারা চাকরির পদটির একটি বিস্তারিত জব ডেসক্রিপশন প্রস্তুত করে তাতে পালনীয় দায়িত্বসমূহের উল্লেখ করে কি কি কাজ করা লাগবে তা জানিয়ে দিতে পারেন।
প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে কোম্পানির মিশন ও উদ্দেশ্য এবং প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত তথ্যাবলি, রীতিনীতি সম্পর্কিত তথ্য দেওয়া থাকলে প্রার্থীরা তা পড়ে নিজেরাই বুঝতে পারবেন প্রতিষ্ঠানটি কি ধরণের এবং সেই সাথে যাচাই করে নিতে পারবেন তারা কতটুকু উপযুক্ত কাজ করার জন্য ওই প্রতিষ্ঠানটিতে।
পূর্ব প্রস্তুতি না নেয়া
নিয়োগকারীদের বেশিরভাগই কর্মী নিয়োগের পুরো প্রক্রিয়াটি আগে থেকে পরিকল্পনা করে রাখেন না। একটা বিনা পরিকল্পনার রিক্রুট্মেন্টে ইন্টারভিউ করা শখানেক প্রার্থীর মধ্যে থেকে কে সব থেকে বেশি যোগ্যতা নির্ধারণ করা কষ্টকর।
প্রার্থীদের যদি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন না করা হয় এবং যদি তা নিয়োগকর্তার প্রয়োজন অনুযায়ী না হয় সেক্ষেত্রে ভুল লোক নিয়োগের সম্ভাবনা বেড়ে যায় অনেকখানি। অন্যদিকে প্রশ্নকর্তাদেরকেও প্রস্তুত করা উচিত, তাদেরও জানা উচিত কিভাবে সঠিক প্রার্থীকে বাছাই করতে হবে।
সঠিক পূর্ব পরিকল্পনা করতে হবে যেখানে থাকবে – যেই পদের জন্য লোক নেওয়া হচ্ছে তার কার্যবিবরণী, প্রার্থীদের প্রাসঙ্গিক কি কি প্রশ্ন করা যায় এবং ইন্টারভিওয়ের সময় প্রার্থীর দক্ষতা এবং যোগ্যতার সঠিক যাচাই-বাছাই। ইন্টারভিউটাকে পরিকল্পিতভাবে পরিচালনা করতে পারলে তা যেমন প্রতিষ্ঠানের কাজ এবং সময় বাচাবে সেই সাথে, নিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে দরকারি তথ্য খুজে বের করতেও সুবিধা হবে।
প্রাথমিক বাছাইয়ে গলদ
প্রার্থী স্ক্রিনিং পদ্ধতিতে রেফারেন্স চেকিং অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। এমন অনেক প্রার্থী থাকেন যারা ইন্টারভিউয়ের সময় তাদের সিভিতে সঠিকভাবে বিভিন্ন তথ্যের উল্লেখ করেন না। তাদের উল্লিখিত তথ্য এবং রেফারেন্সের সত্যতা যাচাই করে নেওয়া উচিত। এতে করে নিয়োগকর্তারা নিশ্চিত হতে পারবেন যে কে যোগ্য এবং সঠিক প্রার্থীকে বাছাই করতে পারবেন যারা প্রতিষ্ঠানের জন্যও হবে মানানসই।
এখনকার দিনে, এতো মানুষের ভীড়ে আসল ট্যালেন্ট খুজে বের করা অনেক কষ্টসাধ্য। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান-ই এমন কর্মী চান যিনি তাদের এবং প্রতিষ্ঠানের জন্যে বয়ে নিয়ে আসবে সর্বাধিক লাভ কেননা কর্মীরাই হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সঠিক প্রার্থী নির্ধারণের মাধ্যমে নিয়োগকর্তারা দৈনন্দিন সুইফট অপারেশন পরিচালনার মাধ্যমে নিশ্চিত করতে পারেন কম খরচ এবং বেশি লাভ।
বাংলাদেশের বাস্তবতা
বর্তমান বাংলাদেশে দক্ষের চেয়ে অদক্ষ জনশক্তি বেশী এবং দক্ষ জনশক্তি বাছাই প্রক্রিয়াও বেশ জটিল। আর এজন্য দায়ী আমাদের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা। সরকারি কোন প্রতিষ্ঠানে প্রাকটিকালি কোনকিছুই শিখানো হয় না। বর্তমানে সার্টিফিকেট দ্বারা কিছু বিচার করা কঠিন।
ভাল লোকজন প্রাইভেট সেক্টরে আসতে চায় না। কারণ সামাজিক অবস্থা। বিয়ের বাজারে ১লক্ষ টাকা বেতন পাওয়া ছেলের চাইতে সরকারি একজন পিয়নের মূল্য বেশী। আর একটা বড় কারন মালিক পক্ষ, এরা দেশী লোকদের মূল্যায়ন করে না।