প্রাতিষ্ঠানিক ব্রান্ডিং কেন ও কিভাবে?

আনিসুর রহমান এরশাদ

প্রতিষ্ঠানগুলো বেশিরভাগ সময়েই প্রচারে অতিরিক্ত প্রতিশ্রুতি দেয় যা বাস্তবে ক্রেতাদের দিতে পারে না।  নতুন প্রতিষ্ঠানকে মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলতে হলে উদ্যোক্তাদের আগে বিশ্বাস অর্জনে সক্ষম হতে হয়। ইতিবাচক ব্রান্ডিং একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সফল করে তুলতে পারে, লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হতে পারে।

পরিকল্পনা

এজন্য কিছু কর্মসূচির পরিকল্পনা করুন, উদ্দেশ্য নির্ধারণ করুন, বাস্তবায়নের ভালো উপায় খুঁজুন, কিছু উপযুক্ত মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করুন, তাদের মতামত জানুন এবং আলোচনা করুন। অভীষ্ট জনগোষ্ঠী নির্ধারণ করুন, তাদের কাছে পৌঁছার সঠিক পদ্ধতি জানুন, প্রয়োজনীয় বার্তা পৌঁছায়ে দিন।

যোগাযোগ

সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী, স্টেকহোল্ডার, বিশেষজ্ঞ, সংগঠন ও গণমাধ্যমের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করুন এবং প্রতিনিয়ত যোগাযোগ বৃদ্ধি করে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করুন।এমন যাতে না হয়- আপনি আপনার জরুরি প্রয়োজনেই শুধু যোগাযোগ করেন; এর মাধ্যমে সম্পর্ক হয় না।

বার্তা

বার্তা নির্ধারণে শ্রোতা-দর্শকের কাছ থেকে আপনি কী পেতে চান তা খেয়াল করুন। সবার প্রতিক্রিয়া এক রকম হবে না, হবে ভিন্ন ভিন্ন। তাই পরিকল্পনাতেই একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মূল বার্তা রাখুন। কাজ ও অবদান সম্পর্কে কিংবা পণ্য বা সেবার গুরুত্ব সম্পর্কে প্রচারে ভাবুন  তা ভাবমূর্তি উজ্জল করবে কিনা, সম্মান বৃদ্ধি করবে কিনা।

নিয়মিত

এক্ষেত্রে এমন কৌশল নির্ধারণ করতে হবে অভীষ্ট জনগোষ্ঠীর কাছে আপনার বার্তাও পৌঁছে আবার তাদের মনও ছুঁয়ে যায়। আর ধারাবাহিকভাবে নিয়মিত চালিয়ে যেতে হবে, হঠাৎ খুব তোড়জোর আবার অনেকদিন কোনো তৎপরতা নেই- এমন হলে হবে না ।

গ্রহণযোগ্যতা

বার্তা পাঠাতে গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, প্রকাশনা ব্যবহার করুন। মুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলুন। গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করবে এমন তথ্যের উৎস বানান। প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে একজনকে  মুখপাত্র হিসাবে গড়ে তুলুন; নানাজন নানান ভাবে প্রচারণায় আসলে মানুষের মনে স্থায়ীভাবে দাগ কাটে না।

সমন্বয়

অন্যদের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করুন, দৃশ্যমানতা বাড়ান, কর্মসূচি ও সেবা বাড়ান, ভাবমূর্তি উন্নত করুন, জনসংযোগ বাড়ান, নিজের ও অন্যদের উৎসাহ ধরে রাখুন, সঠিক লোকজন বাছাই করুন, সমধর্মীরা কী করছে জানুন, প্রশ্ন করুন, অন্যকে গুরুত্ব দিয়ে কথা দিলে কথা রাখুন, কী ঘটছে বা ঘটতে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত তা জানার চেষ্টা করুন, অতি উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা না রেখে বাস্তবসম্মত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করুন।

সুনাম

সময়সীমা নির্ধারণসহ একটি লিখিত বার্ষিক পরিকল্পনা রাখুন। যখনকার প্রেক্ষাপটে যেটি সবচেয়ে কার্যকর সেটাই করুন। পণ্য বা সেবা সম্পর্কে জানালে স্থান ও মূল্যও জানান। প্রস্তাবনার বিপরীতে কী প্রত্যাশা করেন, কিভাবে গ্রাহকদের প্রস্তাবিত পণ্য-সেবা সম্পর্কে বলবেন, ইতিবাচক সুনাম তৈরি করবেন- ভেবেচিন্তে ঠিক করুন। মনে রাখবেন- বিজ্ঞাপন দৃশ্যমানতা তৈরি করে, কিন্তু এটা সুনাম তৈরি নাও করতে পারে।

ব্রান্ডিং

ব্রান্ডিং মানে হচ্ছে ‘কমোডিটি উইথ আইডেন্টিটি’। এখানে কমোডিটি হচ্ছে প্রয়োজনীয় জিনিস, আর আইডেন্টিটি হচ্ছে পরিচিতি। বার্তাগ্রাহকের  মনে একটি অনন্য নাম এবং পরিচিতি তৈরি করা ব্র্যান্ডিং। গ্রহিতার প্রতি পণ্যের মান ও সেবার প্রতিশ্রুতি ব্র্যান্ডিং। সাধারণত ব্র্যান্ড বলতে কোন একটি পণ্য বা প্রতিষ্ঠানের লোগো, প্রতীক, নাম ইত্যাদিকে বুঝে থাকি।

উপস্থাপন

আমেরিকান মার্কেট এসোসিয়েশনের মতে, ব্র্যান্ড এমন কোন নাম, শব্দ, ডিজাইন, প্রতীক বা অন্য কোন ফিচার- যা কোন একজন বিক্রেতার পণ্য বা সেবাকে অন্যান্য পণ্য বা সেবা থেকে আলাদাভাবে উপস্থাপন করে। অর্থাৎ ব্র্যান্ড মূলত বাজারে আপনার পণ্য বা প্রতিষ্ঠানকে আলাদা এবং স্বকীয় একটা অবস্থান দেয়।

আস্থা

সঠিক-সুপরিকল্পিত-ভালো ব্র্যান্ডিং মানে প্রতিযোগিতার বাজারেও ভালো করা, মানুষকে আকৃষ্ট করতে পারা, সন্তুষ্ট করে নিয়মিত গ্রহণে আগ্রহী করা, সেবা ও মানের প্রতি আস্থা তৈরি করা। গতানুগতিক মার্কেটিংয়ে টার্গেটকৃতকে চাপ প্রয়োগ করা হয়, কিনতে বা নিতে উদ্বুদ্ধ করা হয়, অন্য সবার থেকে সেরা বলে প্রলুব্ধও করা হয়। ব্রান্ডিংয়ে পুশ না করে পুল করে, প্রলুব্ধ না করে আকৃষ্ট করে, তুলে ধরে কি কি দিচ্ছে এবং তার বৈশিষ্ট্য কি।

প্রয়োজন

ব্র্যান্ডিং করতে চাইলে জানতে হবে ব্র্যান্ডিং কিভাবে করতে হবে, কি কি জিনিস ব্র্যান্ডিং করার জন্য প্রয়োজনীয়। ব্র্যান্ড হিসেবে দাড় করাতে ঠিক করতে হবে কি নিয়ে কাজ করবেন, কি দিতে চান বা নেওয়াতে চান। একটি নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির হলে সেটার ব্র্যান্ডিং এক রকম হবে, আবার বিভিন্ন ক্যাটাগরির হলে সেটার ব্র্যান্ডিং অন্যরকম হবে। পণ্য-সেবার ব্র্যান্ডিং করলে তা একই ক্যাটাগরির হলে ভালো হয়। আর বিভিন্ন ক্যাটাগরির হলে প্রতিষ্ঠানকে ব্র্যান্ড হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করুন।

 নাম

প্রথমেই মানানসই ও উপযুক্ত নাম বাছাই করুন; উচ্চবিত্তদেরকে টার্গেট হিসেবে নিলে ইংরেজি নাম রাখুন, আর বাংলা নাম দিতে চাইলে এমন নাম নির্বাচন করুন যেটায় বিলাসী একটা ভাব আছে।

স্লোগান

সেবা, মান ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানাতে একটা উপযুক্ত “স্লোগান” তৈরি করুন। যেমন একাত্তর টেলিভিশন এর স্লোগান “সংবাদ নয়-সংযোগ”, নাইকি ব্র্যান্ড এর স্লোগান হচ্ছে “ডু ইট”, নোকিয়া ব্র্যান্ড এর স্লোগান “কানেক্টিং পিপল”।

সহজেই মানুষের কাছে নিজের ব্র্যান্ডকে পরিচিত করতে মানানসই এবং আকর্ষণীয় লোগো তৈরি করুন; যেটা সহজেই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। প্রফেশনাল কাউকে দিয়ে লোগো ডিজাইন করে নিন।

ওয়েবসাইট

ওয়েবসাইট হলেই হবে না, ডিজাইনটাও উপযুক্ত হতে হবে। এসব কোনো কিছুর ক্ষেত্রেই ডিজাইন নকল করতে যাবেন না। ডিজাইন ইউনিক হলে সেটা কাস্টোমারের মনে গেথে থাকবে এবং পরবর্তীতে সে পুনরায় সাইটে আসবে। কমন ডিজাইন হলে মনে রাখা কঠিন হবে।

ইউনিক

ব্র্যান্ড কখনো কমন বা সাধারন পর্যায়ে পরে না, তার সব কিছুই ইউনিক হয়।

ট্রেডমার্ক

ইউনিক নাম, লোগো এবং স্লোগান তৈরির পর ব্র্যান্ড এর নাম বা লোগো ট্রেডমার্ক রেজিস্টার্ড করে ফেলুন।

প্রচার

কোম্পানির প্রোফাইল, ভিজিটিং কার্ড, সিল, প্যাড, রশিদ সব ক্ষেত্রেই নতুন নজরকারা ডিজাইন রাখুন যাতে সব কিছুতেই আপনার লোগো ও নাম ছড়িয়ে যায়।

সামাজিক মূল্য

ব্র্যান্ডিং একটি লম্বা এবং নিয়মিত প্রক্রিয়া। বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পৃষ্ঠপোষকতা, সামাজিক মেলামেশাতে অনেক নাম শুনেন; এগুলো সবই ব্র্যান্ডিংয়ের মধ্যে পড়ে। এছাড়া উপস্থাপনার ধরন, গ্রহিতার অভিজ্ঞতাও ব্র্যান্ডিং! ভালো-সফল ব্র্যান্ডিং পণ্য-সেবা বা প্রতিষ্ঠানকে মানুষের মধ্যে আলাদাভাবে পরিচিত করে, ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতায় আলাদা অবস্থান দেয়, ক্রেতা-সেবা গ্রহিতার সাথে প্রতিষ্ঠানের আবেগময়-বিশ্বস্ততার সম্পর্ক তৈরি করে, গুণাগুণ ও বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হওয়ায় বেছে নেওয়া সহজ হয়, দক্ষ-মেধাবী-সৃজনশীল-ভালো কর্মী আকৃষ্ট করতেও সহায়তা করে, অনেকের আকাঙ্ক্ষিত-স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে এবং একটি সামাজিক মূল্য তৈরি করে।

উপহার

ইউনিক বা অনন্য নাম এবং পরিচিতি তৈরি করা ব্র্যান্ডিং; যা কাস্টমারের কাছে বিশেষ কিছু। কোম্পানির নাম, লোগো এবং ওয়েবসাইটের ডিজাইনের রঙের সাথে মিলিয়ে যতটা সম্ভব সুন্দর এবং আকর্ষণীয় উপস্থাপনা-পরিবেশনার ব্যবস্থা করতে হবে। সস্তা ব্র্যান্ড হয়ে কোন সুফল পাবেন না। কেয়ার সার্ভিস অবশ্যই ভাল রাখবেন যাতে কেউ কোন কারনে বিরক্ত বা অসন্তুষ্ট না হয়। পছন্দ না হলে ভদ্রতার সাথে রিটার্নের ব্যবস্থা করুন, গছিয়ে-চাপিয়ে দেবার চেষ্টা করবেন না। বিশেষ উপলক্ষগুলোতে ছোটখাট উপহার দেবার চেষ্টা করুন, এতে করে সে নিজের সাথে সম্পর্কিত মনে করবে।

দায়িত্ব দেয়া

প্রতিষ্ঠানের ব্রান্ডিংয়ের জন্য উপযুক্ত কাউকে দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। যিনি ইভেন্টের প্রেসরিলিজ তৈরি, প্রকাশ ও প্রচারের ব্যবস্থা করবেন। প্রয়োজনীয় প্রেস কনফারেন্স এবং প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করবেন। প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্তাব্যক্তিদের মিডিয়ায় ইন্টারভিউ প্রচার ও প্রকাশের ব্যবস্থা করবেন। প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড, সাফল্য, অর্জন, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, ইত্যাদির উপর ফিচার প্রতিবেদন তৈরি ও প্রকাশের ব্যবস্থা করবেন।

বিজ্ঞাপন

টিভি চ্যানেল, জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা, বেতার, এফএম রেডিও, কমিউনিটি রেডিও, অনলাইন টিভি, অনলাইন নিউজপোর্টাল, ম্যাগাজিন, অনলাইন মিডিয়া, বিলবোর্ড, স্যোসাল মিডিয়ার জন্য সময়পোযোগী বিজ্ঞাপন ম্যাটার তৈরি ও প্রচারের ব্যবস্থা করবেন।

স্পন্সর

ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রতিষ্ঠানের স্বার্থসংশ্লিষ্ট স্ক্রল প্রচার, জনগণের আগ্রহ আছে এমন সৃজনশীল বিভিন্ন অনুষ্ঠান, টক শো, রিয়েলিটি শো, স্পোর্টস ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের নামে স্পন্সর করবেন।

জনসংযোগ

মিডিয়াতে সরাসরি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন প্রচার করতে না চাইলে জনসংযোগমূলক বিজ্ঞাপন প্রচার করবেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মাদকের কুফল, সহিংসতা, জঙ্গিবাদ, নারী নির্যাতনবিরোধী, ইভটিজিং, কিশোর গ্যং, ফেসবুকের কুফল, যুবসমাজের নৈতিক স্খলনজনিত বিষয়ক প্রচারণা, দেশপ্রেম ও মানবিক মূল্যবোধসহ সামাজিক সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন প্রতিষ্ঠানের সৌজন্যে প্রচার করে প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনগণের মনোযোগ আকর্ষণ করবেন। প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ কি ভাবছে, প্রতিষ্ঠানের কাছে তাদের প্রত্যাশা, পরামর্শ, ফিডব্যাক জানতে জনমত জরিপ, সরাসরি মিথস্ক্রিয়ার উদ্যোগ নেবেন।

জনসম্পৃক্ততা

প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর পাশাপাশি তাদের একাত্ম্য করা নিয়ে ভাববেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমসাময়িক যেকোন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর উপর জনমত গঠন এবং পলিসি নির্ধারণের জন্য সেমিনার, ডায়ালগ, সিম্পোজিয়াম, ওয়ার্কশপ ইত্যাদি নিয়মিত আয়োজন করবেন। এতে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত সম্মানিত অতিথিদের মিডিয়া কভারেজের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানও বাড়তি কভারেজ পেয়ে থাকে। ফলে জনমনে প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়।

সিএসআর

যিনি মুক্তিযুদ্ধ, শিক্ষা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনীতি, খেলাধূলা, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা, আলোকিত মানুষসহ সমাজের সকল পেশায় অসামান্য অবদান ও বীরত্বগাঁথা, কৃতিমান বরেণ্য ব্যক্তিবর্গের জন্য প্রতিষ্ঠানের সৌজন্যে আজীবন সম্মাননা পদক চালু করবেন। এতে প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের সম্মান ও আস্থা বাড়বে। শিক্ষা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে নিয়মিত প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ, উদযাপন ছাড়াও কর্পোরেট স্যোশাল রেসপনসিবিলিটি (সিএসআর)-এর আওতায় দুস্থ, সুবিধাবঞ্চিত ও আর্তমানবতার সেবায় প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বাড়াবেন।

সুসর্ম্পক

এতে করে প্রতিষ্ঠানের সুনাম বৃদ্ধি পাবে। সংবাদপত্র, সাংবাদিক, গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে জনসংযোগ কর্মকর্তার সুসর্ম্পক ও নিবিড় যোগাযোগ রাখবেন। তাদেরকে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানাবেন এবং সাধ্যানুযায়ী আথিত্য দেবেন। এতে গণমাধ্যম কর্মিগণ উক্ত প্রতিষ্ঠানকে মনে রাখবে এবং কোন সংবাদ পরিবেশনের সময় প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে লিখতেও পারে, অন্যদিকে কখনও কোন খারাপ পরিস্থিতির উদ্ভব হলে জনসংযোগ কর্মকর্তার সঙ্গে সুসস্পর্কের কারণে উক্ত গণমাধ্যম কর্মী যথাসম্ভব আপনার প্রতিষ্ঠানকে ছাড় দিয়ে লিখতে পারে অথবা এড়িয়েও যেতে পারে।

যিনি সাংবাদিক, সংবাদপত্র, মিডিয়া মালিকদের সংগঠন যেমন প্রেসক্লাব, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটি, ইকনোমিক রিপোর্টাস ফোরাম, কূটনৈতিক রিপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন, ক্রাইম রিপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন, ল’ রিপোর্টাস ফোরাম,  টিভি চ্যানেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, এডিটরস ফোরাম, নিউজ এডিটরস ফোরাম, সাব এডিটরস ফোরাম, নিউজ এজেন্সি, স্পোর্টস্ রিপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন, বিনোদন সাংবাদিক অ্যাসোসিয়েশন, ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ জনসংযোগ সমিতিসহ সাংবাদিক, সংবাদপত্র সংগঠনের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের পক্ষে যোগাযোগ রক্ষা করবেন।

সখ্যতা

এসব সংগঠনের বিভিন্ন সাময়িকী, ম্যাগাজিন, স্যুভেনির ইত্যাদিতে প্রতিষ্ঠানের আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে তাদের পেট্রোনাইজ করবে। এতে উক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে নিজ প্রতিষ্ঠানের সখ্যতা বাড়বে। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন জাতীয় দিবস যেমন- আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসে শহীদ জাতীয় বীরদের শ্রদ্ধা জানিয়ে গণমাধ্যমে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়, উক্ত ক্রোড়পত্র প্রতিষ্ঠানের সৌজন্যে প্রকাশের উদ্যোগ নেবেন। এতে করে ভালো কাজের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততা আছে এমন ইতিবাচক বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছাবে এবং ইমেজ বৃদ্ধি পাবে।

তালিকা

যিনি টেলিভিশনে সংবাদ অথবা সংবাদ শিরোনাম প্রতিষ্ঠানের নামে স্পন্সর করবে। দেশে বিদেশে কোটি কোটি দর্শক সংবাদ দেখে, ফলে সংবাদ শুরুর পূর্বে ও পরে প্রতিষ্ঠানের নাম প্রদর্শিত হওয়ার সুযোগ থাকছে। এছাড়াও ক্রিকেট, ফুটবল, বিপিএল-এর মত জনপ্রিয় খেলাধূলা প্রতিষ্ঠানের সৌজন্যে প্রদর্শন করা যেতে পারে। গণমাধ্যমের মালিক, সম্পাদক, প্রকাশক, বার্তা সম্পাদক, সহ-সম্পাদক, রিপোর্টারসহ সকল কলাকূশলীদের নাম, ঠিকানা, ফোন, ফ্যাক্স, মেইল নাম্বার সংগ্রহ ও আপডেট রাখবেন। প্রতিষ্ঠানের প্রধানের সঙ্গে পরামর্শ করে ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার, ইমেইল, ম্যাসেঞ্জার ইত্যাদিকে জনমত গড়তে অতি দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করবেন।

সচেতনতা

একটু অসচেতনতার জন্য ভুল বার্তা স্যোশাল মিডিয়ায় একবার প্রচার হয়ে গেলে তা মুহুর্তেই ভাইরাল হয়ে প্রতিষ্ঠানের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। শহরের বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মনোরম ও দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য্য, তোরণ, ফোয়ারা, পার্ক, বিলবোর্ড নির্মাণ অথবা সিটি কর্পোরেশনের নির্মিত ভাস্কর্যসমূহে মেয়াদভিত্তিক স্পনসরশীপ নেবেন। যাতে প্রতিষ্ঠানের নাম, লোগো, স্লোগান, ঠিকানা সুক্ষ্মভাবে শোভা পাবে এবং প্রচারিত হবে। বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় স্যুভেনীর যেমন- ডায়েরী, ক্যালেন্ডার, মগ, দেওয়ালঘড়ি, কলম, ব্যাগ, টি-শার্ট, ক্যাপ, টাই, কলমদানী, নোটবুক, কোটপিন, চাবির রিং, কার্ড হোল্ডার, শো-পিচ ইত্যাদি বিশেষ দিবসে টার্গেট গ্রুফের কাছে বিতরণের মাধ্যমেও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত বার্তা পৌঁছে দেবেন।

আপডেট রাখা

প্রতিষ্ঠানের তথ্য মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে ওয়েবসাইট একটি দ্রুত ও কার্যকরি মাধ্যম। তাই এটিকে সবসময় তথ্যবহুল, আকর্ষণীয় ও আপডেট রাখবেন।বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কাছে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম তুলে ধরার জন্য নিউজলেটার, সাময়িকী, ব্রশিয়ার, ম্যাগাজিন, স্টিকার, লিফলেট, ব্যানার, ফেস্টুন প্রস্তুত ও বিতরণ করবেন। মেলা, রোড-শো, র‌্যালি, মানববন্ধন ইত্যাদির মাধ্যমে সরাসরি প্রতিষ্ঠান বা  প্রতিষ্ঠানের পণ্য মানুষের কাছে তুলে ধরবেন।

 মনিটরিং

যিনি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন ম্যাটার তৈরি, বিজ্ঞাপন সিডিউল তৈরি ও অনুমোদন, বিজ্ঞাপন বুকিং, বিজ্ঞাপনটি প্রকাশিত হওয়ার পর পত্রিকায় যথাস্থানে ও দৃশ্যমান জায়গায় ছাপা হল কি না, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় বিজ্ঞাপটি সঠিকভাবে প্রচারিত হল কি না,  বিজ্ঞাপনের পরিমাপ ইঞ্চি-কলাম রেট ঠিক আছে কি না, বিজ্ঞাপনের বিল নির্ভুল আছে কি না এসব খুঁটিনাটি বিষয়গুলো মনিটরিং করবেন। আর্কাইভ বা তথ্যভান্ডার গড়ে তুলবেন। নিয়মিত পত্র পত্রিকার নিউজ ক্লিপিংস, ভিডিও ফুটেজ, বিজ্ঞাপন সংরক্ষণ করবেন, যাতে সময়মত এসব নিউজ ক্লিপিংস, ভিডিও ফুটেজ প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে পুনরায় প্রদর্শন করা যেতে পারে।

পর্যবেক্ষণ

প্রতিদিনের কাজের অংশ হিসেবে নিয়মিত পত্র-পত্রিকা পড়বেন ও পর্যবেক্ষণ করবেন এবং প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বিপক্ষে কোনো সংবাদ পরিবেশিত হলে কর্তৃপক্ষের নজরে আনবেন এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কোন ভুল বা মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন হলে মার্জিত ভাষায় এর প্রতিবাদলিপি তৈরি ও প্রকাশের ব্যবস্থা করবেন।

পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে প্রতিযোগিতায় নিজেদের সামনে এগিয়ে রাখতে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিত্যনতুন প্রযুক্তি, প্রচারণা কৌশল ও বিভিন্ন মাধ্যম নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করে সে সুযোগ কাজে প্রয়োগ করবেন। যিনি প্রতিষ্ঠানের বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছাবেন এবং প্রতিষ্ঠানের সবাইকে নিয়ে প্রতিষ্ঠানের ইমেজ বৃদ্ধির জন্য নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাবেন।

 

 

About পরিবার.নেট

পরিবার বিষয়ক অনলাইন ম্যাগাজিন ‘পরিবার ডটনেট’ এর যাত্রা শুরু ২০১৭ সালে। পরিবার ডটনেট এর উদ্দেশ্য পরিবারকে সময় দান, পরিবারের যত্ন নেয়া, পারস্পরিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করা, পারিবারিক পর্যায়েই বহুবিধ সমস্যা সমাধানের মানসিকতা তৈরি করে সমাজকে সুন্দর করার ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। পরিবার ডটনেট চায়- পারিবারিক সম্পর্কগুলো হবে মজবুত, জীবনে বজায় থাকবে সুষ্ঠুতা, ঘরে ঘরে জ্বলবে আশার আলো, শান্তিময় হবে প্রতিটি গৃহ, প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের মানবিক মান-মর্যাদা-সুখ নিশ্চিত হবে । আগ্রহী যে কেউ পরিবার ডটনেট এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ যেকোনো বিষয়ে লেখা ছাড়াও পাঠাতে পারেন ছবি, ভিডিও ও কার্টুন। নিজের শখ-স্বপ্ন-অনুভূতি-অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে দিতে পারেন সবার মাঝে। কনটেন্টের সাথে আপনার নাম-পরিচয়-ছবিও পাঠাবেন। ইমেইল: poribar.net@gmail.com

View all posts by পরিবার.নেট →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *