ডাঃ লুনা পারভীন
প্রচন্ড গরমে ছোট শিশুটিকে ঘরের বাইরে না নেয়াটাই উত্তম, কারণ ওরাই সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে থাকে পানিশূন্যতা থেকে শুরু করে ত্বকের নানাবিধ সমস্যার! তারপরও যদি একান্ত নিতেই হয় তবে কিছু সাবধানতা পালন করবেন।
দীর্ঘ জার্নিতে সাবধানতা
সাবধানতা ১
বাচ্চার জামাকাপড় যেন পাতলা সূতি কাপড়ের ও হালকা রঙের হয়। এতে গরম কম লাগবে এবং সূতি কাপড় সহজে ঘাম শুষে নেয় বলে, গায়ে গাম জমে ঠান্ডা লাগা বা চামড়ায় ক্ষত বা গামাচি হতে পারবে না। এছাড়া ছাতা, রোদচশমা, সান্সস্ক্রীন লোশন অবশ্যই ব্যবহার করবেন!
সাবধানতা ২
অবশ্যই সাথে পর্যাপ্ত পানি রাখবেন। একটু পর পর বাচ্চার গা মুছে ঠান্ডা করে দিবেন ও পানি পান করাবেন। এতে পানিশূন্যতা থেকে শিশুকে যেমন বাঁচাবে, তেমনি ঘাম হওয়াও ঠেকাবে। পানির পাশাপাশি খাবার হিসেবে ঘরে তেরী তরল কিছু, যেমন পাতলা করে খিচুরী, পায়েস, নরম করে নুডুলস, লেবুর শরবতও সাথে রাখবেন। এতে বাইরের খাবার থেকে জীবাণুর সংক্রমন, ডাইরিয়া হওয়া থেকে শিশুকে রক্ষা করা সম্ভব।
সাবধানতা ৩
টানা অনেকক্ষণ জার্নিতে থাকলে আরেকটি সমস্যা হচ্ছে টয়লেট। চেপে রাখলে পরবর্তীতে প্রশ্রাবে সংক্রমন, পেট ফাঁপা, বাচ্চা অস্থিরতার শিকার হতে পারে। এজন্য ছোট বাচ্চাকে ডায়াপার পরিয়ে নিতে পারেন। আজকাল বিভিন্ন গ্যাস পাম্পে টয়লেট রাখা হয়, হাইওয়ের মোড়ে মোড়ে খাবার হোটেল থাকে, কোথাও গেলে খোঁজখবর নিয়ে যাবেন আগে থেকেই।
সাবধানতা ৪
ধূলোবালি, গরমে বাচ্চার যেন হাঁচিকাশি হতে পারে, জনাকীর্ণ যানবাহনে অন্যের হাঁচিকাশিতেও সংক্রমন ব্যাধির জীবাণু থাকতে পারে এজন্য বাচ্চাকে মাস্ক পরিয়ে নিতে পারেন বা মুখ হাত ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে দিতে পারেন।
এর বাইরেও কিছু জিনিস খেয়াল রাখতে হবে।
যা যা করবেন না
করণীয় ১
অতি উৎসাহে বাচ্চাকে বাইরের চটপটি, আচার, আমড়া, চিপস খাওয়াবেন না। অতিরিক্ত গরমের অজুহাতে ঠান্ডা আইসক্রিম বা বাইরের শরবত খাওয়াবেন না। হঠাৎ গরমে ঠান্ডা খাওয়ালে তাপমাত্রার এই তারতম্যে বাচ্চারা চট করে জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়।
করণীয় ২
বাচ্চাকে বাস বা লঞ্চের উচ্চস্বর যুক্ত শব্দ, গানবাজনা থেকে দূরে রাখবেন। বাচ্চারা কানের উপর চাপ পড়তে পারে, এছাড়া, বাচ্চা ভয় পেয়ে কান্নাকাটি, অস্থিরতা প্রকাশ করতে পারে। যানবাহনে উঠা নামার সময় বাচ্চাকে হাত ছাড়া করবেন না মোটেও, এরকম ভীড়েই চট করে বাচ্চা হারিয়ে যেতে পারে।
করণীয় ৩
কোন কারনে বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়লে, বমি করলে বা জ্বর চলে আসলে ঘাবড়ে যাবেন না! বাচ্চার জামা কাপড় খুলে ভেজা কাপড় দিয়ে গা মুছিয়ে দিবেন। যানবাহনের খোলামেলা ছায়াযুক্ত জায়গায় বসিয়ে নিয়ে বাতাস করতে পারেন পাখা দিয়ে। স্রাইট বা সেভেনআপ জাতীয় রংহীন পানীয় ভেতরের গ্যাসটা বের করে ( বোতলের মুখ খুলে ১৫-২০ মিনিট রাখলেই হয়) দিয়ে একটু একটু করে পাঁচ-দশ মিনিট পর পর খেতে দিলে বমি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এছাড়া ব্যাগে জ্বর, বমির ঔষধ, এন্টিহিস্টামিন, স্যালাইন প্রভৃতি আগেই সাথে নিয়ে রাখতে পারেন সাবধানতার জন্য।
করণীয় ৪
এরপরও যে কোন সমস্যায় প্রয়োজন হলে নিকটস্থ হাসপাতালে বাচ্চা নিয়ে যেতে পাররেন। ছুটির দিনেও ডাক্তার পাবেন সবসময় ইমার্জেন্সী সেবার জন্য।
ধুর, এত ঝামেলা করে কেউ বাচ্চাকে বাসার বাইরে নেয়ার জন্য? চোখ কপালে তুললেন? বিরক্ত হলে? বাচ্চাটা তো একা আপনার নয় , আমার দেশের ভবিষ্যতও ! একে নিয়ে হেলাফেলা করতে আছে? বছরের একটা দিন শিশুকে নিজের গ্রাম, শৈশব দেখাতে করলেনই নাহয় একটু কষ্ট, হবে না বৃথা এ সাবধানতা, সময় হবে না নষ্ট।
লেখক: শিশু বিশেষজ্ঞ, বহির্বিভাগ, ঢাকা শিশু হাসপাতাল, শ্যামলি