আইডিয়া হচ্ছে বীজ। সংগঠন হচ্ছে বীজ বপণের ক্ষেত্র। নেতা-কর্মীরা তার চাষী। আর সেবা হচ্ছে বৃক্ষ। সেবাদাতা-গ্রহীতারা ফুল-ফল। সেবা দিয়ে-নিয়ে তৃপ্ত হাসিমুখগুলোই চূড়ান্ত সৌন্দর্য।
বাস্তবসম্মত উদ্ভাবন বিজনেসে সমৃদ্ধি আনে। ইউনিক আইডিয়া উদ্যোক্তার জীবন বদলে দেয়। স্মার্ট উদ্ভাবনী ধারণা সফলতার দ্বার উন্মোচন করে। আইডিয়ার উন্নয়নে দরকার বাজারের চাহিদা পূরণের সক্ষমতা, সম্ভাবনাময় স্মার্ট সেবা, স্বনির্ভরশীলতা।
কোনো উত্তম আইডিয়া বা চিন্তাকে জিতে আসা কারো মনমেজাজ বা দয়ার উপর নির্ভরশীল হবে না। কারো যদি চমৎকার আইডিয়াও থাকে কিন্তু কিভাবে বাস্তবায়ন করবে তা না বুঝলে তা অর্থহীন হয়ে যায়।
যারা মনে করেন, আইডিয়া বিশাল কিছু, আইডিয়াই সব কিছু। তারা ভুলের মধ্যে আছে। শুধু আইডিয়া দিয়ে আসলে কিছু হয় না। আইডিয়া বাস্তবায়নে আইডিয়া উদ্ভাবক বা উদ্যোক্তার বেশি প্রয়োজন পরিশ্রম আর অর্থ।
উন্নয়নে অর্থ গুরুত্বপূর্ণ হলেও উদ্ভাবনী আইডিয়া তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নতুন ব্যবসার আইডিয়া, নতুন সামাজিক উদ্যোগের আইডিয়া, শিক্ষাখাতে ইনোভেটিভ আইডিয়া- সমস্যার উদ্ভাবনী সমাধানে এসবের কদরতো আছেই!
নয়া নয়া আইডিয়া প্রকল্প আসছে, আইডিয়া ব্যাঙ্ক হচ্ছে, ইনোভেশন টিম তৈরি হচ্ছে, উদ্ভাবনে সক্ষম উদ্যোক্তাদের কাজের ক্ষেত্র বাড়ছে। উদ্ভাবনী আইডিয়াগুলোকে সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে সঠিকভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সহযোগিতাও বাড়ছে।
উদ্যোগে ইনোভেশন আইডিয়া দরকার। যে সমস্যাটি সমাধান করতে চান তা ঠিক করে তার প্রস্তাবিত সমাধান হাজির করার প্রয়োজন হয়। প্রচলিত ব্যবসাতেও নতুন নতুন আইডিয়া যোগ করে তাকে মানুষের চোখে ইউনিক বানানো যায়।
উদ্যোগটি যে সকল ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনে, টিসিভি (টাইম, কস্ট, ভিজিট) মূল্যায়ন, বাস্তবায়নের সময়কাল, টিম সদস্য ঠিক করা, প্রয়োজনীয় রিসোর্স ও রিসোর্সের যোগান তা সুনির্দিষ্ট করা গুরুত্বপূর্ণ।
আইডিয়া নিয়ে পরিশ্রম করতে থাকলে অর্থের সংস্থান হয়ে যায়। অর্থ ছাড়া আইডিয়া বাস্তবায়নও সম্ভব নয়। কোনো আইডিয়া নিয়ে কাজ করতে হলে সেই কাজটিকে আগে ভালোবাসা উচিৎ, অনেক কিছুই ত্যাগ করতে প্রস্তুতি নেয়া উচিত।
আইডিয়া বাস্তবায়নের জন্য নির্ঘুম রাত কাটানো ও আরাম-আয়েশ ত্যাগ করার মানসিকতা থাকতে হয়। বুটস্ট্র্যাপিং বা আত্ম-অর্থসংস্থানও জরুরি। কারণ কিছু সঞ্চয় থাকলে প্রাথমিকভাবে ছোট করে কাজটা শুরু করা যায়। আত্মীয় ও বন্ধুবান্ধবের থেকে নেওয়া অর্থ দিয়েও ছোট ছোট উদ্যোগ শুরু হতে পারে।
খুব অল্প মূলধন দিয়ে যাত্রা শুরু করেও অনেকে সফল হয়েছেন। উদ্যোক্তার যথেষ্ট ভালো আইডিয়া থাকলে, তার ভাবনা-চ্যালেঞ্জগুলো উপস্থাপনের পর একদল ব্যক্তি বা বিনিয়োগকারী আগ্রহী হলে আইডিয়াটিকে বাস্তবে রূপদান করতে টাকা দিতে পারেন। এভাবে ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মাধ্যমেও গড়ে ওঠে ব্যবসা।
শহরকেন্দ্রিক দুর্দান্ত আইডিয়া থাকলে বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত এমন এঞ্জেল ইনভেস্টরসও মিলে যায়। যারা জুতসই উদ্যোগটিতে বিনিয়োগ করার জন্য খুব সূক্ষ্মভাবে বিচার–বিশ্লেষণ করে।
আমাজন ডটকম, স্টারবাকস ও অ্যাপল প্রতিষ্ঠানগুলো খুব ছোট আকারে শুরু হয়ে তহবিলের অভাবে বন্ধ হবার উপক্রম হলে এঞ্জেল ইনভেস্টরসদের মাধ্যমেই ব্যবসার সম্প্রসারণ ঘটে।
হোয়াটসঅ্যাপ, স্ন্যাপ ডট ইনক, কিং ডিজিটাল এন্টারটেইনমেন্ট —এরা ভেঞ্চার ক্যাপিটালের মাধ্যমেই নিজেদের ব্যবসায় অর্থসংস্থান করেছে।
তরুণ উদ্যোক্তাদের ব্যবসাকে সফল করার জন্য বিভিন্ন ‘বিজনেস ইনকিউবেটররা’ এগিয়ে আসছে।
নতুন নতুন আইডিয়া উপস্থাপনের প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ আইডিয়াগুলোর জন্য যে ‘প্রাইজমানি’ দেওয়া হয়, পুরস্কারপ্রাপ্ত সেসব অর্থও ব্যবসা শুরু করতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানও ব্যবসার ঋণের জন্য উদ্যোক্তাদের প্রথম আকর্ষণের জায়গা। তৃণমূল পর্যায়ে উদ্যোক্তা ক্ষুদ্রঋণ নিতে পারে। অনেকে সরকারি প্রকল্প থেকেও তহবিল পাওয়ার চেষ্টা করে।
বাঙালির চাকরি করার মানসিকতাই বেশি হলেও ইদানীং তরুণদের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার বা ব্যবসা করার প্রবণতা বেড়ে গেছে। তবে ইউনিক- দুর্দান্ত-ভালো আইডিয়া, ইনভেস্টমেন্ট ও শিক্ষিত-যোগ্য-মেধাবী নেতৃত্ব থাকা সত্ত্বেও উদ্যোগ ব্যর্থ হচ্ছে।
উদ্যোগে ব্যর্থতার কারণ- আইডিয়ার প্রতি অতি মুগ্ধতা, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ও আবেগ, বাজারের রূঢ় বাস্তবতা-চাহিদা না বুঝে তাড়াহুড়া, সময়োপযোগী না হওয়া, দীর্ঘসূত্রিতায় বাজারে উপযোগিতা শেষ হওয়া, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারা, মার্কেট রিসার্চের মাধ্যমে টার্গেট ঠিক না করা, আপডেটেড না থাকা, পার্টনারদের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব, টিম পারফরম্যান্সের কথা না ভাবা, টিম বন্ডিং ঠিকমতো না হওয়া এবং সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব।
প্রাথমিক পরিকল্পনা কাজ না করলেও বিকল্প পরিকল্পনা বা “প্ল্যান-বি” রাখলে উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়ে না।যদি মানি ম্যানেজমেন্টে দক্ষতা থাকে, সঠিকভাবে বিনিয়োগ করায় মাঝপথেই পুঁজি ফুরিয়ে না যায়, হিসাব রক্ষণ সঠিক হয়, অতিরিক্ত লাভের আশা না থাকে- তাহলে গুডউইল তৈরি হয়।