‘প্রায় প্রতিদিনই আমি নিজেকে একটি প্রশ্ন করি। তা হলো, আমি কি করণীয় সবচেয়ে ভালো-গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করছি যা আমি করতে পারতাম? যখন আমার মনে হয় যে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা নিয়ে কাজ করছি তখন সময় কাটানো নিয়ে ভালো অনুভূতি হয়। আসলে ভালো কাজে মানসিক প্রশান্তি লাভ হয়, অন্যরকম এক আনন্দ পাওয়া যায়। সঠিক পরিশ্রম এনে দিতে পারে সফলতা।
দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে ব্যর্থ হওয়ার একটি মাত্র উপায় আছে আর তা হল ঝুঁকি না নেওয়া। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি না করে সময় কাটানোটা আমার কাছে মূল্যহীন মনে হয়। কেউ কেউ খুব স্মার্ট কিংবা দক্ষ হতে পারে, কিন্তু তারা যদি তাতে বিশ্বাস না রাখে, তাহলে তারা কঠোর পরিশ্রমে আগ্রহী হয় না। দ্রুত এগিয়ে যাও এবং সবকিছু ঘেঁটে দেখো। যতক্ষণ তুমি কোনোকিছু তলিয়ে দেখছ না ততক্ষণ এগিয়েই যাও।
স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে গেলে একদিন না একদিন স্বপ্ন পূরণ হবেই। তবে অবশ্যই বিশ্বাস রাখতে হবে যে তুমি সফল হবে। তবে এই না যে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে অন্যের ক্ষতি করে এগুতে হবে। চলার পথে থাকা সব ধরনের বাঁধা বিপত্তিকে অতিক্রম করে যেতে হবে।
কোনোভাবেই নিজেকে দমিয়ে রাখা যাবে না। সবসময় সামনের দিকে তাকাবেন বা কখনই পিছনের দিকে ঘুরে তাকাবেন না। পিছনে তাকানো মানেই ব্যর্থতা। মানুষ কখনো ইতিহাস পরিবর্তন করতে পারে না, ইতিহাস গড়তে পারে। তাই সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে যান।
আমার লক্ষ্য শুধু একটি কোম্পানি গড়ে তোলা না। বেশিরভাগ ব্যক্তিই এর ভুল ব্যাখ্যা করে থাকেন। আমার কাছে লক্ষ্য হলো- মানুষের প্রয়োজনে এমন কিছু করা যা পুরো পৃথিবীটাকে বদলে দিতে পারে। ফেসবুক যদিও আমার একটি স্বেচ্ছাচারী কাজ তবুও আমি এমন একটি চক্রে সবসময় থেকেছি যা পুরো বিশ্ববাসীকে ঘিরে চলছে। আমি জানি এটা ছিল অনেক কঠিন একটি কাজ, তারপরও আমি চেয়েছি বিশ্ববাসীর সামাজিক জীবনকে উন্নত করতে। বিশ্বকে মানুষের কাছে আরও বেশি উন্মুক্ত করা নিতান্তই এক রাতের বিষয় না, কমপক্ষে ১০-১৫ বছরের বিষয়। ঝুঁকি নেয়াটা কখনোই ঝুঁকিপূর্ণ নয়। শুধু একটিমাত্র পদ্ধতি অবলম্বন করে বিশ্বকে অবশ্যই পরিবর্তন করাটা সম্ভব, আর তা ঝুঁকি নেয়া।
আমরা মানুষের সম্পর্কে কী জানতে চাই, সেটি প্রশ্ন না। প্রশ্ন হলো মানুষ তাদের সম্পর্কে কতটুকু জানাতে চায়। আমি আমার ডর্ম রুমে ফেসবুকের কোড লিখেছি এবং সেখান থেকেই ফেসবুক চালু করেছি। প্রতি মাসে ৮৫ ডলারের বিনিময়ে আমি সার্ভার ভাড়া করেছিলাম, এই টাকা জোগাতে আমি সাইটে একটি বিজ্ঞাপন দিয়েছিলাম। আর এখন পর্যন্ত বিজ্ঞাপন দিয়েই আমরা আমাদের খরচ জোগাচ্ছি।
আপনার সামনে একটি কাঠবিড়ালি মারা যাচ্ছে, এটি আপনার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে যেখানে আফ্রিকায় প্রতিনিয়তই মরছে মানুষ। দ্রুত কাজ করে অন্যকে অতিক্রম করুন। আপনি যদি সেটি না পারেন, তাহলে বুঝতে হবে আপনি খুব দ্রুত কাজ করতে পারছেন না। এটা খুবই বিকৃত চিন্তাভাবনা, কিন্তু এর মধ্য দিয়ে আমাকেও যেতে হয়েছে যেখানে মানুষ আমার কাজকে ছোট করে দেখত। তবে এর ফলে আমরা আরও বড় পরিসরে কাজ করে মানুষকে অবাক করে দেয়ার মতো উদ্যম পাই।
আপনার সম্পর্কে একটা মুভিতে কি বলা হলো কিংবা আপনি কী বলছেন, তাতে অন্যরা খুব একটা গুরুত্ব দেবে না। আপনি কী করেছেন, সবাই সেটি দেখতে চায়। কেউই একা সবকিছু করতে জানে না। তবে তুমি যদি একদল কর্মী খুঁজে পাও, অথবা বন্ধু কিংবা পরিবারের কেউ…তবে তারাই তোমাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
অর্থবিত্ত বানাতে নয়, ভালো সেবা প্রদানের মাধ্যমে অর্থ আয়ই লক্ষ্য। কোনো উত্তম আইডিয়া বা চিন্তাকে অবশ্যই জিতে আসতে হবে। উত্তম আইডিয়া বা চিন্তা কারো একার বা কোনো একাধিপত্যকামীর নিয়ন্ত্রণাধীন বা মনমেজাজ বা দয়ার ওপর নির্ভরশীল হবে না। নিখুঁত কাজ প্রয়োজনীয়। তবে শতভাগ নিখুঁত কিন্তু অসমাপ্ত কাজের চেয়ে কিছু ভুলত্রুটিসহ একটি সমাপ্ত কাজ অধিক গুরুত্বপূর্ণ, কাজটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই মুখ্য। পাকাপাকিভাবে কোনো কাজ সমাপ্ত করা যাবে না।
একটি কাজ শেষ করার পরে তার মধ্যে ভুল থাকবেই। বারবার চেষ্টা করে তার উন্নতিসাধন করতে হবে। কেউই ভুলের উর্ধ্বে নয়! লক্ষ্য অর্জনের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ কর বা লক্ষ্যভেদী হও। গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাসমূহ সমাধান করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করাটাই মূখ্য। দ্রুততালে কাজ করা মানে কিছু ভুল করা। কিছু ভঙ্গ না করলে আপনি সম্ভবত তেমন দ্রুতভাবে কর্তব্য পালন করছেন না। বৃহৎ কিছু করা অথবা মহৎ কিছু করা মানেই তো ঝুঁকি নেয়া। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হচ্ছে কোনো ঝুঁকিই না নেয়া।
উন্মুক্ত পৃথিবীই সবথেকে ভালো পৃথিবী। জনগণের হাতে যতবেশি তথ্য থাকবে তারা ততো ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে এবং তাতে ফলাফলও আসবে ভালো। শুধু ব্যবসা করে মুনাফা অর্জন করা নয়, আমরা সবাই খেয়াল রাখি প্রতিদিনের কাজের মাধ্যমে কীভাবে সমাজব্যবস্থায় কোনো পরিবর্তন আনতে পারি, পৃথিবীকে কিছু দিতে পারি।’
ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মার্ক জাকারবার্গ এর বক্তৃতা থেকে