মনসুর আহমেদ রায়হান (শুভ)
২০১৪ এর শেষের দিকে। সদ্য এসএসসি পাস করা এক কিশোর নিজে কিছু করার স্বপ্নে বিভোর।
তখন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও মোবাইলে গান ডাউনলোডের ব্যবসা খুবই দারুণভাবে চলছিল। দেশে 3G নামক দ্রুত গতির ইন্টারনেট আসার আগে এই ব্যবসার নতুন গান বা ছায়াছবির জন্য নির্ভর করতে হত CD ক্যাসেট এর উপরে। ওই সময়ে প্রযুক্তি বন্ধু চায়নার বদৌলতে আস্তে আস্তে দেশের মধ্যবিত্ত পরিবারের সাধ্যের মধ্যে চলে আসে স্মার্টফোন নামক এক জাদুর মেশিন।
সেই কিশোরের হাতেও আসে সেই জাদুর মেশিন। যার সাহায্য দুনিয়া চলে আসে তার হাতের মুঠোয়। এই মেশিনটা হাতে আসার আগেই ইন্টারনেটের জাদুর দুনিয়ায় ফেসবুক সাইটে ছেলেটির আনাগোনা ছিল।
যাই হোক, সেই ছেলেটির নিজে কিছু করার চিন্তা-ভাবনা ছিল প্রবল। জাদুর মেশিন (স্মার্টফোন) দিয়ে গান ও ছবি ইত্যাদি ডাউনলোড করতে শুরু করে। সেসব গান ও ছবি কম্পিউটারের দোকানে বিক্রি করা শুরু করে। এভাবে তার আনাগোনা শুরু হয় ইউটিউভ নামের আরেকটি সাইটে।
সেখান থেকেই তার ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে জানাটা শুরু হয়। অর্থাৎ অনলাইনে যে টাকা আয় করা যায় সেই সম্পর্কে তার ধারণা লাভ হয়। ধারণাকে আরও পোক্ত করতে প্রতিনিয়ত এটা সেটা নিয়ে সে ঘাঁটাঘাঁটি করতে শুরু করে। জানার তীব্র আগ্রহ থাকায় এভাবে জানতে-বুঝতেই কেটে গেল প্রায় ১টি বছর।
সঠিক গাইডলাইনের অভাবে শেখার আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও সে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারছিল না। বলে রাখা ভালো যে সে ইতোমধ্যে নিজের একটা কম্পিউটারের মালিক। সময় পেলেই বন্ধুদের নিয়ে এলাকার একটা চায়ের দোকানে ছেলেটি আড্ডা দিত, গল্পগুজব করত।
সময়টা ২০১৬ সালের প্রথম দিকে। সেদিন ছেলেটি প্রতিদিনের মতো সেখানে গেল। গিয়ে দেখতে পেলো তার চেয়ে বয়সে বড় একজন চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছে। সে উনাকে দেখে যখন চলে আসতে যাচ্ছিল, তখন তার চোখ আটকে গেলো উনার হাতের দিকে। সে দেখতে পেল উনার হাতে একটি ল্যাপটপ এবং উনি খুবই মনোযোগ দিয়ে কি যেন করছেন। ছেলেটি একটু আগ্রহ নিয়ে উনার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাস করলো ভাই কি করেন? উনি তখন উত্তর দিলো- আমি ফ্রিল্যান্সিং করি, আমার একটা বায়ারের কাজ করছি।
ছেলেটা মনে মনে ভাবলো- উনার কাছে হয়তোবা কিছু সাহায্য পাওয়া যেতে পারে। উনাকে এই কথা বলতেই উনি বললেন- তুমি কি কাজটা শিখতে চাও? ছেলেটি বলল- জ্বি! আমি কাজটা শিখতে চাই। কারো কাছ থেকে কাজটি শিখতে পারছি না। শেখার মতো সেই রকমের কাউকে পাচ্ছি না। তখন উনি বললেন- আমি তোমাকে সাহায্য করব, তুমি তোমার মতো কাজ চালিয়ে যাও। ছেলেটি সে মানুষটির কাছ থেকে অনেক সাহায্য এবং উৎসাহ পায়।
আজকে সেই ছেলেটি ফ্রিল্যান্সিং করে অনেক সফল। সে আজকে তার পরিবার এবং নিজের সকল খরচ নিজেই চালায়। তার স্বপ্ন সে একদিন একটি আইটি ফার্ম খুলবে যেখানে সে বেকার যুবকদের কাজের ব্যবস্থা করবে।
প্রিয় পাঠক এতক্ষণ যার কথা পড়ছিলেন সে আর কেউ নয় বরং আমি (লেখক নিজেই)। আমি একসময় ভাবতাম জীবনে আমাকে দিয়ে কিছুই হবে না। আমি যদি একটা ভালো চাকরি না পাই তাহলে হয়তোবা আমি আমার বন্ধুদের থেকে পিছিয়ে পড়ব। কিন্তু আজকে আমি ফ্রিল্যান্সিং করে সফল। এখন আমি অনেক ভালো অবস্থানে আছি।
আগের সেই আমার মতো যারা এখন মনে করছেন জীবনে কিছুই হবে না তাদেরকে বলছি নিজের স্কিল বাড়ান। ফ্রিল্যান্সিংয়ে আসেন। আপনার যদি ভালো স্কিল থাকে তাহলে আপনাকে টাকার পেছনে দৌঁড়াতে হবে না, টাকা আপনার পেছনে দৌঁড়াবে। নিজের স্কিল ডেভেলপ করেন, কাজ-চাকরি আপনাকে খুঁজবে। স্বপ্ন শুধু দেখলে হবে না, স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য পরিশ্রম করতে হবে।
লেখক : ফ্রিল্যান্সার (ডিজিটাল মার্কেটিং) ও ট্রেইনার
অনেক কিছু শিখতে পারলাম
inspired