‘সারা পৃথিবীতে শান্তি স্থাপন করার শুরুটা কিন্তু আমাদের হৃদয় থেকেই। বর্ণ-গোত্র-জাতনির্বিশেষে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিলেই সত্যিকারের শান্তি প্রতিষ্ঠা পায়। ভিন্ন সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য শক্ত বন্ধন তৈরি করে। নানা পেশায় আর কাজে ব্যস্ত সবার স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত করা ও সবার জন্য সুযোগ তৈরি করাই আমাদের লক্ষ্য।
স্বপ্নদর্শীদের স্বপ্ন ছুঁতে চাই। সমাজে অন্যতম শক্তি নারীদের আগ্রহের মধ্য দিয়ে একটি সমাজকে যেকোনো সময়ে বদলে দেওয়া সম্ভব। সবচেয়ে বড় শক্তি তরুণেরাই সমাজের কুসংস্কার আর প্রতিবন্ধকতাগুলোকে এক পাশে রেখে সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি রাখে। পৃথিবী বদলের কারিগর তরুণদেরকেই দায়িত্ব নিতে হবে পৃথিবীর।
পরিবর্তনের জন্য অন্যের ওপর ভরসা করলে কখনোই পরিবর্তন আসবে না, সেটা করার জন্য নিজেদেরই এগিয়ে আসতে হবে। অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়ে যাওয়া সমস্যার একমাত্র সমাধান নয়, কিন্ত তা অবশ্যই সাহস প্রদান করে। চেষ্টা না করার জন্য কোনো অজুহাত হয় না। যেই তিনজন মানুষকে আমি সব থেকে বেশি শ্রদ্ধা করি তারা হলেন- মহাত্মা গান্ধী, আব্রাহাম লিঙ্কন এবং মার্টিন লুথার।
দুনিয়াতে যারা আমাদের শত্রু হয় তাদের প্রথমে খুঁজে বের করা উচিত তারপর তাদের অনুসরণ করা উচিত এবং সবশেষে তাদের পরাজিত করা উচিত। যেইসব মানুষরা তাদের নিজের দেশকে ভালোবাসেন তারা অসম্ভব বাঁধার সম্মুখীন হয়েও এটিকে পরিবর্তন করতে নিশ্চয়ই পারবেন। কখনোই নিজের সাফল্যের কথা নিজে ব্যাখ্যা করবেন না। লক্ষ লক্ষ মানুষের আওয়াজ যারা পরিবর্তন চায়, তাদের প্রত্যেকের ক্ষমতার সামনে কেউ দাঁড়াতে পারবে না।
যদি আপনি সঠিক পথ অনুসরণ করে চলতে থাকেন এবং সেই পথেই সর্বদা অনুসরণ করে চলতে প্রস্তুত থাকেন তাহলে আপনি শেষে নিশ্চই সফল হবেন। তাদের প্রতি ঈর্ষাও করো না, আবার উপহাসও করো না। তারা তাদের কক্ষপথে আর তুমি তোমার কক্ষপথে আছো। বিশ্বাস রাখুন। সামনে এগিয়ে যান। তৈরি করতে থাকুন। নিজের আওয়াজ বাড়াতে থাকুন। প্রতিটি প্রজন্মের ক্ষমতা আছে পৃথিবীকে নতুন করে সাজানোর।
ভয় পেয়ো না। নিজের মন যেটা সায় দেয়, তা-ই করো। যা করতে ভালো লাগে, সহজ লাগে, মনের মতো লাগে, তা-ই করো। শিশুরা কিন্তু এভাবেই ভাবে। দুর্ভাগ্যবশত, অনেক বড় বড় প্রভাবশালী-ক্ষমতাধরেরা জটিল ভাবনা থেকে বেরোতে পারে না। তাই হয়তো আমাদের সমস্যাগুলোও মেটে না।
আমি আশা করব, সব জটিল জটিল তত্ত্ব বাদ দিয়ে তোমরা একেবারে মৌলিক আদর্শের চর্চা করবে। যেমন- সততা, পরিশ্রম, দায়িত্বশীলতা, নিরপেক্ষতা, উদারতা, অন্যকে সম্মান দেখানো। হয়তো সব সময় সব নীতি বাস্তবজীবনে প্রয়োগ করা যাবে না।
চলতে গেলে অনেক ভুল করবে, আমরা সবাই করি। কিন্তু নিজের কাছে কখনো মিথ্যা বোলো না, সময় যতই কঠিন হোক না কেন। সমস্যার কারণ না হয়ে সমাধানের অবলম্বন হয়ে ওঠো। নিজের গণ্ডি গড়ে তোলো। একা কেউ সমাজ বদলাতে পারে না।
এখন যখন সবাই নিজেকে নিয়ে চিন্তিত, তুমিও ভাবতে পারো, আপাতত শুধু নিজেকে আর নিজের পরিবার নিয়ে ভাবলেই চলবে। কিন্তু আমরা যদি আবার সুস্থ পৃথিবীটাকে ফেরত চাই, দুঃসময় শেষ করতে চাই, চাকরি-শিক্ষার সমান সুযোগ চাই, যদি পরিবেশকে রক্ষা করতে চাই, ভবিষ্যতের মহামারিকে আগেই রুখে দিতে চাই- তাহলে আমাদের ধর্ম, বর্ণ, জাতিনির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে ভাবতে হবে, এক হয়ে কাজ করতে হবে।
অনেককেই বলতে শুনবে, ফেলে আসা দিনগুলো কতই না ভালো ছিল। এই কথায় কান দিয়ো না। পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষ, প্রত্যেকটা জিনিস আগের চেয়েও একে অপরের সঙ্গে বেশি সম্পর্কযুক্ত। দেয়াল তুলে দিলেই এই সম্পর্ক ভেঙে যাবে না। তথ্য–প্রমাণ-কারণ-যুক্তি-বিজ্ঞানের জ্ঞান…জীবনে এসবের গুরুত্ব আছে। তুমি কী বলছ তুমি যদি না জানো, সেটা তোমার ‘স্মার্টনেস’ নয়।
আমি বলছি না ঠাণ্ডা মাথায় ভাবা এবং লিখিত প্রমাণের চেয়ে আবেগ, বিশ্বাস, ভালোবাসা, আনুগত্য- এসবের গুরুত্ব কম। আমি শুধু বলছি মানুষের এসব গুণ তখনই ঠিকভাবে কাজ করে যখন আমরা পরিষ্কারভাবে ভাবতে শিখি। আর সেটা অর্জন করতে হলে, সবার জন্য ভালো এমন কিছু করতে হলে, আমাদের মাথাকে কাজে লাগাতে হবে।
রাজনীতিতে এবং জীবনে- দুই ক্ষেত্রেই অজ্ঞতা চলে না। এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না, তুমি যে বিষয়ে কথা বলছ, সে বিষয়ে তুমি জানো না। যখন তুমি কোনো একজন মানুষকে ভিন্নভাবে বিচার করো সে কারো কী ক্ষতি করছে তা না দেখে বরং সে শুধু অন্যরকম এজন্যে, তখনই স্বাধীনতা হুমকির সম্মুখীন হয়।
প্রতিটি ধর্মের অন্তঃস্থলে একটি নিয়ম আছে, সেটা হলো- আমরা অন্যের প্রতি তা-ই করি যা আমরা অন্যের কাছ থেকে প্রত্যাশা করি। এই সত্য জাতি ও মানুষের সীমানা ছাড়িয়ে গেছে। এ বিশ্বাস নতুন কিছু নয়; এটা কালো, সাদা বা বাদামি নয়; সেটা খ্রিস্টান বা মুসলমান বা ইহুদিও নয়।
এটা হলো সেই বিশ্বাস যা সভ্যতার দোলনাতেই স্পন্দিত হয়েছিল, এবং এটা হল সেই বিশ্বাস যা স্পন্দিত হয়েছে সভ্যতার দোলনায় এবং এখনও যা বিশ্বজুড়ে লাখো-কোটি মানুষের বুকে স্পন্দিত হয়ে চলেছে।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪তম প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বিভিন্ন বক্তৃতা থেকে