সুইজারল্যান্ড অব এশিয়া  কিরগিজস্তান

আনিসুর রহমান এরশাদ

মধ্য এশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় মুসলিম অধ্যুষিত একটি সার্বভৌম দেশ। মসজিদের বাতিঘর বলা হয় দেশটিকে। প্রতিবছর গড়ে ৯০টি করে মসজিদ নির্মাণ করে আসছে দেশটি। ১৯৯১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ২৫০০ মসজিদ নির্মাণ করেছে দেশটির সরকার। এসব মসজিদের অধিকাংশই স্থাপত্যশৈলী ও নির্মাণশিল্পে অনন্যতার পরিচয় দিয়েছে। স্বাধীনতা লাভের পূর্বে দেশটিতে মাত্র ৩৯টি মসজিদ ছিল।

মনোমুগ্ধকর ঝর্ণা ধারা এবং ফুলের দেশটার ৯০ শতাংশেরও বেশি অংশ পাহাড়ের উপর। এখানকার পাহাড়ের উপর থেকে সমতলের দৃশ্যগুলো সত্যিই নয়নাভিরাম। প্রাকৃতিকভাবে সৌন্দর্যমন্ডিত দেশটিতে বিভিন্ন সংস্কৃতির সম্মিলন ঘটেছে। সৌন্দর্যমণ্ডিত দেশটিতে হাজারো কমিউনিটি ট্যুরিজম কোম্পানি ভ্রমণকে করে তুলে উপভোগ্য। যেকোনো মানুষকেই মুগ্ধ করার মতো সৌন্দর্যের কারণেই কিরগিজস্তানকে সুইজারল্যান্ড অব এশিয়া বলা হয়। আজ জানাব সুইজারল্যান্ড অব এশিয়া সম্পর্কে।

একনজরে

সরকারি নাম: কিরগিজ প্রজাতন্ত্র
রাজধানী ও বৃহত্তর শহর: বিশকেক
জাতীয়তা : কিরগিজ
সরকার: এক কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ

রাষ্ট্রপতি: সাদির জাপারভ
প্রধানমন্ত্রী: উলুগবেগ মেরিপোভ
আইন-সভা: সুপ্রিম কাউন্সিল
আয়তন: ১ লাখ ৯৯ হাজার ৯৫১ বর্র্গকিলোমিটার (৮৭ তম)

জনসংখ্যা: ৬৫ লাখ ২৪ হাজার ১৯৫ জন (১১১ তম)
মুদ্রা : কিরগিজস্তান সোম (কেজিএস)
সরকারি ভাষা : কিরগিজ

কিরগিজস্তান মধ্য এশিয়ার পূর্বভাগের একটি স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র। এর উত্তরে কাজাখস্তান, পূর্বে গণচীন, দক্ষিণে গণচীন ও তাজিকিস্তান এবং পশ্চিমে উজবেকিস্তান। পর্বতমালার অঞ্চলটির গড় উচ্চতা প্রায় ১,৫০০ মিটার। কিরগিজ অঞ্চলগুলির এক তৃতীয়াংশ তুষার এবং হিমবাহ দ্বারা আচ্ছাদিত। দেশের বৃহত্তম শহরগুলির মধ্যে রয়েছে বিশেকেক, ওশ, করাকোল, জালালাবাদ, আসগান, টোকমোক, বালিকটস্কি, কারাবল্টা এবং নারিন।

ইতিহাস

১৯শ শতকের শেষের দিকে কিরগিজিস্তান রুশ সাম্রাজ্যের অন্তর্গত হয়। ১৯২৪ সালে এটি সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা পায়। ১৯৩৬ সালে এটিকে একটি সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের মর্যাদা দেওয়া হয়। এটি তখন কিরগিজিয়া নামেও পরিচিত ছিল। ১৯৯১ সালে দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে এবং ১৯৯৩ সালে নতুন সংবিধান পাস করে। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের ৩ মার্চ স্বাধীন কিরগিজিস্তানের জাতীয় পতাকা গৃহীত হয়।

রাজনীতি

কিরগিজিস্তানের রাজনীতি একটি অর্ধ-রাষ্ট্রপতিশাসিত প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কাঠামোয় সংঘটিত হয়। রাষ্ট্রপতি হলেন রাষ্ট্রের প্রধান। সরকারপ্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতা সরকারের উপর ন্যস্ত। আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সরকার এবং আইনসভা উভয়ের উপর ন্যস্ত।

ভূ-প্রকৃতি

সুউচ্চ পাহাড়ি ভূ-প্রকৃতি কিরগিজিস্তানের পরিবহন ব্যবস্থার উপর গভীর প্রভাব বিস্তার করেছে। কিরগিজিস্তানের সড়কগুলি খাড়া পাহাড়ী ঢাল বেয়ে সর্পিলাকারে উঠে নেমে চলে গেছে। অনেকসময় এগুলিকে সমুদ্র সমতল থেকে ৩০০০ মিটার উঁচু গিরিপিথের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

রাস্তাগুলি প্রায়ই ভূমি-ধ্বস এবং হিমানী সম্প্রপাতের শিকার হয়। শীতকালে উচ্চ উচ্চতার দূরবর্তী অঞ্চলগুলিতে ভ্রমণ অত্যন্ত দুঃসাধ্য। আরেকটি সমস্যা হল সোভিয়েত আমলে নির্মিত বেশির ভাগ সড়কগুলির মধ্য দিয়ে বর্তমানে আন্তর্জাতিক সীমান্ত চলে গেছে, ফলে এসমস্ত সড়কে সীমান্ত প্রোটোকলগুলি মেনে চলতে গিয়ে অনেক সময় নষ্ট হয়। কিরগিজিস্তানে গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে পরিবহনের মাধ্যম হিসেবে এখনও ঘোড়া ব্যবহৃত হয়।

 জনসংখ্যা

দেশটির মোট জনসংখ্যার ৯০% মুসলিম। অন্যান্য ধর্মাবলম্বী অর্থডক্স খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ও ইহুদি। জাতিগোষ্ঠীর ৭২.৬% কিরগিজ, ১৪.৪% উজবেক, ৬.২% রুশ, ১.১% দুঙগান ও ৫.৫% অন্যান্য। কিরগিজ জনসংখ্যার প্রায় ৭৭% মুসলমান এবং ১৮% খ্রিস্টানও রয়েছে।

জাতি

কিরগিজরা একটি মুসলিম তুর্কীয় জাতি। এরা কিরগিজিস্তানের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ। উজবেক ও রুশ জাতির লোকেরা এখানকার উল্লেখযোগ্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। কিরগিজ নামে পরিচিত তুর্কি ভাষাতে কিরগিজস্তানের অর্ধেকের বেশি লোক কথা বলেন। প্রায় ১৬% লোক রুশ ভাষাতে কথা বলেন। এখানে প্রচলিত অন্যান্য ভাষার মধ্যে আছে উজবেক ভাষা, চীনা ভাষা, মঙ্গোলীয় ভাষা ও উইগুর ভাষা।

অর্থনীতি

জাতীয় ভূখণ্ডে কয়েকটি অরণ্য অঞ্চলে বাদামী ভাল্লুক, লিংকস, নেকড়ে, মার্টেনস, বন্য শুকর, হরিণ, তুষার চিতা, আইব্যাকেস, ঘুড়ি, ফ্যালকন, ধমগল বা শকুনের মতো একটি প্রজাতির সমৃদ্ধ প্রাণী রয়েছে। এই পৃথিবীতে পৃথিবীর বৃহত্তম আখরোট বন রয়েছে। দেশের অর্থনীতি মূলত কৃষিক্ষেত্র, খনন এবং বিভিন্ন পরিষেবার উপর ভিত্তি করে। কিরগিজস্তানের স্বর্ণ, ইউরেনিয়াম, কয়লা, তেল এবং গ্যাসের মজুদ রয়েছে।

বিশকেক

রাজধানী বিশেকেক বেশ মনোরম শহর। বিশ্বখ্যাত সিল্ক রোডের প্রায় ৮০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত বিশেকেক শহরটিও দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। বিশেককের মূল আকর্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে জাতীয় যাদুঘর, বিশাল জাতীয় পতাকা সমেত আলা-টু স্কয়ার, ওশ বাজার, ফ্রাঞ্জ স্ট্যাচু, আর্ট মিউজিয়াম, ক্যাথেড্রাল, মিখাইল-ফ্রুঞ্জ জাদুঘর, কাশকা-স্কি রিসর্ট, মানার মূর্তি, কেন্দ্রীয় মসজিদ, বিজয় স্কয়ার, পানফিলভ পার্ক এবং বিশেকেক পার্ক।

সামরিক ঘাঁটি

কিরগিজস্তানে রাশিয়ার একটি সামরিক ঘাঁটিও রয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর ভৌগোলিকভাবে মধ্য এশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে যে পাঁচ দেশ; তার মধ্যে কিরগিজস্তানকেই সবচেয়ে বেশি গণতান্ত্রিক বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ।

মানাস মহাকাব্য

মানাস মহাকাব্য কিরগিজদের ঐতিহ্যগত গ্রন্থ যা ১৮ শতকের দিকে রচনা করা হলেও লোকবিদ মতে তা আরো পুরানো। এর পটভূমি দাস্ত-ই কিপচাক ও ঐরাত এর অন্তর্র্বতী পর্বতমালার পার্শ্ববর্তী এলাকা, জাঙ্গেরিয়া অঞ্চল থেকে আগত তুর্ক যাযাবরদের ১৭ শতকে ঘটে যাওয়া ঘটনাপ্রবাহ। কিরগিস্তান সরকার ১৯৯৫ সালে মানাস রচনার ১০০০ বছর পূর্তি উৎযাপন করে। এই মহাকাব্যের মহানায়ক এবং তার ঐরাত-শত্রু, জলয় এর বর্ণনা ফার্সি রচনায় ১৭৯২-৯৩ এর দিকে পাওয়া যায়। এই মহাকাব্যটি বিশ্বের সর্ব বৃহৎ, যার মোট লাইনের সংখ্যা ৫,০০,০০০।

খাবার

বিশ্ব বিখ্যাত কিছু কিরগিজ খাবার রয়েছে। বিভিন্ন ধরণের মাংস সবসময় কিরগিজ খাবারের অপরিহার্য অংশ। সর্বাধিক জনপ্রিয় মাংসের খাবারের মধ্যে ঘোড়া-মাংসের কেজি বা চুচুক, ভেড়ার ভাজা কলিজা, বেশবারমাক (চিকন নুডলস সাথে কুচানো মাংস), এবং ঘোড়ার মাংস থেকে তৈরি বিভিন্ন অন্যান্য খাবার। বেশবারমাক কিরগিজদের জাতীয় খাবার। এটা ঘোড়ার মাংস দিয়ে তৈরী হয়। কখনও কখনও মাটন ও গরুর মাংসও তৈরী হয়।

ঘোড়ার মাংস কয়েক ঘন্টা ধরে ঝোলের মধ্যে সিদ্ধ করা হয় এবং ঘরে তৈরী নুডল দিয়ে পরিবেশন করা হয় উপরে ধনিয়া ছড়িয়ে দেওয়া হয়। হাত দিয়ে খাওয়ার কারণে খাবারটিকে পঞ্চ অঙ্গুলীও বলা হয়। শিশুর জন্মদিনে, বিশেষ জন্মদিবসে এবং পরিবারে মৃত্যুশোক পালনে এটা তৈরী করা হয়। মাটন দিয়ে বিশবারমাক তৈরী হলে একটি রান্না করা ভেড়ার মাথা টেবিলে সবথেকে সম্মানিত অতিথির সামনে পরিবেশন করা হয়। প্রধান অতিথি মাথা থেকে বিভিন্ন অংশ কেটে অন্যান্যদের পরিবেশন করেন।

কুউরদাক মাংস দিয়ে তৈরী প্রধান খাবারের মধ্যে একটি। শাশলিক, কাঁচা কাটা পেঁয়াজ দিয়ে কয়লার আগুনে গ্রিল করা মাটন যা রেস্তোরা এবং ফুটপাতের দোকানগুলিতে প্রায়শই বিক্রি হয়। রান্নার পূর্বে মাংস ঘন্টার বেশী মশলা মাখিয়ে রাখা হয়। গরুর মাংস, মুরগীর মাংস, এবং মাছ থেকেও শাশলিক তৈরি করা যেতে পারে। প্রতিটি শাশলিকে মাংস ও চর্বির অনুপাত ১:১ থাকে। শর্পো বা সর্পো হচ্ছে মাংসের স্যুপ।

পানীয়

একটি জনপ্রিয় কিরগিজ পানীয় হচ্ছে কিমিজ। এটা সামান্য এলকোহলিক যা ঘোটকীর দুধ থেকে পাচনের মাধ্যমে তৈরী করা হয়। এই পানীয়টি ইউরেশীয় যাযাবর সংস্কৃতির নিদর্শন হিসেবে গণ্য করা হয়। এটি কাজাখস্তান এবং মঙ্গোলিয়াতেও পান করা হয়। নতুন কিমিজ শুধুমাত্র গ্রীষ্মকালে পাওয়া যায়, প্রায় মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত, যখন এটি সাধারণত পর্বত এলাকার পথপার্শ্বে পাওয়া যায়। বোতলজাত কিমিজ দেশের সব খাদ্যের দোকানে সারা বছর পাওয়া যায়।

সংস্কৃতি

কিরগিজিস্তানের জনগণ খুব চা-পাগল। তারা চায়ের এত ভক্ত যে পানি কী, তা জানে না বললেই চলে। প্রত্যেকে সঙ্গে করে চা রাখেন। অন্যান্য দেশের মানুষ যেমন রাখে পানীয় জল। হ্যান্ডস্যাক কিরগিজিস্তানের জনগণের নিকট অত্যন্ত প্রিয় ও মজ্জাগত আচরণ। একজন আর একজনের সঙ্গে দেখা হলেই হ্যান্ডস্যাক করে। এমনকি কর্মস্থলে বা অন্য কোথাও একজন লোকের সঙ্গে দৈনিক যতবারই দেখা হোক না কেন, হ্যান্ডস্যাক করবেই।

তবে মেয়েদের সঙ্গে পুরুষের হ্যান্ডস্যাক করার চেষ্টা অভদ্র ও অশোভনীয় বলে গণ্য করা হয়। অন্যান্য দিক হতে নিরাপদ হলেও এখানে রাস্তায় কোনো লাইট দেখা যায় না। এমনকি রাজধানী বিশকেক শহরের রাস্তাঘাটও সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে অন্ধকারে ঢেকে যায়। রাতে রাস্তায় লাইট জ্বালানো শক্তির অপচয় মনে করা হয়।

গৌরব

বিসকেক শহরকে অনেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সবুজতম শহর বলে থাকেন। যেদিকে চোখ যায়, সেদিকে অপার সবুজে মনপ্রাণ জুড়িয়ে যায়। পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘতম মহাকাব্যের গৌরব কিরগিজদেরই প্রাপ্য। তাদের মহাকাব্য পৃথিবীর দীর্ঘতম মহাকাব্য এবং এটি ৫ লক্ষ লাইন নিয়ে রচিত। পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ও উচুস্থানে অবস্থিত হ্রদ ইসিক-কুল কিরগিজিস্তানে অবস্থিত। এটাকে পার্ল অব তিয়েন সান বলা হয়।

কিরিগজ ভাষায় ইসিক-কুল শব্দের অর্থ উষ্ণ-হ্রদ। এ হ্রদের পানি প্রচণ্ড শীতের সময়েও বরফ হয় না। তাই এর নামক ইসিক-কুল। কিরগিজিস্তানে অবস্থিত আখরোট বন পৃথিবীর বৃহত্তম প্রাকৃতিক আখরোট বন। এমন অপূর্ব সুন্দর আখরোট বন পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যায় না।

এশিয়ার সর্ববৃহৎ মসজিদ

বর্তমানে কিরগিজ ধর্মীয় বিষয়ক কমিশনে ৩২৩৩টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আনুষ্ঠানিকভাবে নিবন্ধিত রয়েছে। তন্মধ্যে ২৮২২টি ইসলামী সংস্থা, ৩৯৭টি খ্রিষ্টান সংস্থা, ১টি বৌদ্ধ সংস্থা, ১টি ইহুদি সংস্থা ও ১২টি অন্যান্য ধর্মীয় সংস্থা রয়েছে। বিশকেকে রয়েছে মধ্য এশিয়ার সর্ববৃহৎ মসজিদ। মসজিদটি ‘কেন্দ্রীয় ইমাম সেরাহসি মসজিদ’ নামে পরিচিত স্থানীয় জনগণের কাছে। সুবিশাল ও দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদ নির্মাণের যাবতীয় খরচ বহন করেছে তুরস্ক সরকার। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়্যব এরদোগান মসজিদটি উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে দুই দেশের আরও গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ও সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আওশ

কিরগিজস্তানের অত্যন্ত প্রাচীন ও ঐতিহাসিক শহরের নাম ‘আওশ’। এ শহরে বড় বড় আলেম-পণ্ডিত ব্যক্তিরা জন্ম নিয়েছেন। এটি ফারগানার কাছে অবস্থিত। অত্যন্ত উর্বর ও শ্যামিলিমাময়। এ শহরের সঙ্গে অনেক প্রসিদ্ধ ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এর ১০ কিলোমিটার দূর থেকে উজবেকিস্তানের সীমানা শুরু। আন্দোজান ও ফারগানা (হানাফি মাজহাবের ফিকাহের মৌলিক গ্রন্থ ‘হিদায়া’ রচয়িতা জন্মভূমি) এর নিকটবর্তী শহর। আওশ থেকে প্রায় ৭০ মাইল দূরে কিরগিজিস্তানের আওযোজান্দ শহর অবস্থিত, যা আল্লামা কাজি খান (রহ.) ফাতাওয়ায়ে কাজিখান রচয়িতার মাতৃভূমি। যেখানে শামসুল আইম্মা সারখসি (রহ.) কারাগারে বন্দি থেকে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ‘মাবসুত’ কিতাব সংকলন করেন।

আওশ শহরের অদূরে রয়েছে একটি পাহাড়, যাকে ‘সোলায়মান (আ.) এর পহাড়’ বলা হয়। এলাকায় একথা প্রসিদ্ধ আছে যে, কোনো একসময় হজরত সোলায়মান (আ.) এ পাহাড়ে অবস্থান করেছিলেন। পাহাড়ে প্রাচীন একটি ঘর রয়েছে। বলা হয়ে থাকে, এটি বাদশাহ জহির উদ্দিন বাবরের ঘর। হিন্দুস্থান আক্রমণ করার আগে তিনি এটি বানিয়েছিলেন। পাহাড়ের সুড়ঙ্গ সদৃশ একটি গুহায় সরকার একটি জাদুঘর তৈরি করেছে। সেখানে সংরক্ষিত রয়েছে ৩ হাজার বছরের বিভিন্ন নিদর্শন।

ধর্ম

কিরগিজস্তানে ‘মুফতি’ একটি সরকারি পদ, যা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সমমর্যাদার। এ পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিরা ব্যক্তিগত ফতওয়াদানের চেয়ে মসজিদ ও অন্যান্য ধর্মীয় ব্যবস্থাপনার কাজে অধিক নিয়োজিত থাকেন। এ অঞ্চলের আলেমরা শুরু থেকেইে হানাফি মাজহাবের অনুসারী।

মুফতি তাকী উসমানী তার ভ্রমণকাহিনী ‘সফর দর সফর’-এ ওখানকার একটি ধর্মীয় সংস্কৃতির বিষয় তুলে ধরে লিখেন ‘এখানকার লোকদের মধ্যে এই আদব দেখতে পাই যে, আজান শুরু হলে মসজিদের বাইরে যত লোক দাঁড়িয়ে ছিল, সবাই নিজ নিজ জায়গায় বসে পড়ে। আজান শেষ হওয়া পর্যন্ত বসে থাকে। এখানে সাধারণ নিয়ম হলো, আজান শুনে সবাই বসে পড়ে। বসে বসেই আজানের জওয়াব দেয়। ’

 

About পরিবার.নেট

পরিবার বিষয়ক অনলাইন ম্যাগাজিন ‘পরিবার ডটনেট’ এর যাত্রা শুরু ২০১৭ সালে। পরিবার ডটনেট এর উদ্দেশ্য পরিবারকে সময় দান, পরিবারের যত্ন নেয়া, পারস্পরিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করা, পারিবারিক পর্যায়েই বহুবিধ সমস্যা সমাধানের মানসিকতা তৈরি করে সমাজকে সুন্দর করার ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। পরিবার ডটনেট চায়- পারিবারিক সম্পর্কগুলো হবে মজবুত, জীবনে বজায় থাকবে সুষ্ঠুতা, ঘরে ঘরে জ্বলবে আশার আলো, শান্তিময় হবে প্রতিটি গৃহ, প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের মানবিক মান-মর্যাদা-সুখ নিশ্চিত হবে । আগ্রহী যে কেউ পরিবার ডটনেট এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ যেকোনো বিষয়ে লেখা ছাড়াও পাঠাতে পারেন ছবি, ভিডিও ও কার্টুন। নিজের শখ-স্বপ্ন-অনুভূতি-অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে দিতে পারেন সবার মাঝে। কনটেন্টের সাথে আপনার নাম-পরিচয়-ছবিও পাঠাবেন। ইমেইল: poribar.net@gmail.com

View all posts by পরিবার.নেট →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *