গত বছরের ১৫ মার্চ সাভারে আশুলিয়ার বারোইপাড়া গ্রামে অবস্থিত সিসিডিবি হোপ সেন্টারে একটি পিকনিক ও কনফারেন্সে যোগ দিতে সপরিবারে গিয়েছিলাম। দিনটি ছিল শুক্রবার। সাথে থাকা ব্যারিস্টার এরশাদ আহমেদ নিশান ভাইয়ের কাছে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে হামলার কথা প্রথম শুনেছিলাম। তিনি নিউজিল্যান্ডে থাকাকালীন ক্রাইস্টচার্চে ছিলেন। হামলায় নিশান ভাইয়ের পরিচিত একজন বাংলাদেশি প্রবাসীও নিহত হয়েছিলেন। অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়েরা।
নিশান ভাই জুমআ শেষেই চলে গিয়েছিলেন। তবে আমরা সারাদিনই ছিলাম। চলছিল আলোচনা, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তবে আদিফা আর আরিবার দুরন্তপনায় তাদের সামলাতেই আমাকে ব্যস্ত সময় পার করতে হয়েছিল। কখনো ফুল কুড়ানো, কাঁধে ওঠা, ছুটাছুটি, হাঁটতে হাঁটতে কোথাও চলে যাওয়া, খোজাখুঁজি ইত্যাদি।
হোপ ফাউন্ডেশনে রঙিন টেলিভিশন, ইন্টারকম টেলিফোনসহ ৫০টি সুসজ্জিত দুই শয্যা বিশিষ্ট এসি রুম রয়েছে। ১টি সুসজ্জিত ডাবল বিছানার নন এসি রুম রয়েছে যেখানে একসাথে ১০২ জন অতিথি থাোর ব্যবস্থা করতে পারে। রঙিন টেলিভিশনসহ সুসজ্জিত একক শয্যার ৬টি এসি রুম রয়েছে। এই বাংলোতে অতিথিরা পারিবারিক পরিবেশেও থাকতে পারেন এবং বৈঠক ও দলীয় আলোচনা করতে পারেন।
হোপ ফাউন্ডেশনে রিপোর্ট, ম্যাগাজিন, জার্নালসহ প্রায় ৮ হাজার বইয়ে সমৃদ্ধ একটি বড় গ্রন্থাগার রয়েছে। এই গ্রন্থাগারের নাম ‘সুশান্ত অধিকারী স্মৃতি গ্রন্থাগার’। লাইব্রেরির পরিবেশ অত্যন্ত আকর্ষণীয়; এটি বিশাল, প্রশস্ত, পরিষ্কার ও মনোরম। অতিথিদের বিনামূল্যে এই পাঠাগারটি ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বই কেনা ছাড়াও সমমনা সংগঠনগুলিও গ্রন্থাগারটিকে সমৃদ্ধ করার জন্য বই অনুদান দেয়। গবেষণা ও প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে এই গ্রন্থাগারটি ব্যবহার করেন গবেষকরাও। উন্নয়ন, পরিসংখ্যান, সাহিত্য, সাংবাদিকতা, নৃতত্ত্ব, স্বাস্থ্য, ধর্মতত্ত্ব, ইতিহাস, বিজ্ঞান, ভূগোল, গণিত ইত্যাদি নানা বিষয়ে লাইব্রেরিতে অনেকগুলি বই রয়েছে। উন্নয়ন গবেষকরাও বিনামূল্যে এই পাঠাগারটি ব্যবহার করে থাকেন।
সিসিডিবি হোপ ফাউন্ডেশনের কমপক্ষে তিনটি বড় খোলা মাঠ রয়েছে। অতিথিদের অবসর সময়ে এখানে- সেখানে হাঁটা, ফুটবল, ভলি বল, ক্রিকেট ও ব্যাডমিন্টনসহ যে কোনো ধরণের খেলাধুলার আয়োজন করার দুর্দান্ত সুযোগ রয়েছে। অতিথিদের ইনডোর খেলা উপভোগ করার সুযোগ রয়েছে যেমন- কেরাম, দাবা, টেবিল টেনিস, লুডু ইত্যাদি।
হোপ ফাউন্ডেশনের একটি খুব সুন্দর এবং সজ্জিত মুক্ত নাট্যমঞ্চ রয়েছে। মানুষের অবসর সময়ে মজা ও আনন্দ করা প্রয়োজন। অতিথিরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য এই উন্মুক্ত থিয়েটার মঞ্চটি ব্যবহার করতে পারেন। নাটক, গান, নৃত্য ইত্যাদি মঞ্চস্থ করতে পারেন। খেলাধুলা বা অন্য কোনো ইভেন্টের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান করতে পারেন। সংযুক্ত রান্নাঘরসহ দুই অংশ সমেত খুব সুন্দর একটি ডাইনিং হল রয়েছে। যেখানে ১২০ জন একসাথে বসে খেতে পারেন। পুরো ভবন, ডাইনিং, রান্নাঘর ও বাংলো জুড়ে শীতকালে গরম পানির সুবিধাগুলি রয়েছে।
হোপ ফাউন্ডেশনের দুটি উদ্যোগ রয়েছে; একটি হলো ভেন্যু এবং অন্যটি হলো প্রশিক্ষণ কর্মসূচি। ভেন্যুগুলো থেকে ভাড়া নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি স্বাবলম্বী হয়ে দেশের উন্নয়ন অঙ্গনে অবদান রাখে। আর প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে সিসিডিবি এবং এর সহযোগী ও সমমনা সংগঠনের মানবিক ও সাংগঠনিক সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়। এর ভিশন হচ্ছে- সিসিডিবি ও এর সহযোগী-সমমনা সংগঠনগুলি এবং অন্যান্য উন্নয়ন ও কর্পোরেট এজেন্সিগুলির জন্য মানবিক ও সাংগঠনিক সম্ভাবনা বৃদ্ধি করা। মিশন হচ্ছে- ভিশন ও সর্বজনীন নীতি দ্বারা পরিচালিত। সম্ভাব্য টেকসই ক্ষমতা তৈরির প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্বনির্ভর হওয়ার জন্য এবং জনশক্তির দক্ষতা ব্যবহারের জন্য সমান সুযোগ তৈরিতে কাজ করে হোপ ফাউন্ডেশন। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে- হিউম্যান অ্যান্ড অর্গানাইজেশনাল পটেনশিয়াল এনহান্সমেন্ট (এইচওপিই) প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করা। সিসিডিবি ও এর সমমনা সংগঠনের কর্মীদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে এইচপিই; এছাড়াও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কোর্স এবং কর্মশালা প্রদান করে। প্রশিক্ষণ, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনা করার জন্য ব্যক্তিকে প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং কাঠামোগত ও অন্যান্য অবকাঠামোগত সুবিধা সরবরাহ করে।
আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সমসাময়িক ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবেলা করার লক্ষ্যে লক্ষ্যভিত্তিক গোষ্ঠীর সমস্ত সদস্যকে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং উন্নয়ন কর্মীদের প্রয়োজনীয় জ্ঞান এবং দক্ষতা বৃদ্ধি করা। উন্নয়নমূলক কার্যক্রম সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, ওয়ার্কশপগুলির মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধিসহ প্রশিক্ষণ কোর্স পরিচালনা এবং এক্সপোজার ভিজিট ও মাঠ পরিদর্শনের সুবিধা দেয়া। সামাজিক কেন্দ্র ও অনুরূপ প্রকৃতির অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা প্রদান। ট্রাস্টের ধারণাগুলির সাথে মিল রেখে ছায়াছবি, সাময়িকী, বই, বক্তৃতা এবং অন্যান্য পাঠ এবং চিত্রের বিষয়গুলি মুদ্রণ, প্রকাশ ও প্রদর্শন করা। ক্লাস, বক্তৃতা, সম্মেলন, সেমিনার ও প্রতিযোগিতা, প্রশিক্ষণ ফি, ডিপ্লোমা, হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট সার্টিফিকেট কোর্স আয়োজন। ক্লাস, বক্তৃতা, সম্মেলন, সেমিনার ও প্রতিযোগিতা পরিচালনা করা।
আরও ভালো পরিষেবা দেয়া এবং আইনী দৃষ্টিকোণ থেকে প্রাতিষ্ঠানিককরণের লক্ষে ২০০৭ সালের ১ জুলাই থেকে ‘হোপ সেন্টার’ চালু করে হোপ ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট। ট্রাস্টের অন্য উদ্দেশ্যটি ছিল তার লক্ষ্য এবং লক্ষ্যগুলি কার্যকরভাবে অর্জনের জন্য একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা হিসাবে কাজ করা। এটির পরিচালনা কমিটি ৫ জন ট্রাস্টি বোর্ড সদস্য, চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারপারসন, বার্সার এবং ৩ জন সদস্য সমন্বয়ে গঠিত। যোগাযোগ: +8801757411688 রিজার্ভেশন: +8801712997141 ম্যানেজারঃ 01780188105, 01914848743 ওয়েব: www.hopefoundation-bd.org ইমেইল: Hopecenter2005@gmail.com