আনিসুর রহমান এরশাদ
বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন স্থান সংযুক্ত আরব আমিরাত। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম সম্পদশালী দেশ। সমগ্র বিশ্বের পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় গন্তব্য। দেশের প্রতিটি রাজ্যেই রয়েছে কেনাকাটার জন্য বিলাসবহুল শপিং মল, অসংখ্য দর্শনীয় স্থান, হাই-এন্ড রিসোর্ট, সাদা বালির সৈকত, কৃত্রিম দ্বীপ, দৃষ্টিনন্দন গগনচুম্বী ভবন এবং নিরাপত্তা। যা লাখ লাখ পর্যটক আকৃষ্ট করে। জীবনযাত্রার মান অনেক ক্ষেত্রে ইউরোপ আমেরিকার উন্নত দেশগুলোকে পেছনে ফেলেছে অনেক আগে। তাইতো ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ছুটে আসেন লাখ লাখ পর্যটক। আজ জানাব বিশ্ব সম্প্রীতির দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত সম্পর্কে।
একনজরে সংযুক্ত আরব আমিরাত
পুরো নাম : ইউনাইটেড আরব আমিরাত
রাজধানী: আবুধাবি
বৃহত্তর ও জনবহুল শহর: দুবাই
সরকারি ভাষা: আরবি
জাতীয়তাসূচক বিশেষণ: আমিরাতি
স্বাধীনতা লাভ: ২ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে (ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে)
সরকার: যুক্তরাষ্ট্রীয় রাজতন্ত্র
রাষ্ট্রপতি: খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান
প্রধানমন্ত্রী ও উপ-রাষ্ট্রপতি: মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম
আয়তন: ৮৩,৬০০ বর্গকিলোমিটার
জনসংখ্যা: ৯৮ লাখ ৯০ হাজার ৪০০ জন
মুদ্রা: আমিরাতি দিরহাম (এইডি)
সংযুক্ত আরব আমিরাত পশ্চিম এশিয়ার একটি ছোট্ট দেশ। শান্তিপ্রিয় দেশটির একপাশে ওমান, অন্যপাশে সৌদি আরব। উপসাগরীয় অঞ্চলের দিকে কাতার ও ইরান অবস্থিত। মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনৈতিক উদীয়মান দেশটিতে ৭টি আমিরাত আছেন। যথা: আবুধাবি, দুবাই, আজমান, ফুজাইরাহ, রাশ আল খাইমাহ, শারজাহ, উম আল কোয়াইন। দেশটিতে বাস করা মানুষের ৯০ শতাংশই বিদেশী; যারা সব ধরণের অবকাঠামো নির্মাণ এবং দেখাশোনা করে। দেশটি বিশ্ব বাজারে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হচ্ছে। প্রতিযোগিতামূলক ও বিকাশমান অর্থনীতি এখন দেশটির মূল লক্ষ্য।
সামরিক শক্তি
মধ্যপ্রাচ্যের পরাশক্তি হয়ে উঠছে অত্যন্ত ধনী উপসাগরীয় এই রাজতন্ত্রটি। আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক একটি ব্যবসা কেন্দ্র হয়ে ওঠার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে একটি বড় সামরিক শক্তি হয়ে উঠেছে ইউএই। আরব বিশ্বের সবচেয়ে কার্যকরী সামরিক শক্তি। নির্ভীক দেশটির রাজনৈতিক এবং সামরিক উচ্চাভিলাষ রয়েছে। এখন মধ্যপ্রাচ্যের নানা জায়গায় প্রকাশ্যে মাথা গলায়।
লোহিত সাগর অঞ্চল এবং পূর্ব আফ্রিকাতেও ভূমিকা স্পষ্ট। অনেক দেশে অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক খেলোয়াড় হয়ে উঠেছে। আর্থিক সুযোগ সুবিধে দিয়ে কিছু দেশে ‘কিংমেকার‘ হয়েছে। অনেক জায়গায় ‘পিসমেকারের‘ ভূমিকা নিচ্ছে। ইয়েমেন, এরিত্রিয়া এবং সোমালিল্যান্ডে ছোটোখাটো সামরিক ঘাঁটিও স্থাপন করেছে। মিশর, ইয়েমেন, সোমালিয়া ও সৌদি আরবের চারটি বন্দরের পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে ইউএই সরকারের দুবাই-ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৩০০ কোটি ডলারের অস্ত্র কিনছে। এসব অস্ত্রের মধ্যে থাকছে ৫০টি অত্যাধুনিক এফ-৩৫ জঙ্গিবিমান, ১৮টি এমকিউ-৯বি আর্মড ড্রোন এবং আকাশ থেকে আকাশে ও ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র। ফরাসী ট্যাংক কিনেছে। সেনাবাহিনীকে বিদেশে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। নেটো বাহিনীর সমর্থনে ইউরোপে সেনা মোতায়েন করেছে।
আফগানিস্তানে তালেবানের পতনের পরপরই আমিরাতি সৈন্যরা নেটো বাহিনীর সঙ্গী হয়েছে। আমিরাতিরা তখন আফগানিস্তানে স্কুল করে দিয়েছে, মসজিদ বানিয়েছে, খাবার পানির জন্য কুয়ো খুঁড়ে দিয়েছে। ইয়েমেনে ত্রাণ বিতরণ করছে আমিরাতের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। মিশরে ২০১৩ সালে মুরসি সরকারের বিরুদ্ধে সেনাঅভ্যুত্থানে মদত দিয়েছে।
লিবিয়ায় তারা জাতিসংঘ-সমর্থিত সরকারকে উৎখাতে মিলিশিয়া নেতা খলিফা হাফতারকে সাহায্য করছে। অত্যাধুনিক অস্ত্র এবং গোয়েন্দা প্রযুক্তি জোগাড় করতে ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছে, প্রথম রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দিয়েছে। ইসরায়েলে ১২ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগও করবে। গ্রীসের ক্রিট দ্বীপে গ্রীক সেনাবাহিনীর সাথে যৌথ মহড়ার জন্য যুদ্ধজাহাজ এবং যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে।
আমিরাতের মধ্যস্থতায় পাক-ভারত অস্ত্রবিরতি হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ায় ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। ইকোয়েটরিয়াল গিনিতে আমিরাতের মানবিক সহায়তা দিয়েছে। মঙ্গল গ্রহে রকেট পাঠিয়েছে। মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাণিজ্যিক কার্যক্রমও শুরু করেছে। আবুধাবিতে বারাকাহ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আরব বিশ্বের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ স্থাপনা। করোনাভাইরাস সামলেছে। প্রযুক্তির ভিত্তিতে স্থানীয় উৎপাদনে নজর দিচ্ছে।
আবুধাবি
আবুধাবি পশ্চিম এশিয়া তথা মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্র সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনবহুল নগরী। আবুধাবি নগরীটি পারস্য উপসাগরের একটি ছোট ত্রিভুজাকৃতি দ্বীপে অবস্থিত এবং একটি সেতুর মাধ্যমে মূল ভূখণ্ডের সাথে সংযুক্ত। আবুধাবি আঞ্চলিক ও কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যালয়গুলির পাশাপাশি সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকারেরও অবস্থানস্থল। এখানে সুপ্রিম অয়েল কাউন্সিল অবস্থিত এবং এটা আবুধাবির আমিরি পরিবারের বসবাসের স্থান।
আবুধাবির রাষ্ট্রপ্রধান এই পরিবারেরই সদস্য। ত্বরিত গতির উন্নয়ন, নগরায়ন, তেল ও গ্যাস সম্পদের প্রাচুর্য এবং তুলনামূলক উচ্চ মাথাপিছু আয়ের কারণে শহরটি উন্নত ও সমৃদ্ধ মহানগরীতে পরিণত হয়েছে। শহরটি দেশের রাজনৈতিক কেন্দ্র, শিল্পের কেন্দ্র, অন্যতম প্রধান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং বাণিজ্যিক কেন্দ্রও বটে।
আবুধাবি শহরের প্রধান অংশটি আবুধাবি দ্বীপে অবস্থিত তবে মূল ভূখণ্ডেও এর কিছু কিছু অংশ আছে। উদাহরণস্বরূপ- খলিফা সিটি এ, বি, সি; খলিফা সিটি আল রাহা বীচ; আলবাহিয়া সিটি- এ, বি, সি; আল শাহামা, আল রাহবা, বনি ইয়াস, শামখা, আল ওয়াতবা, মুসাফা রেসিডেন্সিয়াল ইত্যাদি। আবুধাবিতে প্রবাসীদের জন্য ‘ক্রিয়েটিভ ভিসা’ প্রকল্প চালু হয়েছে।
বন্দর
আমিরাতে অনেকগুলো বন্দর আছে। যেমন- পোর্ট জায়েদ, মুসাফা পোর্ট, খলিফা পোর্ট ইত্যাদি।
লাইব্রেরী
২০১১ সালে কালচারাল ফাউন্ডেশনকে নতুন করে সাজিয়ে ‘সংযুক্ত আরব আমিরাত পাবলিক লাইব্রেরী এবং কালচারাল সেন্টারে’ রূপদান করা হয়।
স্টেডিয়াম
আবুধাবিতে চারটি ফুটবল স্টেডিয়াম আছে— আল জাজীরা স্টেডিয়াম, আল-ওয়াহদা স্টেডিয়াম, শেখ জায়েদ ফুটবল স্টেডিয়াম (জায়েদ স্পোর্টস সিটি) এবং হাজজা স্টেডিয়াম। জায়েদ স্পোর্টস সিটিতে একটি টেনিস কোর্ট, একটি আইস রিঙ্ক, একটি বাউলিং এ্যালি, এবং এর বাইরের দিকে একটি ক্রিকেট স্টেডিয়াম ‘শেখ জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়াম’ রয়েছে। আবুধাবিতে ক্রিকেট এবং ফুটবল খুবই জনপ্রিয়। তরুণরা বিভিন্ন ফাঁকা মাঠে ফুটবল খেলে থাকে। ‘ডম’ নামে আর একটি জায়গা আছে যেখানে শুধুমাত্র ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হয়।
দুবাই
দুবাই সংযুক্ত আরব আমিরাতের সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে জনবহুল শহর। এটি দুবাই আমিরাতের বাণিজ্যিক রাজধানী। জনপ্রিয় শহর, নিরাপদ শহর। পারস্য উপসাগরের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত, দুবাই একটি বৈশ্বিক শহর এবং মধ্য প্রাচ্যের প্রধান ব্যবসায় কেন্দ্র। এটি যাত্রী এবং পণ্যবাহী বিমানের জন্য একটি বড় বৈশ্বিক পরিবহনের কেন্দ্র।
দুবাই সরাসরি আরব মরুভূমির মধ্যে অবস্থিত। বালি বেশিরভাগই চূর্ণ শেল এবং সূক্ষ্ম প্রবাল নিয়ে গঠিত পরিষ্কার এবং সাদা। শহরের পূর্বদিকে লবণাক্ত উপকূলীয় সমভূমিগুলি উত্তর-দক্ষিণে টিলাগুলো লাইনে এগিয়ে গেছে, যা সলখা হিসাবে পরিচিত। আরও পূর্ব দিকে, টিলাগুলি বড় হয় এবং লৌহ অক্সাইড কারণে লাল রঙের হয়।
বিলাসবহুল জীবনযাপন, চোখ ধাঁধানো রঙিন আলোকরশ্মি, আকাশচুম্বি অট্টালিকা, বিলাসবহুল হোটেল, কৃত্রিম দ্বীপপুঞ্জসহ ব্যবসায়িক কারণে দুবাই ভ্রমণপ্রিয়দের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে।
কোরআন পার্ক
ইসলামের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কোরআনে উল্লিখিত ৫৪টি উদ্ভিদ ও অলৌকিক মহিমা সব ঘটনার সমাহার কোরআন পার্কে। দুবাইয়ের আল খাওয়ানিজ অঞ্চলের ৬০ হেক্টর জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে কোরআন পার্ক। অসাধারণ শিল্পকর্ম, কারুকাজ ও শৈল্পিক নকশায় তুলে ধরা হয়েছে সব কিছু। পার্কে বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে যে কারও। যে কোনো ধর্মের অনুসারীর।
পার্কের কাচ হাউসে কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত ২৯ প্রজাতির সংরক্ষণ করা হচ্ছে। প্রত্যেক উদ্ভিদের পাশেই মার্বেল পাথরে খোদাই করা রয়েছে উদ্ভিদের নাম ও কোরআনের আয়াত। পার্কটির আরেক আকর্ষণ হচ্ছে ‘অলৌকিক গুহা’। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত গুহার আদলে এটি সাজানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
প্রাচীন স্থাপত্যশিল্প
দুবাই মিউজিয়ামটি অবস্থিত আল-ফাহিদি দূর্গে। যার নির্মাণকাল ১৭৮৭ সাল। এটি আরব আমিরাতের সবচেয়ে প্রাচীন স্থাপত্যশিল্প। মিউজিয়ামটির দেয়ালগুলো ঐতিহ্যবাহী কোরাল ব্লক দ্বারা তৈরি। উপরের তলাটি কাঠের পোল দিয়ে সাপোর্ট দেয়া হয়েছে। আর সিলিং তৈরি করা হয়েছে পাম ফ্রন্ট, প্লাস্টার এবং কাদা দিয়ে।
মিউজিয়ামটি বিভিন্ন ঐতিহাসিক মডেল প্রদর্শন করে যা তেলখনি পাবার আগে আমিরদের জীবনধারার প্রতিনিধিত্ব করে। এই যাদুঘরের গ্যালারিতে প্রাচীন কালের বিভিন্ন শৈল্পিক জিনিষ রয়েছে, এদের মধ্যে কয়েকটি ৩০০০ বছরেরও আগের।
বাসতাকিয়া
বাসতাকিয়া দুবাই তথা আরব আমিরাতের অন্যতম ট্যুরিস্ট আকর্ষণ। দর্শনার্থীরা বাসতাকিয়া দেখার মাধ্যমে প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক আরবীয় স্থাপত্য সম্পর্কে ধারণা পান। বাস্তাকিয়া’র উইন্ড টাওয়ারগুলি দেখে বুঝা যায়, কীভাবে প্রাচীন দুবাই এর মানুষের বিদ্যুৎ সরবরাহের আগে তাদের ঘরগুলোকে শীতল রাখতো।
বাস্তাকিয়ার কিছু কিছু ঐতিহাসিক ঘর এখন জাদুঘর এবং গ্যালারি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। আর গ্যালারিগুলোতে দেখা যায় পুরনো পেইন্টিং, হ্যান্ডক্রাফ্টসসহ বিভিন্ন প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী জুয়েলারী।
বুর্জ আল-আরব
বুর্জ আল-আরব সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে অবস্থিত একটি ৭ তারকা হোটেল। পৃথিবীর সবচেয়ে বিলাস বহুল হোটেল। উচ্চতার দিক থেকে এটি বিশ্বের ৪র্থ হোটেল। সমুদ্রের তীর থেকে ২৮০ মিটার সমুদ্রের ভেতরে কৃত্রিম দ্বীপের উপর হোটেলটি নির্মাণ করা হয়েছে।
আরবের পুরনো পালতোলা জাহাজের কাঠামোর অনুকরণে বানানো হয়েছে এই ভবনটি। এটি শেখ নাহিয়ানের পারিবারিক সম্পত্তি যিনি আরববিশ্বের অন্যতম ধনাঢ্য ব্যক্তি এবং শাসক। হোটেলটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৬৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ
শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদটি অবিশ্বাস্য সৌন্দর্যের আধুনিক নিদর্শন। এর অবস্থান আবুধাবি শহরে। এটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের সবচেয়ে বড় মসজিদ। মসজিদটি ৩০ একর জমির উপর নির্মাণ করা হয়েছে এবং এখানে একসাথে ৪০ হাজার মানুষ নামাজ পড়তে পারেন। দৃষ্টিনন্দন মসজিদের অভ্যন্তরে সোনা, মোজাইক টাইলস, কাচ এবং মার্বেলের ব্যবহার প্রচুর।
বাইরের দিক তৈরি শ্বেতপাথরে। আর কিবলার দেয়ালে চোখে পড়বে আল্লাহ্’র ৯৯টি নাম। স্ফটিক সচ্ছ লক্ষ লক্ষ পাথরের তৈরি পৃথিবীর বৃহত্তম ঝাড়বাতিটি এই মসজিদে। আধুনিক ও ইসলামী বইয়ের এক অনন্য সংগ্রহশালা রয়েছে মসজিদ লাইব্রেরীতে। শুধু মুসলিম নয় অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরাও প্রতিদিন ছুটে আসেন এ মসজিদটিকে এক নজর দেখতে।
মারিয়াম উম্মে ঈসা মসজিদ
মারিয়াম উম্মে ঈসা মসজিদ বা মেরি, যিশুর মা মসজিদ হচ্ছে আবুধাবি শহরের কেন্দ্রের নিকটে আল মুশরিফে অবস্থিত একটি মসজিদ। এটি ১৯৮৯ সালে মসজিদটি নির্মিত হয়। ধর্মগুলোর মধ্যে সহাবস্থান মূল্যবোধের উদাহরণ হিসাবে এই উদ্যোগটি করা হয়।
বুর্জ খলিফা
সংযুক্ত আরব আমিরাতের সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান বুর্জ খলিফা। এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ গগনচুম্বী দালান। উচ্চতা ৮২৯.৮ মিটার। বাড়ি, হোটেল এবং অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় দালানটির ১২৪ তলার উপরের অবজারভেশন ডেক। যেখান থেকে ৩৬০ ডিগ্রী ভিউতে দেখা যায় পুরো দুবাই। এক পাশে ধু ধু মরুভূমি আর এক পাশে ফেনীল সমুদ্র। আর রাতের দৃশ্যতো আরো নান্দনিক। রাতে রঙিন আলোয় ঝলমলে দুবাই শহর আর তার রাস্তাগুলো সৌন্দর্যের এক নতুন দরজা খুলে দেয়।
স্মৃতিস্তম্ভ
দ্য ফাউন্ডার্স মেমোরিয়াল সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রথম প্রেসিডেন্ট শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান এর স্মরণে নির্মিত একটি স্মৃতিস্তম্ভ। এই স্মৃতিস্তম্ভের অন্তর্গত হেরিটেজ গার্ডেন ও স্যাংচুয়ারি গার্ডেন অত্যন্ত মনোহর এবং এদের মাঝে একটি কিউব আকৃতির প্যাভিলিয়নে ‘দ্য কনস্টেলেশন’ নামের একটি চিত্রকর্ম রয়েছে যেটা শেখ জায়েদ এর স্মরণে নির্মিত।
লেডিস সৈকত
সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ ‘কারম আল-ওয়াতান’ যার অর্থ ‘জাতির প্রাসাদ’। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে জনগণের জন্য এটা উন্মুক্ত করা হয়। এটা ‘লেডিস সৈকতে’ অবস্থিত।
শেখ জায়েদ বিন সুলতান স্ট্রীট
‘শেখ জায়েদ বিন সুলতান স্ট্রীট’ আবুধাবির অন্যতম ব্যস্ততম সড়কগুলোর একটি। এটা সালাম স্ট্রিট নামেও পরিচিত। এই সড়কটি আল-কুর্ম কার্নিশ পর্যন্ত গেছে। কার্নিশ নিজেই একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এবং এটা হতে আরব্য উপসাগরের দৃশ্যাবলী উপভোগ করা যায়।
কৃত্রিম দ্বীপ
আটলান্টিস, দি পাম হচ্ছে একটি হোটেল রিসোর্ট, যা দুবাইয়ের পাম জুমাইরাতে অবস্থিত। কৃত্রিম দ্বীপের ওপর তৈরি এটিই বিশ্বের প্রথম রিসোর্ট। দি পামে বিলাসিতা ও চোখ ধাঁধানো জৌলুস মন কেড়ে নেয় ।
দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হল সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
শারজাহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
শারজাহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অন্যতম প্রধান বিমানবন্দর। সংযুক্ত আরব আমিরাত এর দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত ৭ নটিক্যাল মাইল একটি বিমানবন্দর। শারজাহ আমিরাত সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৭টি প্রদেশের একটি।
পাম আইল্যান্ড
দুবাইয়ের পাম আইল্যান্ডটি মানুষের তৈরি কৃত্রিম দ্বীপগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোড়ন সৃষ্টিকারী। পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ও পর্যটকদের আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে সাগরের বুকে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম তিনটি দ্বীপ। সমুদ্রের ওপর বালি দিয়ে তৈরি তিনটি দ্বীপ এমনভাবে বসানো হয়েছে যা ওপর থেকে দেখতে একটি পাম গাছের মতো লাগে। এখানে রয়েছে বিলাসবহুল সব হোটেল আর রিসোর্ট। আরো রয়েছে নিজস্ব আবাসিক সৈকত, অ্যাপার্টমেন্ট, সুইমিং পুল, থিম পার্ক, রেস্তোরাঁ, শপিংমল, হাসপাতাল এবং খেলাধুলার সুবিধা।
স্বর্ণ মার্কেট
বিশ্বের সবচেয়ে কম দামে খাঁটি স্বর্ণ পাওয়া যায় দুবাইয়ের স্বর্ণ মার্কেটে। দুবাই শহরবাসীরা নিজেরাই একে স্বর্ণের দেশ বলে দাবি করেন। প্রতি বছর স্বর্ণ কেনার জন্যই বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা দুবাইয়ে ভিড় করে। বিশ্ববাজারে স্বর্ণের মোট প্রবাহের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশই আসে দুবাই থেকে।
স্কি দুবাই
দুবাইয়েই কেবল মরুভূমির বুকে স্কি করা সম্ভব। তাও আবার বরফঘেরা মাঠে, যা ২২ হাজার ৫০০ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত। স্কি দুবাই একটি ইনডোর স্কি লাউঞ্জ, যেখানে পাওয়া যাবে ৪০০ মিটার দীর্ঘ ব্ল্যাক রান। উত্তেজনাপূর্ণ ও আনন্দময় মুহূর্ত সৃষ্টি করে। এন্টার্কটিকা ভ্রমণের অনুভূতি দেয়। এখানে পেঙ্গুইনদের সঙ্গে সাঁতার কাটাসহ কাচের বিশাল প্রাচীরের মাধ্যমে পেঙ্গুইনের মুখোমুখি হওয়া সত্যি অতুলনীয়।
দুবাই ম্যারিনা
সংযুক্ত আরব আমিরাতের আরেক সুউচ্চ ভবন দুবাই ম্যারিনা। যেখানে রয়েছে বিশাল বিশাল সব আকাশছোঁয়া ভবন, বিলাসবহুল সৌন্দর্যে আবেশিত প্যাঁচানো ‘ক্যানন টাওয়ার’, সমুদ্র সৈকত, যা ট্যুরিস্টদের মন কেড়ে নেয় এক নিমিষেই।
দুবাই মিরাকল গার্ডেন
দুবাই মিরাকল গার্ডেন যেন এক ফুলের রাজ্য। পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ফুলের বাগান। পুরো পার্কজুড়েই রয়েছে হাজার হাজার প্রজাতির ফুল। ১ লাখ ৯ হাজারেরও বেশি প্রজাতির ফুল রয়েছে। ফুল দিয়ে তৈরি মানুষের অবয়ব, ঘোড়া, বিড়াল, হাতি, গাছ! এমনকি বিমানও তৈরি করা হয়েছে হাজার প্রজাতির ফুল দিয়ে! এ পার্ক যে এক ফুলের সাম্রাজ্য। পর্যটকদের অন্যতম জনপ্রিয় স্পটের একটি দুবাই মিরাকল গার্ডেন। পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ ফুল থেকে শুরু করে ক্ষুদ্রতম ফুল সবই রয়েছে এ মিরাকল গার্ডেনে।
দর্শনীয় স্থান
সংযুক্ত আরব আমিরাতের আরো কিছু দর্শনীয় স্থান: দুবাই ক্রিক, মরুভূমি, হাজার পর্বত, ফেরারি ওয়ার্ল্ড, দুবাই শপিং মল, এমিরেটস প্যালেস, শারজা আর্টস মিউজিয়াম ইত্যাদি। সংযুক্ত আরব আমিরাতে তলোয়ার নৃত্য জনপ্রিয়; ইংরেজিতে যাকে বলে সোর্ড ড্যান্স। এখানকার অধিকাংশ অধিবাসীদের মধ্যে পুরুষেরা আলখাল্লা, জুব্বা, গুত্রা (মাথায় পরার আরব্য পরিধান), টুপি পরে থাকেন। নারীরা আবায়া, বোরকা, হিজাব ও অন্যান্য শালীন পোশাক পরিধান করেন।