আনিসুর রহমান এরশাদ
পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে যেসব জনপদ গড়ে উঠেছে এবং যেসব জনপদের সভ্যতার ইতিহাস খুবই সমৃদ্ধ, সেসব দেশের মধ্যে জর্ডান অন্যতম। প্রাচীন ও পবিত্র ভূমিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা জর্ডান বিশ্বসভ্যতায়ও গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। আধ্যাত্মিকতা ও বিশ্বাসের ইতিহাসেও জর্ডান স্মরণীয় নাম। যেন মরুভূমির ক্যানভাসে ইতিহাসের জলছবি। জর্ডানেই রয়েছে পৃথিবীর নতুন সপ্তাশ্চর্যের একটি পেত্রা নগরী, রয়েছে মৃত সাগর আর সোনালী-লাল মরুভূমির ঐন্দ্রজালিক সৌন্দর্য। মরূদ্যান, মৌসুমি জলাধারে সিক্ত গিরিপথ কিংবা বসন্তে প্রস্ফুটিত বুনো ফুলে ছাওয়া পাহাড়ের আকর্ষণ অনবদ্য। আজ জানাব সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পৃথিবীর বুকে অনন্য দেশ জর্ডান সম্পর্কে।
একনজরে জর্ডান
পুরো নাম: হাশেমীতে কিংডম অফ জর্ডান
রাজধানী ও বৃহত্তর শহর: আম্মান
সরকারি ভাষা: আরবি
জাতীয়তাসূচক বিশেষণ: জর্দানীয়ান
সরকার : সাংবিধানিক রাজতন্ত্র
রাজা: দ্বিতীয় আবদুল্লাহ
প্রধানমন্ত্রী: বিশের খাসাওনেহ
স্বাধীনতা: ২৫ মে ১৯৪৬
আয়তন: ৮৯,৩৪২ বর্গকিমি
জনসংখ্যা: ১ কোটি ৮ লাখ ২০ হাজার ৬৪৪ জন
মুদ্রা: জর্দানীয় দিনার (জেওডি)
অবস্থান
জর্ডান এশিয়া মহাদেশের একটি আরব দেশ। দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া তথা মধ্যপ্রাচ্যের আরব উপদ্বীপের ছোট্ট রাষ্ট্র। উত্তরে সিরিয়া, পূর্বে ইরাক ও সৌদি আরব, দক্ষিণে সৌদি আরব ও আকাবা উপসাগর এবং পশ্চিমে ইসরাইল পশ্চিম তীর ও মৃত সাগর। জর্দানের আকাবা উপসাগরের সাথে প্রায় ২৬ কি.মি. উপকূলীয় অঞ্চল রয়েছে যা লোহিত সাগরের সাথে যুক্ত হওয়ার একমাত্র পথ। ভৌগলিক অবস্থান জর্ডানকে বিশ্বে বৃহৎ গুরুত্ব এনে দিয়েছে। জর্দান আরব লীগ ও ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।
ইতিহাস
একসময় প্রবল প্রতাপশালী ব্যবিলনীয়, পার্সিয়ান, অ্যাসিরীয় সভ্যতার কেন্দ্র ছিল জর্ডান। জর্ডানের শহরগুলোর রাজপথ একসময় প্রকম্পিত হয়েছে রোমান, মুসলিম এবং ক্রুসেডার সেনাবাহিনীর পদভারে। মুসলিম, খ্রিস্টান ও ইহুদীদের কাছে পবিত্র জর্ডান নদী বয়ে গেছে জর্ডানের দক্ষিণ অংশ দিয়ে।
মধ্যপ্রাচ্যের বিশুদ্ধ ঐতিহ্যের অনেকটাই এখনো জর্ডানে দেখতে পাওয়া যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে দেশটি উসমানীয় সাম্রাজ্য এর অংশ ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধতে উসমানীয় সাম্রাজ্যের পতন ঘটলে ব্রিটিশরা অঞ্চলটি দখলে নেয়। ১৯৪৬ সালে ট্রান্সজর্ডান অংশটি একটি স্বাধীন রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৪৯ সালে এর নাম বদলে শুধু জর্ডান রাখা হয়। ১৪ ডিসেম্বর ১৯৫৫ এ জর্দান জাতিসংঘের সদস্য হয়।
সরকার
মধ্যপ্রাচ্যের রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র জর্ডানের রাজবংশ নিজেদেরকে হযরত মুহাম্মদের পিতামহ হাশেমের বংশধর বলে মনে করে। ৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯, আবদুল্লাহ দ্বিতীয় তার পিতা হুসেনের মৃত্যুর পর সিংহাসনে আরোহণ করেন। আব্দুল্লাহ অর্থনৈতিক উদারনীতির সূচনা করেন এবং তার সংস্কারের ফলে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ঘটে। তিনি বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি, সরকারী-বেসরকারী অংশীদারত্বের উন্নতি এবং আকাবার মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল এবং সমৃদ্ধ আইসিটি খাতের ভিত্তি প্রদান করেন।
অর্থনীতি
পাঁচটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করেন। জর্ডানের অর্থনীতি মূলত ফসফেট খনন, নিম্ন স্তরের কৃষি এবং পর্যটন ভিত্তিক। পর্যটন দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম আয়ের উৎস। ইউরেনিয়াম রিজার্ভ রয়েছে। দেশটিকে ইউরোপীয় বাণিজ্যের জন্য একটি মুক্ত অঞ্চল হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
শিক্ষাব্যবস্থা
জর্ডান নিজের উন্নত শিক্ষাব্যবস্থার জন্য গর্ব করে থাকে। জর্ডানের সাক্ষরতার হার প্রায় ১০০%। শিক্ষাব্যবস্থা আন্তজার্তিক মানসম্পন। দশ বছরের মৌলিক শিক্ষা সবার জন্য বাধ্যতামূলক। বিনামূল্যে বই প্রদান করা হয়। ১৬ বছর পর্যন্ত সবার জন্য পড়ালেখা করা বাধ্যতামূলক। মোট জনসংখ্যার ২.৫% বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। জর্ডানে বর্তমানে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০টি। জর্ডানের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় আমেরিকান কারিকুলাম অনুসরণ করে থাকে।
প্রশাসনিক অঞ্চল
জর্ডানকে চারটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়। অঞ্চলসমূহ হচ্ছে- উত্তর জর্ডান, কিংস হাইওয়ে, পূর্ব মরুভূমি ও দক্ষিণ মরুভূমি। শহরসমূহ হচ্ছে- দেশের রাজধানী আম্মান, আকাবা, দেশটির উত্তরের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেট্রোপলিটন ইরবিদ, মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম বৃহত্তম রোমান ধ্বংশাবশেষ জিরাশ, কিরাক, মোজাইক মানচিত্রের জন্য পরিচিত মাদাবা, আর-রুসাইফা, ইরবিড, আল-কাওয়াইসিমা, আল-জুবাইহাহ, ওয়াদি আস স্যার, টিলা আল-আলি, সাহাব, প্রাচীন শহর সল্ট ও দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম মেট্রোপলিটন জারকা।
পর্যটন
দেশটিতে ভ্রমণে গন্তব্য হতে পারে- দ্বাদশ শতাব্দীর প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ আজলান প্রাসাদ, মরুদ্যান আজরাক, বিশ্বের সবচেয়ে নিচু স্থান এবং সবচেয়ে লবণাক্ত সাগর মৃত সাগর, মরু প্রাসাদ, রোমান যুগের বসতি উম্ম কাইস ইত্যাদি। গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে রয়েছে পেত্রার শিলা শহর, আকাবার কাছাকাছি লোহিত সাগরের ড্রাইভিং জান্নাত, মাদাগার মোজাইক, প্রাচীন শহর গেরাস, প্রায় এক হাজার বছরেরও বেশি পুরানো উম্মে এর-রসাসের ধ্বংসাবশেষ ও বিভিন্ন মরুভূমির প্রাচীন দুর্গ ।
পেত্রা
প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম সেরা নিদর্শন পেত্রা জর্ডানের শীর্ষ আকর্ষণ। দক্ষিণ জর্ডানের প্রাচীন শহর রাকমুতে জেবেল-আল-মাধবা পর্বতের ঢালে অবস্থিত। দুর্গম পর্বতের আড়ালে এর অনিন্দ্য সৌন্দর্য, বিস্ময়কর-অনবদ্য স্থাপত্যশৈলী চোখ জুড়ায়। পাথরে খোদিত গোলাপি শহর পেত্রায় দেখা যায় অসাধারণ শিল্পকর্ম। ৩১২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আরবের নাবাতাইয়ান্সের রাজধানীতে পাহাড় খোদাই করে গড়ে তোলা পেত্রা একক ও অনন্য।
পৃথিবীর যে স্থানগুলোতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পর্যটকরা ছুটে যান, তার মধ্যে অন্যতম পেত্রা। অদ্ভুত এক রহস্যময়তায় ঘেরা পেত্রার পাঁচ তারকা হোটেল মোভেনপিক বিখ্যাত। রয়েছে উটের পিঠে চড়ে ঘোরার ব্যবস্থা। চ্যারিয়টে চড়েও ঘুরা যায়। গাধার পিঠে চড়ে মোনাস্টেরিতে যেতে পারেন পর্যটকরা। বিখ্যাত পর্যটন আকর্ষণ পেত্রা ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট এবং পৃথিবীর নতুন সপ্তাশ্চর্যের একটি।
সবচেয়ে সুন্দর স্মৃতিস্তম্ভ দ্য ট্রেজারি প্রাসাদের সূক্ষ্ম কারুকাজ মুগ্ধ করে। ট্রেজারি থেকে বাইরে গড়া ৪০টি সমাধিসৌধকে একসাথে বলে স্ট্রিট অব ফ্ল্যাকেডস। পাহাড়ের বেদীতে শেষ হওয়া সিঁড়িগুলোকে বলে হাই প্লেস অব স্যাক্রিফাইস। মনাস্ট্রি অনেকটা ট্রেজারির মতো দেখতে হলেও, আকারে ট্রেজারির চেয়ে বিশাল।
কামরানের গুহা
জর্ডান সমুদ্রবর্তী কামরানের গুহা আধুনিক সময়ের অন্যতম ধর্মীয় স্থাপনা। ১৯৪৭ সালে একজন বেদুঈন গুহাটি আবিষ্কার করেন। স্থানীয়ভাবে ডেড সি স্ক্রলস নামে পরিচিত স্থাপনাটির ইতিহাস ইহুদিদের গ্রন্থ ওল্ড টেস্টামেন্ট ও খ্রিস্টানদের গ্রন্থ বাইবেলের বর্ণনার সঙ্গে মিলে যায়।
ওয়াদি রুম
ওয়াদি রুম মরুভূমির প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার সহজ ও নিরাপদ গন্তব্য। সুউচ্চ মালভূমির উপরে অবস্থিত। বিশাল বিশাল লাল পাথর আর লাল বালির ঢেউ অধ্যুষিত ওয়াদি রুমের সৌন্দর্য বিমুগ্ধ করে। জীবনধারণের জন্য প্রতিকূল এলাকাটিতে থাকে কিছু বেদুইন। ওয়াদি রুমের প্রকৃতি বিশুদ্ধ। অপার আনন্দে দেখা যায়- রাতের স্বচ্ছ আকাশে তারা, বেদুইনদের জীবনযাত্রা। ‘লরেন্স অব অ্যারাবিয়া’ সিনেমার কল্যাণে ওয়াদি রুমের সৌন্দর্য পৃথিবীবাসী জানে।
ওয়াদি ডেভিড
দুই উপত্যকার একটি ওয়াদি ডেভিড। এন গেডি নেচার পার্কে দর্শনার্থীরা দূর-দূরান্ত থেকে আসেন। মরুপাহাড় দেখে অনেকেই অভিভূত হন। এন গেডি স্প্রিং নামে জলপ্রপাত রয়েছে। রয়েছে ক্যালকোলিথিক মন্দির এবং রোমান দুর্গ।
ওয়াদি আরুগট
ওয়াদি আরুগট উপত্যকাটি দক্ষিণ দিকে অবস্থিত। মনোমুগ্ধকর জলপ্রপাত আর আকর্ষণীয় মরুপাহাড়ে ব্যাপকভাবে আনন্দিত হন পর্যটকরা। এখানে পঞ্চম শতাব্দীতে নির্মিত ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয় সিনেগগ রয়েছে।
মৃতসাগর
জর্ডানের ডেড সি বা মৃতসাগর বিস্ময়কর সমুদ্র। প্রচণ্ড লবণাক্ত হওয়ায় পানিতে কোনো প্রাণী বাঁচতে পারে না। সাধারণ সামুদ্রিক পানির চেয়ে ৩০ গুণ বেশি লবণাক্ত! দর্শনার্থীরা এখানে সাঁতার কাটার জন্য আসেন। এখানে শত চেষ্টা করেও ডোবা যায় না। সমুদ্রে নামলে পর্যটকরা ভেসে থাকেন। অনেক পর্যটক ভেসে ভেসে খবরের কাগজ পড়েন!
উপকূলের কাদায় থাকা খনিজ লবণের আছে নানাবিধ স্বাস্থ্য উপকারিতা! ভেসে থাকা স্বচ্ছ লবণের স্ফটিক বাড়তি সৌন্দর্য যোগ করে। সমুদ্রটির উচ্চতা ৪০০ মিটার। ইতিহাস সচেতন ও ভ্রমণবিলাসী মানুষ সমুদ্রটি ভ্রমণ করেন। মৃত সাগরের সাথে জর্ডানের প্রায় ৫০ কিলোমিটারের মতো সীমান্ত এলাকা রয়েছে।
সমুদ্রসৈকত
মৃতসাগরের সমুদ্রসৈকত খুবই জনপ্রিয়। মুসলমানরা বিশ্বাস করেন, নবী লূতের (আ:) আহবানে সাড়া না দিয়ে যে জাতি ধ্বংস হয়েছিলো তারা সমুদ্রস্থলেই বসবাস করতো। তাইতো মুসলমান দর্শনার্থীরা এখানে আসেন। সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখার জন্য আগ্রহীদেরকে এখানে ভ্রমণ করতে দেখা যায়।
আল মাতাস
মৃত সাগর থেকে ৯ কি.মি. উত্তরে, জর্ডান নদীর পূর্বতীরে অবস্থিত খ্রিষ্টধর্মের পবিত্র ধর্মীয় তীর্থস্থান ‘আল মাতাস’। বাইবেলে এই স্থানের উল্লেখ পাওয়া যায়। এখানে নতুন, পুরাতন বেশ কিছু চার্চ ও চ্যাপেল আছে।
আম্মান
আম্মান সবচেয়ে জনবহুল শহর। দেশের অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। গভর্নরেটের প্রশাসনিক রাজধানী। সাতটি পাহাড়ের উপর নির্মিত আধুনিক আম্মান পর্যটন খাতে সমৃদ্ধ। উদারপন্থী ও পশ্চিমা ধারার আরব নগরীটি কতগুলি ঢেউখেলানো পাহাড়ের উপরিভাগে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থানগুলি হচ্ছে- দ্য সিটিডেল, গ্রেট টেম্পল অব আম্মান, জর্ডান আর্কিওলজিক্যাল মিউজিয়াম, রয়্যাল অটোমোবাইল মিউজিয়াম ও আল-কাসর প্রাসাদ। এছাড়া আবদালী প্রকল্প বুলেভার্ড, হারকিউলিসের মন্দির, কিং আবদুল্লাহ প্রথম মসজিদ এবং রাঘদান ফ্ল্যাগপোল, আবদৌন সেতু, উমাইয়াদ প্রাসাদ, আবু দারভিশ মসজিদ, রাজা হুসেন বিন তালাল মসজিদ, আর্ট মিউজিয়াম, জারা মার্কেট, অটোমান হেজাজ রেলওয়ে স্টেশন, রেইনবো স্ট্রীট, আল বালাদ জেলা, আল কালালা, অস জর্ডান যাদুঘর এবং মনোমুগ্ধকর রোমান আম্ফি থিয়েটার।
সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে তারা পাহাড় এলাকার উচ্চতা ৭০০ থেকে ১১০০ মিটার। আম্মানে রয়েছে আলেপ্পো পাইন, ভূমধ্যসাগরীয় সাইপ্রেস এবং ফিনেসিয়ান জুনিপার গাছ। পশ্চিম আম্মান আধুনিক শহর আর পূর্ব আম্মান আবাসিক এলাকা। আরব ও ইউরোপীয় পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকে। আম্মানের বাসিন্দাদের একটি বিশাল অংশের ফিলিস্তিনি শিকড় রয়েছে। আম্মানে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। জর্দান বিশ্ববিদ্যালয় শহরের সবচেয়ে বড় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।
জেরাশ
জেরাশ জর্ডানের সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে সুরক্ষিত রোমান শহর। এর আড়ম্বরপূর্ণ প্রবেশপথ, সারি সারি স্তম্ভসজ্জিত রাস্তাঘাট, মন্দির, থিয়েটার সবকিছু একটি সমৃদ্ধ সময়ের গল্প বলে যায়। একসময় ছিল সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রভূমি। বালির পরতের নিচে চাপা পড়ে থাকা জেরাশ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় ৭৪৯ খ্রিস্টাব্দে।
শহরটি দেখেছে সম্রাট আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট, ট্রাজান ও হেড্রিয়ানকে। শহরটিতে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন হেড্রিয়ান আর্চ। আর্চের পেছনেই বিশাল হিপ্পোড্রোম। এখানে হাঁটতে হাঁটতে কল্পনা করতে পারবেন গ্ল্যাডিয়েটরদের শক্তির তেজ, বাতাসে শুনতে পাবেন দর্শকদের উল্লাস। চোখে পড়বে ৫৬টি স্তম্ভে ঘেরা চত্বর ‘ফোরাম’ ও স্তম্ভ সজ্জিত কার্ডো ম্যাক্সিমাস।
আকাবা
আলো ঝলমলে শহর, সমুদ্রসৈকত আর ইতিহাসের দুর্লভ সমন্বয় আকাবা জর্ডানের একমাত্র সমুদ্রবন্দর। শহরটি লোহিত সাগরের উত্তর-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। পর্যটক সমাগম লেগেই থাকে। লোহিত সাগরের পানি ডাইভিং ও স্নোরকেলিংয়ের জন্য দারুণ উপযোগী।
আকাবা মেরিন পার্কের ৭ কি.মি. উপকূল পর্যটকদের প্রবালপ্রাচীর ও সামুদ্রিক জীবন দর্শনের জন্য উন্মুক্ত। চা খেতে খেতে চমৎকার সূর্যাস্ত দেখার সুযোগ মিলবে পাম বিচে। গালফ আল আকাবা থেকে একটু ভেতরে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বিখ্যাত যুদ্ধক্ষেত্র মামলুক দুর্গ।
ডানা নেচার রিজার্ভ
জর্ডানের দক্ষিণে কাদিসিয়া মালভূমির উপরে ১,৫০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত ডানা নেচার রিজার্ভটি। ডানা গ্রাম ও ডানা মরুভূমি ঘিরে গড়ে উঠেছে এটি। বিশাল এলাকা নিয়ে ঘেরা এই রিজার্ভটি জীববৈচিত্র্যে বিস্ময়কর রকমের সমৃদ্ধ। পুরো জর্ডানের সব গাছপালার প্রজাতির এক-তৃতীয়াংশ এখানে পাওয়া যায়।
এখানে একইসাথে পাবেন মরুভূমি, ভূমধ্যসাগরীয় রেইনফরেস্ট এবং আফ্রিকা, এশিয়া ও ইউরোপের নানা প্রজাতির বুনো প্রাণী। ডানা গ্রামে প্যালিওলিথিক, নাবাতাইন, রোমান সভ্যতার নানা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এই এলাকায় শীতকালে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা পড়ে এবং কুয়াশাচ্ছন্ন থাকে। এলাকাটি হাইকিংয়ের জন্য বিখ্যাত। বেশ কিছু ট্রেকে ফোরহুইলারও চলে।