আনিসুর রহমান এরশাদ
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম উন্নত, ধনী ও শক্তিশালী দেশ মালয়েশিয়া। সবুজ আর পাহাড়ে ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশটি আশিয়ান এর প্রাণকেন্দ্র। নানা বর্ণ, ধর্ম আর সংস্কৃতির মানুষের দেশটিকে মিনি এশিয়াও বলা হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অধ্যুষিত দেশটি আসিয়ান এবং ওআইসি এর প্রতিষ্ঠাকালীন অন্যতম সদস্য। জাতিসংঘ, জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন (ন্যাম) এবং কমনওয়েলথ এর সক্রিয় সদস্য। বহুজাতিক ও বহু ধর্মের অনুসারী শান্তিপ্রিয় জাতির দেশ।
একনজরে মালয়েশিয়া
রাজধানী ও বৃহত্তম শহর: কুয়ালালামপুর
সরকার পদ্ধতি: কেন্দ্রীয় সাংবিধানিক রাজতন্ত্র এবং সংসদীয় গণতন্ত্র
প্রশাসনিক রাজধানী: পুত্রজায়া
আইনসভা: পার্লামেন্ট
উচ্চকক্ষ: সিনেট
নিম্নকক্ষ: হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস
আয়তন: ৩ লক্ষ ৩০ হাজার ৮০৩ বর্গকিলোমিটার
স্বাধীনতা লাভ: ৩১ আগস্ট, ১৯৫৭ (যুক্তরাজ্য থেকে)
জনসংখ্যা: ৩ কোটি ২৭ লাখ জন (প্রায়)
মুদ্রা: রিঙ্গিত
প্রধান ধর্ম: ইসলাম
সরকারি ভাষা: মালয়
জাতিসংঘে যোগদান: ১৯৫৭ সালে
মাথাপিছু আয়: ১২১৫০ মার্কিন ডলার
অবস্থান
দক্ষিণ চীন সাগর দ্বারা দেশটি দুই ভাগে বিভক্ত, মালয়েশিয়া উপদ্বীপ বা পশ্চিম মালয়েশিয়া এবং পূর্ব মালয়েশিয়া। প্রায় ৪০ মাইল বিস্তৃত সমুদ্র আলাদা করে রেখেছে দেশটির দুই অংশকে। পূর্ব মালয়েশিয়ায় রয়েছে দু’টি বড় রাজ্য এবং একটি কেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত এলাকা। আর পশ্চিম মালয়েশিয়ায় রয়েছে ১১টি রাজ্য এবং একটি কেন্দ্রশাসিত এলাকা। ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও ব্রুনাইয়ের সঙ্গে দেশটির স্থল সীমান্ত এবং সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনের সঙ্গে সমুদ্র সীমান্ত রয়েছে।
প্রশাসনিক অঞ্চল
মালয়েশিয়ায় তিনটি প্রশাসনিক অঞ্চল হচ্ছে- কুয়ালালামপুর, লাবুয়ান ও পুত্রাজায়া। তেরটি প্রদেশ যথাক্রমে : পেনাং, পেরাক, সেলাঙ্গও, জোহর, মালাক্কা, সাবাহ, কেদাহ, তেরেঙ্গানু, সারাওয়াক, পেহাং, কেলান্তান, নেগেরি, সেম্বিজান ও পার্লিস।
গুরুত্বপূর্ণ শহর
রাজধানী কুয়ালালামপুর। পুত্রজায়া কেন্দ্রীয় সরকারের প্রশাসনিক রাজধানী। সংসদ ভবন, বাণিজ্যিক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান সমূহের বেশিরভাগই কুয়ালালামপুরে অবস্থিত। দেশটির গুরুত্বপূর্ণ শহরের মধ্যে রয়েছে জজং টাউন, ইপো, জহর বারু, কুচিং, কোতা কিনাবালু মিরি, মালাক্কা ইত্যাদি।
ইতিহাস
আনুমানিক ৪০ হাজার বছর পূর্বে মালয়েশিয়ায় আধুনিক মানুষের বসতি স্থাপনের প্রমাণ পাওয়া যায়। মালয় উপদ্বীপে প্রথম অধিবাসী মনে করা হয় নেগ্রিতোসদের। ভারতী ও চীন থেকে আসা বণিকরা এখানে বন্দর ও উপকূলীয় শহর গড়ে তোলে। ব্রিটিশ উপনিবেশ শুরুর পূর্বে দেশটি ‘মালয় ভূমি’ হিসেবে পরিচিত ছিল।
স্বাধীনতা
১৯২৪ সালে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তখনকার দিনের ডাচ দখলদারদের সাথে এক চুক্তির মাধ্যমে মালয়েশিয়ার দখল নিয়ে নেয়। ১৯৫৭ সালের ৩১ আগস্ট ব্রিটিশের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৬৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রকে পুনর্গঠিত করা হয় এবং এসময় সিঙ্গাপুর, উত্তর বোর্নিও এবং সারাওয়াক রাষ্ট্রের সাথে যুক্ত হয়।
ধর্ম
ইসলাম রাষ্ট্র ধর্ম। জনসংখ্যার প্রায় ৬৩% ইসলাম ধর্মাবলম্বী; যাদেরকে ভূমিপুত্র বলা হয়। পাশাপাশি ১৯.৮% লোক বৌদ্ধ, ৯.২% লোক খ্রিষ্টান, ৬.৩% লোক হিন্দু এবং বাকিরা অন্যান্য ধর্ম পালন করে থাকে। সকল ধর্মের মানুষ নিজ নিজ ধর্মীয় আচার-আচরন পালন করার স্বাধীনতা ভোগ করে। ৬৭৪ খ্রিষ্টাব্দে আরব মুসলিম ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে।
অর্থনীতি ও ব্যবসা
মালয়েশিয়ার অর্থনীতি মূলত মুক্তবাজার অর্থনীতি। চীন, সিঙ্গাপুর ও আমেরিকা দেশটির প্রধান বাণিজ্য সহযোগী দেশ। মালয়েশিয়ার বেশীর ভাগ বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চীনা মালয়েশিয়ানদের মালিকানাধীন। আর তামিলদের বেশীর ভাগ ট্যাক্সি চালক আর কিছু আছে স্বর্ণ ব্যবসায়ী। অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করে নবাগত এক-তৃতীয়াংশ চাইনিজ কমিউনিটি। আর রেস্টুরেন্ট, হোটেল ও অন্যান্য সেবা খাত নিয়ন্ত্রণ করে ভারত থেকে আসা অধিবাসীরা।
মালয়েশিয়া প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর একটি দেশ। বিশেষ করে কৃষি, বন, খনিজ সম্পদ। দেশটি রাবার ও পামওয়েল রপ্তানিতে বিশ্বের মধ্যে শীর্ষস্থানীয়। পাম ওয়েল, রাবার, প্রাকৃতিক গ্যাস, কাঠ, কোকো বীজ, ইত্যাদি দেশটির প্রধান রপ্তানী পণ্য। বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক সামগ্রী উৎপাদন ও রপ্তানীর ক্ষেত্রেও শীর্ষস্থানীয় দেশ কাতারে মালয়েশিয়া। মোটামুটি সব নাগরিকই সচ্ছল। উন্নত দেশগুলোর মতো সবারই বাড়ি-গাড়ি ও প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র আছে। সবাই চিকিৎসাসেবা ও শিক্ষার সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে।
গণমাধ্যম
মালয়েশিয়ার প্রধান সংবাদপত্রগুলি হল উতুসান মালয়েশিয়া, দ্য স্টার, নিউ স্ট্রেইটস টাইমস, কোসমো এবং দ্য মালয় মেইল। এগুলির সবগুলিরই ইন্টারনেট সংস্করণ আছে। এগুলিতে স্থানীয় ইস্যু, রাজনীতি, ব্যবসা, বিনোদন এবং সংস্কৃতির উপর সংবাদ ও নিবন্ধ থাকে।
সরকার ও রাজনীতি
মালয়েশিয়া একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের কাঠামোতে পরিচালিত হয়। মালয়েশিয়ায় প্রাচীন ঐতিহ্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় অভিভাবক রাজা। রাজা মালয়েশিয়ার জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। রাজা হলেন রাষ্ট্রের প্রধান এবং প্রধানমন্ত্রী হলেন সরকার প্রধান। মালয়েশিয়ার রাজা আল-সুলতান আবদুল্লাহ রিয়াতুদ্দীন আল-মুস্তফা বিল্লাহ শাহ ইবনি আলমারহুম সুলতান হাজী আহমদ শাহ আল-মুস্তাইন বিল্লাহ। প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন (৮ম)।
মালয়েশিয়ার সরকার ও অঙ্গরাজ্য সরকারের হাতে নির্বাহী ক্ষমতা ন্যস্ত। সরকার এবং আইনসভার দুই কক্ষের (দেওয়ান নেগারা ও দেওয়ান রাকিয়াত) উপর যুক্তরাষ্ট্রীয় আইন প্রণয়ন ক্ষমতা ন্যস্ত। বিচার বিভাগ নির্বাহী ও আইন প্রণয়ন বিভাগ অপেক্ষা স্বাধীন, তবে নির্বাহী বিভাগ বিচারক নিয়োগদানের মাধ্যমে বিচার বিভাগের উপর কিছুটা প্রভাব বিস্তার করে থাকে। রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে আদি সংখ্যগরিষ্ঠ মালয়ী মুসলিমরা।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
মালয়েশিয়ার বৈদেশিক নীতি নিরপেক্ষতা এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মুসলিম দেশ এবং বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মুসলিম দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধিতে দেশটি বদ্ধ পরিকর। এছাড়াও ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জাতীয় সম্পদ বা জাতীয় যে কোন ইস্যুতে মালয়েশিয়ার ভূমিকা অত্যন্ত দৃঢ়।
মালয়েশিয়ার সাথে ইসরাইলের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই এবং ইসরাইলকে কখনও স্বীকৃতি দেয়নি। ফিলিস্তিনের সাথে মালয়েশিয়ার সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলনকে মালয়েশিয়া নৈতিক সমর্থন দিয়ে আসছে। দখলদার ইসরায়েলী সৈন্যদের সকল প্রকার নির্যাতন,আক্রমন এবং ফিলিস্তিনের প্রতি ইসরায়েলের দমন-পীড়নমূলক নীতিকে মালয়েশিয়া সুস্পষ্টভাবে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে।
শিক্ষাব্যবস্থা
মালয়েশিয়া পড়াশোনার দিক দিয়ে বেশ উন্নত। মনসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিবেচনায় এ অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ এখন মালয়েশিয়া। উচ্চশিক্ষায় বিভিন্ন কোর্সের পাশাপাশি বিভিন্ন পেশাগত ও বিশেষায়িত কোর্সের সুযোগ আছে এখানে। কম খরচে মানসম্পন্ন কোর্সের সুযোগ তৈরি হওয়ায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের পছন্দের গন্তব্য এখন মালয়েশিয়া।
যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার মত দেশের বিভিন্ন নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয় এখানে তাদের শাখা খুলেছে। আর যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানী, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মালয়েশীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে একযোগে কোর্স পরিচালনা করছে। ১০০টির বেশি দেশের ৫০ হাজারের মত বিদেশী শিক্ষার্থী মালয়েশিয়ায় পড়াশোনা করছে।
ভাষা
প্রায় অর্ধেক সংখ্যক লোক মালয় ভাষাতে কথা বলে। আরও প্রায় ১৩০টি ভাষা প্রচলিত। এদের মধ্যে চীনা ভাষার বিভিন্ন উপভাষা, বুগিনীয় ভাষা, দায়াক ভাষা, জাভানীয় ভাষা এবং তামিল ভাষা উল্লেখযোগ্য। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ নিজ নিজ ভাষায় কথা বলে। দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে স্কুল পর্যায় থেকেই ইংরেজি শেখানো হয়। দৈনন্দিন যোগাযোগ এবং ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ইংরেজির বহুল ব্যবহার আছে।
খেলাধুলা
ফুটবল সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। ফুটবলের পরেই জনপ্রিয়তার শীর্ষে আছে ব্যাডমিন্টন। এছাড়াও হকি, টেনিস, ঘোড়দৌড়, মার্শাল আর্ট এখানে জনপ্রিয়। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিযোগীতায় মালয়েশিয়ার সরব উপস্থিতি লক্ষ্যনীয়।
জাতি ও নাগরিকত্ব
মালয়েশিয়াতে তিন ধরনের নাগরিকত্ব ব্যবস্থা রয়েছে প্রথম হল যারা আদি নাগরিক তারা। তাদেরকে মালয় ভাষায় আস্লি বলে , তারা হচ্ছে প্রথম পর্যায়ের নাগরিক।
দ্বিতীয়ত রয়েছে যারা নগর সভ্যতার যুগ থেকে মালয়েশিয়ার শহর বা নগরে বাস করে, তারা মূলত আস্লি দের থেকেই এসেছে তবে বহু আগে তাদের আদি বাসস্থান ত্যাগ করেছে।
তৃতীয়ত রয়েছে যারা বিভিন্ন দেশ থেকে গিয়ে ঐখানে স্থায়ীভাবে জীবন যাপন করছে তারা। এখন সাধারণত বহিরাগতদের নাগরিকত্ব দেয়া হয় না। তবে ঐখানে জন্ম হলে বা কোনো মালয় নাগরিককে বিয়ে করলে নাগরিকত্ব পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে পাসপোর্ট দেয়া হয় এবং অন্য সকল নাগরিক সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়।
চিকিৎসা
উন্নত দেশগুলো থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসা চিকিৎসকগণ সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে চিকিৎসা দেন। মালয়েশিয়া সারা বিশ্বের রোগীদের জন্য কম খরচে বিশ্বমানের চিকিৎসা দিচ্ছে।
পর্যটকদের আকর্ষণীয় গন্তব্য মালয়েশিয়া
নানা সংস্কৃতির মানুষের নানা উৎসবের রং তো আছেই। এছাড়া সমুদ্র সৈকত, বন, শপিংমল ইত্যাদি মিলিয়ে পর্যটকদের এক আকর্ষণীয় গন্তব্য মালয়েশিয়া।
বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি
মালয়েশিয়ায় রয়েছে বহুভাষী, বহুজাতিক নৃগোষ্ঠী। ফলে অসংখ্য জাতির সহস্র ধরনের রীতি-নীতি ও আচরনের মিশেলে মালয়েশিয়ার সংস্কৃতি হয়ে ওঠেছে বৈচিত্র্যময়। নানা সংস্কৃতির মানুষের নানা উৎসবের মাধ্যমে মালয়েশিয়ার সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যটি ফুটে ওঠে। মালয়েশিয় সংস্কৃতির মূল ভিত্তি হলো সেখানকার আদিবাসী জনগোষ্ঠী ও সমাজের আবহমান কাল ধরে পালন করে আসা বৈচিত্রময় দৃষ্টিভঙ্গী ও আচার-আচরন। পাশাপাশি এটি ইসলামি সংস্কৃতির সাথে রক্ষা করেছে অভূতপূর্ব মেলবন্ধন। সাংস্কৃতিক স্বকীয়তা ও আত্মপরিচয়ের মৌলিক বিশ্বাস পালন, সংরক্ষণে মালয়েশিয়া বদ্ধ পরিকর।
শপিংমল
রাজধানীর সিটি সেন্টার কেনাকাটার জন্য আকর্ষণীয় জায়গা। বিশ্বের সবচেয়ে বড় দশটি শপিংমলের তিনটির অবস্থানই এ শহরে। পর্যটকরা কেনাকাটার জন্য পরিবারকে নিয়ে যান প্যাভিলিয়ন, টাইমস স্কয়ার, বিবি প্লাজা ও সানওয়ে পিরামিড মার্কেটে। পৃথিবীর সবগুলো ব্র্যান্ডের পণ্যই আছে এই মার্কেটগুলোয়। এছাড়া রয়েছে গুণগত মানসম্পন্ন স্থানীয় পণ্যগুলো।
খাবার এবং রন্ধনশৈলী
এশিয়ার খাদ্য স্বর্গ হিসেবে পরিচিত দেশটি। নানা বর্ণ, ধর্ম আর সংস্কৃতির মানুষের অবস্থানের ফলে এখানকার খাবারও বেশ বৈচিত্রময়। মালয়, চাইনীজ এবং ভারতীয় নানা ধরনের খাবার বিভিন্ন রেস্তোরাঁ এবং পথের পাশের স্টলে খুব কম দামে পাওয়া যায়। এছাড়া রয়েছে মধ্যপ্রাচ্য এবং থাইল্যান্ডের খাবার।
ফাস্টফুড চেইনের স্বাদ নিতে পারবেন। কমতি নেই স্থানীয় খাবারের। সকালের নাস্তায় খেতে পারেন চানারুটি। দুপরের খাবারে খেতে পারেন মিক্সড ফ্রাইড রাইস নাসিগরেঙ্গ। এছাড়াও পাবেন কাচ্চি বিরিয়ানি, তন্দুরি চিকেন, কাবাব ইত্যাদি। ডেজার্ট হিসেবে বেছে নিতে পারেন সিক্রেট রেসিপির কেক, এটি বেশ সুস্বাদু।
কুয়ালালামপুর
কুয়ালালামপুর মালয়েশিয়ার সাংস্কৃতিক, আর্থিক ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র। কুয়ালালামপুরের প্রধান পর্যটন কেন্দ্রগুলির মধ্যে রয়েছে পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার, বুকিট বিনতাং শপিং জেলা, কুয়ালালামপুর টাওয়ার, পেটালিং স্ট্রিট (চিনাটাউন), মেরডেকা স্কয়ার, সংসদ সদস্য, জাতীয় প্রাসাদ (ইস্তানা নেগারা), জাতীয় জাদুঘর।
ইসলামিক আর্টস মিউজিয়াম, সেন্ট্রাল মার্কেট, কেএল বার্ড পার্ক, অ্যাকোয়ারিয়া কেএলসিসি, জাতীয় স্মৃতিস্তম্ভ এবং সুলতান আবদুল সামাদ জামেক মসজিদের মতো ধর্মীয় স্থান কুয়ালালামপুর বহু সাংস্কৃতিক উৎসবের হোস্ট খেলেন যেমন শ্রী মহামারিম্মান মন্দিরে থাইপুসাম শোভাযাত্রা।
প্রতিবছর থাইপসাম উদযাপনের সময়, রৌপ্য রথটি তার সঙ্গী ভল্লী এবং তিভায়ন্নির সাথে একসাথে ভগবান মুরুগার মূর্তি বহন করে পার্শ্ববর্তী সেলানগরের বাটু গুহাগুলির সমস্ত পথ ধরে মন্দিরের মধ্য দিয়ে শহর জুড়ে প্যারেড করা হত।
শহরের বিনোদন কেন্দ্রটি মূলত জালান পি রামলি, জালান সুলতান ইসমাইল এবং আমপাং রোডকে ঘিরে স্বর্ণ ত্রিভুজকে কেন্দ্র করে। ট্রেন্ডি নাইটক্লাবস, বার এবং লাউঞ্জগুলি, যেমন মেরিনিজ ৫৭-এ, ট্রেডার্স হোটেলের স্কাইবার, বিচ ক্লাব, এস্পান্দা, হাক্কা রিপাবলিক ওয়াইন বার অ্যান্ড রেস্তোঁরা, হার্ড রক ক্যাফে, লুনা বার, নুভো, রুম জঙ্গল, নো ব্ল্যাক টাই, থাই ক্লাব, জিয়ন ক্লাব, জৌক এবং আরও অনেকগুলি এখানে অবস্থিত।
পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার
মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নতির একটি নিদর্শন। ’৭০ ও ’৮০-এর দশকে উন্নয়নের সিম্বল ছিল টুইন টাওয়ার বানানো। ১ নম্বর দর্শনীয় স্থান। ৮৮ ফ্লোর ও গ্রাউন্ডে আরো পাঁচ ফ্লোর সর্বমোট ৯৩ ফ্লোর, যা ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর সর্বোচ্চ উঁচু বিল্ডিং ছিল। উচ্চতা ১৪৮৩ ফুট।
শুধু টুইন টাওয়ার নয়, মাঝখানে পানির ফাউন্টেইন আরো অনেক সুউচ্চ বিল্ডিং। গ্রাউন্ড ফ্লোরে বিশাল শপিং এরিয়া। প্রথম ফ্লোরে এবং ওপরে প্রায় সব রকমের জিনিস ও খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা আছে। রাতে লাইট, পানির ফোয়ারা ও সঙ্গীতের মূর্ছনায় সেই এক অদ্ভুত অনুভূতি পাবেন। টুইন টাওয়ার সংযুক্তকারী স্কাই ব্রিজে ওঠার পর কুয়ালালামপুর শহর এক নজরে দেখা যায়।
জামেক মসজিদ
জামেক মসজিদ দেশটির সুন্দর নির্মাণশৈলীর মসজিদগুলোর একটি। এটি নির্মিত হয় মুরিয় স্থাপত্য ঘরানায়। কুয়ালালামপুরের পুরনো এই মসজিদের অবস্থান কাং ও গোম্বাক নদীর মিলনস্থলে, মনোরম এক পরিবেশে। প্রকৃতি এখানে রূপের ছটায় অনবদ্য। এখানকার পানির দৃশ্য খুবই মনোরম ও মনোমুগ্ধকর। দুই নদীর ছুটে চলা, গাছগাছালির শ্যামলিয়া আর উদার আকাশের রূপময়তা মিলে মসজিদটিকে করেছে আরো আকর্ষণীয়।
মসজিদের মূল দালানে রয়েছে তিনটি গম্বুজ। মাঝেরটি বড়, যার উচ্চতা ৭০ ফুট। লাল ও সাদা রঙের ডোরাকাটা মিনারের সংখ্যা দু’টি। এগুলোর উচ্চতা ৮৮ ফুট। মিনার দু’টিতে রয়েছে ছাতাকৃতির গম্বুজ। জামেক মসজিদ নির্মিত হয় ১৯০৭ সালে। তবে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় ১৯০৯ সালে। ১৯৬৫ সালে জাতীয় মসজিদ নির্মাণের আগে এটি ছিল কুয়ালালামপুরের প্রধান মসজিদ। অনেক মালয়েশীয় এ মসজিদের জন্য গৌরব বোধ করে।
জাতীয় মসজিদ
মসজিদটি মালয়েশিয়ার জাতীয় মসজিদ; ১৯৬০ সালের দিকে তৈরি। অনেক বড় আকৃতির। যেখানে একই সাথে ১৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। এই মসজিদে ইসলামিক আর্কিটেকচার অনুসরণ করা হয়েছে। এ মসজিদের ছাদ ১৬ তারকাবিশিষ্ট পয়েন্টে বানানো হয়েছে। মসজিদের ভেতরে পানির ফোয়ারা পুলের প্রতিচ্ছবি করা হয়েছে।
পুত্রজায়া মসজিদ
পুত্রজায়ায় অবস্থিত পুত্রজায়া মসজিদে ১৫ হাজার মানুষ একসাথে নামাজ আদায় করতে পারে। মসজিদটির বেজমেন্টের দেয়াল মরক্কোর কাসাব্লাঙ্কায় অবস্থিত বাদশাহ হাসান মসজিদের অনুকরণে তৈরি। এ অঞ্চলের উচ্চতম মিনারগুলোর একটি হচ্ছে পুত্রজায়া মসজিদের মিনার।
লেকে নৌবিহার
পুত্রজায়া মসজিদ, পুত্রজায়া সেতু এবং বিভিন্ন সুরম্য সরকারি অট্টালিকা সহজে দেখার একটি উপায় হচ্ছে পুত্রজায়া লেকে নৌবিহার। সাধারণ নৌযানের পাশাপাশি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নৌযানে ভ্রমণের সুযোগও আছে। এছাড়া অল্প কয়েকজনের ছোট ছোট দলে ছাদ খোলা নৌকায়ও ভ্রমণ করা যায়।
সানওয়ে লেগুন থিম পার্ক
পেটালিং জায়া শহরতলিতে সানওয়ে লেগুন থিম পার্ক ১৯৯৭ সালে চালু হয়। এখানে নানা প্রকার আনন্দ উৎসবের সাথে সাথে একটি সেøাগান সবার মুখে মুখে, ‘আসুন আনন্দ উৎসব অনুভব করুন’। এখানে দর্শনার্থীদের জন্য শুধু থিম পার্ক নয়, বরং পাশেই রয়েছে ওয়াটার পার্ক, জীবজন্তু, এক্সট্রিম পার্ক, বিভিন্ন রাইড ও নানা খেলাধুলার আয়োজন। এখানে আরো রয়েছে একটি চিড়িয়াখানা, রেস্টুরেন্ট ও শপিং সেন্টার এবং বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্নও কেনা যায়।
শ্রী মাহামারিয়াম্মান মন্দির
১৯ শতকে তৈরি কুয়ালালামপুরের অত্যন্ত প্রসিদ্ধ হিন্দুমন্দির। এই মন্দির খুব সুন্দর। এখানে বিভিন্ন দেবতা ও অন্য ধর্মগুরুদের ছবি দেখা যায়।
থিন হও বুদ্ধিস্ট মন্দির
থিন হও কুয়ালালামপুরের একটি বিখ্যাত বৌদ্ধমন্দির। কনফিউসিয়ান, থাও ও বুদ্ধিস্ট ডেকোরেটিভ জিনিসগুলো ভেতরে শোভা পাচ্ছে। লাল পিলারগুলো বুদ্ধিস্ট প্রথামতো সব দর্শনার্থীকে অভ্যর্থনা জানায়। লাল ও সোনালি মিশ্রিত রঙের আকর্ষণীয় ছাদ দেখার মতো।
পেনাং জাতীয় উদ্যান
পেনাং ন্যাশনাল পার্ক পেনাং দ্বীপের উত্তরপশ্চিম টিপতে অবস্থিত। ভূমি ও সমুদ্রের ১,২১৩ বর্গ কিলোমিটার অরণ্য। বিজ্ঞানী, গবেষকগণ দ্বারা ব্যবহৃত হয়। প্রকৃতিপ্রেমীরা প্রাকৃতিক ধনসম্পদ অন্বেষণে এই অরণ্যে যান। পূর্বে পান্তাই আচেফ ফরেস্ট রিজার্ভ হিসাবে পরিচিত। প্রাইমারি সাইট ৪১৭টি উদ্ভিদ এবং ১৪৩ প্রাণী প্রজাতির আশ্রয়স্থল। ২০০৩ সালের এপ্রিল মাসে পেনাং জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়।
পার্কের প্রাকৃতিক আকর্ষণগুলি হলো পাহাড়/নিম্নভূমি ডিপ্টারোকার্প বন, ম্যানগ্রোভ বন এলাকা, বালুকাময় সমুদ্র সৈকত আবাসস্থল, একটি মৌসুমি মরুভূমি হ্রদ এবং খোলা উপকূলবর্তী সমুদ্র। সিরায়া (শোরীয় কাচারিসি) গাছগুলির উপরিভাগ, উপকূলীয় ডিপটারোকারপ বনটির সাধারণ বৈশিষ্ট্য, মুকা হেডের চারপাশের খাড়া ঢালগুলিতে সহজেই দেখা যায়। ১০০০ প্রজাতির গাছপালা রয়েছে যা দপ্টারোকাপ্পারিয়া, লেগুনামোওস, এপোকিনেসি, অ্যানাকিডিডিয়া, ইউপোবিবিসি এবং মোরাসে দ্বারা প্রভাবিত হয়।
পেনাং
পেনাং মালয়েশিয়ার উত্তর-পশ্চিম উপকূলের একটি রাজ্য। এটি দুটি ভাগে বিভক্ত, একটি রাজধানী এবং অন্যটি পেনাংদ্বীপ। উন্নত নগরায়ন এবং শিল্পের কারণে এটি মালয়শিয়ার অন্যতম অর্থনীতিক প্রদেশ এবং পর্যটক আকর্ষণ কেন্দ্র।
জামবাতান পুলাউ পেনাং
পেনাং সেতু ১২.৫-কিলোমিটার (৮.৪ মাইল) দীর্ঘ। সেতুটি পেরাইকে দ্বীপের জেলগর দিয়ে রাষ্ট্রের মূল ভূখন্ডের সাথে সংযুক্ত করে, পেনানং স্ট্রেট অতিক্রম করে। সেতুটি প্রথম এবং ২০১৪ সাল পর্যন্ত, উপদ্বীপ এবং দ্বীপের মধ্যে একমাত্র সংযোগ রাস্তা ছিল। এই সেতুটি মালয়েশিয়ায় দ্বিতীয় দীর্ঘস্থায়ী সেতু এবং দৈর্ঘ্যের দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পঞ্চম-দীর্ঘতম। সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য ৮.৪ কিলোমিটার (৫.২ মাইল) জলের উপর রয়েছে। এই সেতুটি উদ্বোধন করেন ১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৫ সালে।.
সুলতান আব্দুল হালিম মুদজাম শাহ সেতু
সুলতান আব্দুল হালিম মুদজাম শাহ ব্রিজ বা পেনাং দ্বিতীয় সেতু হল মালয়েশিয়ার দীর্ঘতম সেতু এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘতম সেতু। এটি পেনাং দ্বীপের বটু মং এর সাথে মূল ভূখন্ডের মালয়েশিয়া উপদ্বীপের সেবারং পেরাইয়ের বন্দর কাসিয়া (বাতু কান) সাথে সংযোগ স্থাপন করে। সেতুর দৈর্ঘ্য ২৪ কি.মি. এবং মূল অংশের দৈর্ঘ্য ১৬.৯ কি.মি.।
লংকাওয়ে
লংকাওয়ে দাপ্তরিকভাবে লংকাওয়ে দ্য জুয়েল অব কেদাহ নামে পরিচিত। উত্তর-পশ্চিম মালয়েশিয়ার উপকূল থেকে ৩০ কিমি দূরে আন্দামান সাগর ১০৪টি দ্বীপমালা নিয়ে গঠিত। দ্বীপগুলি মালয়েশিয়ার কেদাহ প্রদেশের অন্তর্গত। সর্ববৃহৎ দ্বীপটিও লইংকাওয়ে দ্বীপ নামে পরিচিত। দ্বীপটি শুল্কমুক্ত। দ্বীপে যাতায়াতের একমাত্র বাবস্থা হলো বিমান এবং ফেরী।
পুলাও পায়ার দ্বীপ
পুলাউ পায়ার মালাক্কা প্রণালীতে মালয়েশিয়ার কেদাহ প্রদেশের কাছে অবস্থিত অনেকগুলি দ্বীপের একটি। এটি অপেক্ষাকৃত বেশি পরিচিত লাংকাউই নামের দ্বীপপুঞ্জটির দক্ষিণে অবস্থিত। পুলাউ পায়ার একটি সামুদ্রিক পার্ক বা উদ্যান, ফলে এখানকার জলজ জীবন সুরক্ষিত। পুলাউ পায়ারের প্রবাল সুখ্যাত। এখানে ডাইভিং ও স্নর্কেলিঙের ব্যবস্থা আছে।
বাটু গুহাসমূহ
বাটু গুহাসমূহ মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার (৮ মাইল) উত্তরে অবস্থিত একটি চুনাপাথরের পাহাড়। গোম্বাক জেলার পুরাতন গুহা মন্দির। সাংগাই বাটু নদী থেকে এর নামকরণ করা হয়েছে। এছাড়াও বাটু গুহা কাছাকাছি গ্রামের নাম। ভূমি থেকে ১০০ মিটার উচ্চতায় গুহাগুলো অবস্থিত। তিনটি বৃহদাকারের এবং বেশ কয়েকটি ক্ষুদ্রাকারের গুহা রয়েছে। সবচেয়ে বড়োটির নাম মন্দির গুহা। এর রয়েছে ১০০ মিটার উঁচু সিলিং। পূণ্যার্থীদের সে মন্দিরে পৌঁছাতে ২৭২টি সিড়ি বেয়ে উঠতে হয়।