ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিল (ডিএসইসি) এর ফ্যামিলি ডে-২০২০ উপলক্ষে ২২ জানুয়ারি গাজীপুরের কালিয়াকৈরের সোহাগ পল্লীতে গিয়েছিলাম। মেয়ে আরিবাসহ জাতীয় প্রেসক্লাবের পূর্ব পাশ থেকে বাসে ওঠা। তারপর যাত্রা। পিকনিক মানেই আনন্দ উল্লাস আর আনন্দের মুহূর্তগুলো সবার সাথে ভাগাভাগি করে নেওয়া। কর্মব্যস্ত জীবন থেকে কিছুটা অবসর, আনন্দে মেতে উঠা।
গাজীপুরের চন্দ্রা মোড় থেকে ৪ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে কালামপুর গ্রামে প্রায় ১১ একর জায়গার জায়গা জুড়ে সম্পুর্ন দূষণ ও কোলাহল মুক্ত পরিবেশে সবুজের আলিঙ্গনে গড়ে তোলা হয়েছে সোহাগ পল্লী রিসোর্ট। সোহাগ পল্লীতে পিলার ও বেলকনিতে খোঁদাই করা বিভিন্ন কারুকাজগুলো যেন শৈল্পিক ছোয়ার বহিঃপ্রকাশ; যা কর্মব্যস্ত জীবনের একঘেয়েমি কাটাতে আগত অতিথিদের আকর্ষণ করে। এখানে রয়েছে কৃত্রিমভাবে নির্মিত লেক, যেখানে সারা বছরই পানি থাকে আর সেই পানিতে দেখা মেলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। লেকে নৌকায় করে ঘুরে বেড়ানোর ব্যবস্থাও রয়েছে।
সোহাগ পল্লীতে আবাসনের জন্য রয়েছে বেশকিছু উন্নতমানের কটেজ। সোহাগ পল্লীতে চম্পা, লোটাস, রোজ, মালতি, পপি ও শাপলা নামে এসি ও নন এসি বিভিন্ন দামের কটেজ রয়েছে। তাছাড়া সুন্দরভাবে সাজানো গোছানো ১৭টি এসি রুম, ২০ নন এসি রুম রয়েছে। কটেজের সামনে দিয়ে বয়ে যাওয়া লেক খুবই চমৎকার। বাচ্চাদের চিত্তবিনোদনের বিভিন্ন উপকরনের পাশাপাশি এখানে স্থাপন করা হয়েছে আকর্ষণীয় কিছু প্রতিকৃতি। সোহাগ পল্লীতে সার্বক্ষণিক সেবা দেয়ার জন্য ৪০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে।
সোহাগ পল্লীতে বিভিন্ন প্রজাতির দেশী ফুল ফল ও সবুজের সমারহে তৈরী করেছে এক মনোরম পরিবেশ। এর আধুনিক সুযোগ সুবিধা এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে জলাশয়ের উপর নির্মিত অপরূপ সৌন্দর্যমণ্ডিত ঝুলন্ত সাঁকো সকলের নজর কাড়ে । এর পিলার ও ব্যালকনিতে খোঁদাই করা বিভিন্ন কারুকাজ আগত দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। এছাড়া রয়েছে উঁচু পাহাড়। যার নিচে এক পাশে রাক্ষসের হাঁ করা মুখ, উপরে সুন্দরী ললনার কোলে জলভর্তি কলসি এবং পাহাড়ের সামনে দু’দিকে দু’টি করে জিরাফ ও হরিণের প্রতিকৃতিসহ আরো অনেক প্রতিকৃতি রয়েছে।
জলাশয়ের পূর্বপাশে রয়েছে মেজবান নামের একটি দ্বিতল রেস্টুরেন্ট, সুইমিং পুল ও কনফারেন্সের জন্য হল রুম। ১৫০ জন ব্যক্তির ধারন ক্ষমতা সম্পূর্ন মেজবান রেঁস্তোরায় রয়েছে – বাংলা, ভারতীয়, থাই ও চীন খাবার সহ সব ধরনের খাবার। তাছাড়া সকালের, বিকালের নাস্তা চা সহ বিভিন্ন খাবার মেনু তো আছেই। চাইলে আপনি জন্মদিনের পার্টি, বিবাহ, এবং কোনো পার্টির সঙ্গে গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা এখানে করতে পারেন। সঙ্গ তো লাইভ মিউজিকের ব্যবস্থা আছেই।
রাজধানী শহর হতে ৪৯ কিলোমিটার দূরে সোহাগ পল্লী রিসোর্ট। ঢাকা থেকে দুইভাবে যাওয়া যায় সেখানে। জয়দেবপুর থেকে সফিপুর হয়ে কিংবা সাভার নবীনগর ইপিজেড হয়ে। আব্দুল্লাহপুর থেকে টাঙ্গাইলগামী বাসে করে যেতে পারেন আবার সাভার থেকে ধামরাইগামী বাসে করেও যেতে পারেন। তবে নিজস্ব পরিবহনে বা ভাড়া করা গাড়ি দিয়ে যাতায়াত করাই সবচেয়ে ভালো।
আগত দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে এখানকার শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ। কর্মব্যস্ত জীবনে যারা অবসরে প্রকৃতির কাছাকাছি যেতে চান তারা ঢাকার অদূরে গাজীপুরের প্রত্যন্ত এলাকায় গ্রামীণ পরিবেশে গড়ে ওঠা এই রিসোর্ট থেকে ঘুরে আসতে পারেন। শান্ত নিরিবিলি গজারি বনের মাঝে সবুজে ঘেরা স্নিগ্ধ প্রকৃতি ভালো লাগবে। সারি সারি বৃক্ষের পাশাপাশি এখানে রয়েছে সুবিশাল জলাশয়, কৃত্রিম ঝরণা, গরুর গাড়ি ও মিনি চিড়িয়াখানা।