আনিসুর রহমান এরশাদ
পর্বতময় দেশ তাজিকিস্তানের ভূ-প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এক কথায় অসাধারণ। অপূর্ব সুন্দর প্রাকৃতিক স্থানগুলো ও নয়নাভিরাম পর্যটন কেন্দ্রগুলোর কারণে প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য আদর্শ স্থান। এশিয়া মহাদেশের সার্বভৌম দেশটির ৯৩ শতাংশই পর্বতঘেরা। সাথে আছে পাহাড়ের উপরে আলপাইন হ্রদ। এখনকার প্রধান প্রধান দর্শনীয় স্থান ও সতেজ আবহাওয়ার খ্যাতি রয়েছে বিশ্বজুড়ে।
দেশটির জলভাগের পরিমাণ আয়তনের মাত্র দশমিক ৩ শতাংশ। দেশটির প্রধান দু’টি পর্বতমালার নাম পামির এবং আলায়। তাজিকিস্তানে অবস্থিত পৃথিবীর ছাদ খ্যাত পামির মালভূমি পর্যটকদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ। ইতিহাসপ্রেমীদের জন্যও দেশটি বেশ শিক্ষণীয়।
দেশটিতে যুদ্ধ-বিগ্রহ লেগেই ছিল। বারে বারে আক্রান্ত হয়েছে বহির্শত্রুর আক্রমণে। আক্রমণকারীদের দলে আলেক্সজান্ডার দ্য গ্রেট থেকে শুরু করে চেঙ্গিস খানও রয়েছেন। আজকে জানাব সারাবিশ্বের পর্যটকরা এসে ভিড় করছে এমন দেশটি সম্পর্কে।
একনজরে তাজিকিস্তান
নাম: প্রজাতন্ত্রী তাজিকিস্তান বা জুম্হুরিই তজিকিস্তন্ (১৯৯১ থেকে বর্তমান)
রাজধানী ও বৃহত্তর শহর: দুশানবে
সরকারি ভাষা: ফার্সি (তাজিক)
রাষ্ট্রপতি: ইমোমালি রহমান (১৯৯৪ সাল থেকে ক্ষমতায়)
প্রধানমন্ত্রী: কোখির রাসুলজোদা
জনসংখ্যা: ৯৫ লাখ ৩৭ হাজার ৬৪৫ জন (৯৫ তম)
মুদ্রা: তাজিকিস্তানি সোমোনি (টিজেএস)
আয়তন : ১,৪৩,১০০ বর্গকিলোমিটার
ভৌগলিক অবস্থান
দক্ষিণ-পূর্ব মধ্য এশিয়ার স্থলবেষ্টিত প্রজাতন্ত্র তাজিকিস্তান। আয়তনে মধ্য এশিয়ার সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র। এর উত্তরে কিরগিজস্তান, উত্তরে ও পশ্চিমে উজবেকিস্তান, পূর্বে চীন এবং দক্ষিণে আফগানিস্তান। গোর্নো-বাদাখশান স্বায়ত্তশাসিত এলাকাটি তাজিকিস্তানে অবস্থিত; এটি একটি জাতিগত অঞ্চল যা দেশটির ৪৫% এলাকা জুড়ে অবস্থিত।
পর্বতমালা
পামির পর্বতাঞ্চল দ্বারা বেষ্টিত দেশটির পঞ্চাশ শতাংশেরও বেশি জায়গা সমূদ্র থেকে ৩০০০ মিটারেরও বেশি উচ্চতায় অবস্থিত। দেশটির গুরুত্বপূর্ণ নিম্নভূমির মধ্যে রয়েছে উত্তরাঞ্চলের ফের্গানা উপত্যকা এবং দক্ষিণাঞ্চলের কোফারনিহন ও ভাক্শ নদীর উপত্যকা সমূহ যেটি থেকে আমু দরিয়ার উৎপত্তি হয়েছে। কোফারনিহন উপত্যকার দক্ষিণের ঢালে রাজধানী দুশানবে অবস্থিত।
পামির পর্বতমালা এবং আলায় পর্বতমালা এবং এগুলির হিমবাহ থেকে উৎপন্ন বিভিন্ন পার্বত্য জলধারা ও নদী প্রাচীনকাল থেকে ঐ অঞ্চলের খামারভূমিতে সেচ কাজে ব্যবহার করা হয়ে এসেছে। তাজিকিস্তানের উত্তর প্রান্তে মধ্য এশিয়ার আরেক প্রধান পর্বতমালা তিয়ান শান পর্বতমালার একাংশ চলে গেছে। পর্বতগুলির উত্তরে ও দক্ষিণে রয়েছে দুইটি নিম্নভূমি অঞ্চল এবং এখানেই তাজিকিরা ব্যাপক পরিমাণে বাস করে।
নদ-নদী
সির দরিয়া নদীবিধৌত ফের্গানা উপত্যকার একাংশ উত্তর তাজিকিস্তানে পড়েছে। এই দীর্ঘ উপত্যকাটি উত্তরে কুরামিন পর্বতমালা ও দক্ষিণে তুর্কেস্তান পর্বতমালার মধ্যে অবস্থিত। দক্ষিণের নিম্নভূমি এলাকাটিতে আমু দরিয়া ও পাঞ্জ নদী দুইটি আফগানিস্তানের সাথে সীমান্ত চিহ্নিত করে আছে।
এই দুই নদীর প্রভাবে সৃষ্টি হওয়া হ্রদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- কায়রাকুম, ইসকানদেরকুল, কুলিকালন, কারাকুল, সারেজ, শাদউ লেক ও জরকুল। এছাড়া দেশটিতে ১০ কিলোমিটার এর চেয়ে দীর্ঘ এরকম প্রায় ৯০০ এর বেশি নদ-নদী রয়েছে।
ইতিহাস
তাজিকিস্তান এর নাম শুনা যায় সামানি সাম্রাজ্য (৮৭৫-৯৯৯) থেকে। তাজিক জনগণ রাশিয়ার শাসনে আসে ১৮৬৪ থেকে ১৮৮৫ সময়ের মধ্যে। বিভিন্ন সাম্রাজ্যের অধীনে কখনো এই অংশের সাথে কখনো ওই অংশের সাথে যুক্ত হয়ে এগিয়ে গেছে তাজিকিস্তানের ইতিহাস।
১৯১৭ সালে তুর্কিস্তানের অংশের ক্ষমতা দখল করে নেয় বলশেভিকরা। ১৯২২ সালেই মধ্য এশিয়াকে জাতিভিত্তিক পুনর্গঠন করার লক্ষ্যে উজবেকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তান নামে দু’টি ইউনিয়ন প্রজাতন্ত্র স্থাপন করে। ১৯২৯ সালে তাজিকিস্তান সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি অংশে পরিণত হয়।
১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সোভিয়েত সেনাবাহীনেতে তাজিকদের অংশ নেয়া বাধ্যতামূলক করা হয় এবং প্রায় ২,৬০,০০০ তাজিক নাগরিক জার্মানি, ফিনল্যান্ড এবং জাপানের বিরুদ্ধে লড়াই করে। তাজিকিস্তানের ১৫,৩০,০০০ তাজিক নাগরিকদের হত্যা করা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়।
১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন তাজিকিস্তান থেকে তার নিয়ন্ত্রণ গুটিয়ে নেয়। ১৯৯১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তাজিকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করে। ইরান সর্বপ্রথম তাজিকিস্তানকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তারাই প্রথম তাজিক রাজধানী দুশানবেতে তাদের দূতাবাস স্থাপন করে। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের ২রা মার্চ দেশটি জাতিসংঘে যোগদান করে।
গৃহযুদ্ধ
স্বাধীনতার ঠিক পর পরই দেশটিতে সাম্যবাদী সরকার ও বিরোধী দলগুলির মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। এ সময় নির্যাতন ও দারিদ্র্যের আশঙ্কা এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির আশায় অমুসলিম নাগরিক বিশেষ করে ইহুদি এবং রুশরা দেশ ছেড়ে প্রাক্তন সোভিয়েত দেশে পালিয়ে যায়।
গৃহযুদ্ধের তিনটি অভিজ্ঞতা লাভ করে। নিহতের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ । ১৯৯৭ সালের জুন মাসে দুই পক্ষ একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে। প্রেসিডেন্ট ইমোমালি রাহমন ১৯৯৪ সাল হতে দেশটির একচ্ছত্র অধিপতি হিসেবে শাসন করে আসছেন। তাজিকিস্তান জাতিসংঘ, সিআইএস, ওএসসিই, ওআইসি, ইসিও, এসসিও এবং সিএসটিও এর সদস্য।
রাজনীতি
তাজিকিস্তানের রাজনীতি একটি রাষ্ট্রপতিশাসিত প্রজাতন্ত্র কাঠামোয় সংঘটিত হয়। রাষ্ট্রপতি হলেন একাধারে রাষ্ট্রের প্রধান ও সরকারপ্রধান। আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সরকার এবং ৬৩ সদস্যবিশিষ্ট দ্বিকাক্ষিক আইনসভা উভয়ের উপর ন্যস্ত। ২০০৩ সালের নতুন সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ৭ বছর মেয়াদের জন্য জনগনের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন। সংবিধান অনুসারে বিচার বিভাগ সরকার থেকে স্বাধীন।
অর্থনীতি
তাজিকিস্তানের প্রায় ৫০% শ্রমশক্তি কৃষিতে কাজ করে। প্রধান রপ্তানি ফসল তুলা। এছাড়াও আঙ্গুর এবং অন্যান্য ফল, শস্য, এবং পশু উৎপাদন হয়। আনজাব টানেল উত্তরাঞ্চলের সাথে রাজধানীর যোগাযোগকে সহজ করেছে। এ টানেলটি ইরান ও আফগানিস্তানের সাথে দেশটির যোগাযোগের জন্য রাস্তার অংশ হিসেবে তৈরি করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় তাজিকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে নির্মিত ব্রিজ দক্ষিণ এশিয়ার সাথে তাজিকিস্তানের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে মজবুত করছে। দেশটির অর্থ খাতের প্রধান ভূমিকা পালনকারী বিষয়গুলো হচ্ছে অ্যালুমিনিয়াম ও তুলা এবং প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স।
রাষ্ট্র পরিচালিত অ্যালুমিনিয়াম ফ্যাক্টরি ট্যালকো মধ্য এশিয়ার বৃহত্তম অ্যালুমিনিয়াম কোম্পানি। দেশটি হাইড্রোইলেকট্রিক শক্তি উৎপাদনে বিশ্বে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। মাদক উৎপাদন ও পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে তাজিকিস্তান এ খাতে প্রচুর অর্থ আয় করে থাকে। খনিজ সম্পদ রয়েছে সোনা, রুপা, ইউরেনিয়াম।
ভাষা
তাজিক ভাষা ও রুশ ভাষা তাজিকিস্তানের সরকারি ভাষা। এদের মধ্যে তাজিক ভাষাতে প্রায় ৮০% লোক এবং রুশ ভাষাতে প্রায় ৫% লোক কথা বলেন। তাজিকিস্তানে প্রচলিত অন্যান্য ভাষাগুলির মধ্যে আছে উজবেক ভাষা, ফার্সি ভাষা এবং পশতু ভাষা। তাজিক ভাষাভাষী লোকরাই মূলত দেশটির মূল অধিবাসী।
দেশটিতে বসবাসকারী সবাইকেই তাজিক বলেই পরিচয় দেয়া হয়। উত্তর তাজিকিস্তানে ২৫ হাজার লোক রয়েছে ইয়াগনোবি সম্প্রদায়ের। তারা ইয়াগনোবি ভাষাতেই কথা বলে থাকে। জনগণের ৩০ বছরের কম বয়সী ৭০% এবং ৩৫% ১৪ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে।
ধর্ম
তাজিকিস্তানে ২০০৯ সালে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তবে অন্য যেকোনো ধর্ম পালনের পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে। দেশটির ৯৮ শতাংশ লোক মুসলমান। বাকি দুই শতাংশের মধ্যে অর্থোডক্স, প্রোটেস্ট্যান্ট ও ক্যাথলিক খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ও ইহুদি রয়েছে। দেশটির ৯৯.৫ শতাংশ লোক লিখতে ও পড়তে পারে।
খেলাধুলা
পর্বতময় তাজিকিস্তানের খেলাধুলাও পাহাড়পর্বতকেন্দ্রিক। পাহাড়ে হাঁটা, উঁচু পাহাড়ে আরোহণ করা ইত্যাদিই এখানকার প্রধান খেলা হিসেবে পরিচিত। দেশটিতে ফুটবলও একটি জনপ্রিয় খেলা।
সংস্কৃতি
তাজিকিস্তানে স্বাধীনভাবে ধর্মচর্চা হয়। ইসলামের প্রচার-প্রসার ঘটেছে সপ্তম শতাব্দীতে আরবদের মাধ্যমে। সে সময় থেকেই ইসলাম তাজিক সংস্কৃতির অংশে পরিণত হয়। তবে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর সেখানে ধর্মচর্চার ব্যাপক প্রসার লাভ করে।
জনগণকে ধর্ম পালনে মনোযোগী দেখা যায়। রমজান মাসে রোজা পালনকারীর সংখ্যা ৯৯ শতাংশে গিয়ে পৌঁছে। তাজিক সরকার ২০০৯ সালকে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বর্ষ হিসেবে পালন করে। সে বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রথিতযশা আলেম-চিন্তাবিদদের আমন্ত্রণ জানানো এক আন্তর্জাতিক সিম্পোজিয়ামে।
২০১০ সালে বিশ্ব ইসলামি সংস্থা ওআইসি’র একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় দুশানবেতে। এতে বিশ্বের ৫৬টি মুসলিম দেশের প্রতিনিধিরা যোগদান করেন। তাজিকিস্তানে এখন মসজিদকেন্দ্রিক প্রচুর মাদরাসাও রয়েছে। রাস্তায় প্রচুর দাড়ি-টুপিওয়ালা মুসলমান ও হিজাব পরা মুসলিম মহিলাদের দেখা যায়।
তাজিকিস্তানে স্থানীয়দের বাড়িতে অথবা মসজিদে প্রবেশের সময় কেউ না বললেও জুতা খুলে প্রবেশ করতে হবে। তাজিকিস্তানের সংস্কৃতিতে সে দেশের লোকেরা ভিনদেশীদের সাথে খুব ভালো আচরণ এবং হাসিখুশিতে কথা বলে থাকেন। সেখানে একটা কথা প্রচলন আছে যে, ‘অতিথিরা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি উপহার স্বরূপ’ যে কারণে তারা সবসময় সবার সাথে হাস্যরস থাকার চেষ্টা করেন।
তাজিকিস্তানের জনগণ খুবই বন্ধুভাবাপন্ন। বিশেষ করে পর্বত এলাকার জনগণ একজন ভিনদেশীকেও নিমন্ত্রণ জানান। খাবারের টেবিলে প্রথমে এক কাপ চা অথবা স্যুপ দেয়া হয়। চা সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয়। গ্রীন এবং কালো চা দুটোই সমান জনপ্রিয়, তবে চায়ের সাথে চিনি কখনো ব্যবহার করা হয় না। এছাড়াও দেশটিতে অন্যান্য পানীয়ের মধ্যে জুস, সফ্ট ড্রিঙ্কস কপি খেতে পারবেন।
দুশানবে
রাজধানী ও প্রধান শহর দুশানবে সোভিয়েত আমলে স্তালিনাবাদ নামে পরিচিত ছিল। হিসর উপত্যকাতে অবস্থিত শহর দুশানবেতে অনেক শিল্প কারখানা আছে। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত তাজিক সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় এবং তাজিক বিজ্ঞান অ্যাকাডেমিও অবস্থিত।
১৯২৯ সালে দুশান্বেকে তাজিক সোভিয়েত সাম্যবাদী প্রজাতন্ত্রের রাজধানী বানানো হয় এবং এর নাম দেওয়া হয় স্তালিনাবাদ। ১৯৬১ সালের এর নাম বদলে দুশান্বে রাখা হয় এবং ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর শহরটি স্বাধীন তাজিকিস্তানের রাজধানীতে পরিণত হয়। দুশানবের গ্র্যান্ড মসজিদের নাম ইমাম আবু হানিফা মসজিদ। বর্তমানে রাজধানীতে শতাধিক মসজিদ রয়েছে।
দুশানবের প্রধান আকর্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রপতি প্যালেস, সোমনি স্ট্যাচু, জাতির প্রাসাদ, লেনিন স্মৃতিস্তম্ভ, পুতুল থিয়েটার, তাজিকিস্তানের জাতীয় জাদুঘর, জাতীয় পতাকার একটি বড় পতাকাঘর, জাতীয় গ্রন্থাগার, ভিক্টোরি পার্ক, কৃষকদের বাজার, এবং অন্তর্ভুক্ত চরকি মসজিদ, ডলফিন ওয়াটার পার্ক, থিয়েটার, স্বাধীনতা স্মৃতিস্তম্ভ, রুদাকি পার্ক এবং স্থানীয় ইতিহাসের যাদুঘর।
দুশানবেতে বুদ্ধের আধা-পুনরুদ্ধারকৃত মুর্তি ছাড়াও আরো অনেক কিছ্ইু আছে। এদের মধ্যে পৃথিবীর দ্বিতীয় উচ্চতম পতাকাদণ্ড রয়েছে। রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম চায়ের দোকান।
দর্শনীয় স্থান
দেশটির রাজধানী দুশানবে, খুজান্দ, দুলব, পাঞ্জাকেন্ট এবং ইস্তারভশান প্রধান এলাকা হিসেবে পরিচিত। এছাড়া রয়েছে কুলোব, কুরঘন্টেপা, তুরসুনসোদা, ইসফারা এবং কোনিবোদোম। দুশানবে ছাড়াও আরো কয়েকটি দর্শনীয় স্থান হচ্ছে- ক্যারাকুল লেক, পামির হাইওয়ে এবং পর্বতমালা, ফ্যান পর্বতমালা, ইসকান্দারকুল লেক, ইয়ামসুন পোর্টরেস প্রভৃতি।
এছাড়া রয়েছে- মার্গুজোরের কাছে সাতটি হ্রদ, উত্তপ্ত ঝর্ণা গার্ম চশমা, খোরোগ সিটি পার্ক, ফ্যান পর্বতমালা, নুরেক বাঁধ, প্রাকৃতিক ইতিহাস যাদুঘর এবং খুজান্দের সোমনি পার্ক ও হিসোর ফোর্ট। দুশান্বে এবং খুজান্দের মধ্যে পথে প্রশস্ত প্রাকৃতিক দৃশ্য দুর্দান্ত। উঁচু, ভিন্ন বর্ণের পাহাড় এবং অনেক হালকা নীল জলে প্রকৃতি অত্যন্ত আকর্ষণীয়।
মধ্য এশিয়ার সবচেয়ে সুন্দর হ্রদগুলোর একটি ইসকান্দারকুল। এই হ্রদের সাথে মহাবীর আলেকজান্ডারের ইতিহাস জড়িয়ে আছে। এটি সমুদ্র সীমা থেকে ২,১৯৫ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। হ্রদটি চারপাশের প্রকৃতির আয়না হিসেবে কাজ করে। ফেয়ারিতালিশের চূড়ার প্রতিচ্ছবি হ্রদের জলে পরিষ্কার দেখা যায়। এখানেই দেখা যায় শিং প্রিন্সেস হিসেবে খ্যাত সেভেন লেকস অব শিং-কেও।
ঐতিহাসিক স্থাপনা
তাজিকিস্তানের ঐতিহাসিক স্থাপনার একটি হলো হিসর দুর্গ। এটি দুশানবে থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। খুব প্রাচীন স্থাপনা এটি। দুর্গ প্রতিষ্ঠার ৩ হাজার বছর পূর্তি উদযাপন করা হয়েছে। খুজান্দের শেখ মুসলিহিদ্দিন মসজিদ দেখতে খুব চমৎকার।
ইস্তারাভশান শহরটি বিশ্ববিখ্যাত বীর আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আগে শহরটি তার নামে আলেক্সান্দিয়া হিসেবে পরিচিত ছিল। আজিনা-টেপে বৌদ্ধ মঠ। ১৯৬৬ সালে মাটি খননের ফলে এই মঠ আবিস্কৃত হয়। আর তখনই পাওয়া যায় মধ্য এশিয়ার সবচেয়ে বৃহত্তম বুদ্ধ মূর্তি। এটি এখন দুশানবের তাজিকিস্তানের পুরাতাত্ত্বিক জাতীয় জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য রাখা আছে।