আনিসুর রহমান এরশাদ
মধ্যপ্রাচ্যের সার্বভৌম আরব রাষ্ট্র সৌদি আরব বিশ্বের শীর্ষ ধনী দেশের একটি। ভৌগোলিকভাবে পশ্চিম এশিয়ার বৃহত্তম রাষ্ট্র অর্থাৎ এশিয়ার সবচেয়ে বড় আরব দেশ। আলজেরিয়ার পরে আরব বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ, এশিয়ার পঞ্চম বৃহত্তম এবং বিশ্বের দ্বাদশতম বৃহত্তম দেশ। দেশটি পুরোপুরি রাজতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হয় এবং আইনের ক্ষেত্রে ইসলামি আইনের অনুসরণ করা হয়। ইসলামের দুই পবিত্র মসজিদ মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীর কারণে সৌদি আরবকে দুই পবিত্র মসজিদের দেশ বলা হয়। পৃথিবীর চতুর্থ সর্বোচ্চ সামরিক খরচ বহনকারী দেশটিকে মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতাধর দেশ হিসেবে ধরা হয়।
একনজরে সৌদি আরব
নাম: সৌদি আরব সাম্রাজ্য বা কিংডম অফ সাউদি আরাবিয়া
পুরো নাম: আল মামলাকাতুল আরাবীয়াতুস সৌদিয়া বা আল-মামলাক আল আরাবিয়া আল-সউদিয়া
প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক রাজধানী : রিয়াদ
ধর্মীয় রাজধানী : মদিনা
বৃহত্তম শহর: দাম্মাম, রিয়াদ
শাসন পদ্ধতি: শরিয়া পরিচালিত রাজতন্ত্র
আইনসভা: মন্ত্রি পরিষদ (বাদশাহ কর্তৃক নিযুক্ত)
জাতীয়তাসূচক বিশেষণ সৌদিয়ান
আয়তন: ২১৫০০০০ বর্গকিলোমিটার
জনসংখ্যা: ৩৪৭৬০০০০
মুদ্রা: সউদি রিয়াল
মাথাপিছু আয়: ৫৬,৮১৭ মার্কিন ডলার
ধর্ম: সুন্নী ইসলাম
সরকারি ভাষা: আরবি
রাষ্ট্রপ্রধান: বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ
যুবরাজ: মুহাম্মদ বিন সালমান আল সৌদ
অবস্থান ও ভূপ্রকৃতি
সৌদি আরবের উত্তরে জর্দান ও ইরাক, উত্তরপূর্বে কুয়েত, পূর্বে কাতার, বাহরাইন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত অবস্থিত, দক্ষিণ-পূর্বে ওমান ও দক্ষিণে ইয়েমেন অবস্থিত। উত্তর-পূর্ব পারস্য উপসাগর এবং পশ্চিমে লোহিত সাগর অবস্থিত। দেশটির বেশিরভাগ অঞ্চলই মরুভূমি। সবচেয়ে বড় মরুভূমির নাম রুব আল-খালী। যার পশ্চিমাংশ উর্বর। ভৌগলিকভাবে আরব উপদ্বীপে আধিপত্য বিস্তার করে।
জনসংখ্যা
জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১৫ জন। ৯০ ভাগ আরব আর ১০ ভাগ আফ্রো-আরব।
অর্থনীতি
পৃথিবীর অন্যতম প্রধান সর্বোচ্চ তেল উৎপাদন ও রপ্তানিকারক। বাজেটে রাজস্ব মোটামুটি ৭৫% এবং রপ্তানি আয়ের ৯০% তেল শিল্প থেকে আসে। সমগ্র বিশ্বের ভূ-ভাগের ২০% খনিজ তেলের মজুদ রয়েছে। পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম হাইড্রোকার্বন মজুদকারি দেশ। দেশটি মানব সম্পদ উন্নয়ন সূচকেও উপরের দিকে। জি-২০ প্রধান অর্থনৈতিক শক্তির সদস্য একমাত্র আরব দেশ। জিসিসি, ওআইসি ও ওপেক এর সদস্য। গ্যাস ও স্বর্ণ খনি রয়েছে।
শাসন পদ্ধতি
১৯৯২ সালে রাজকীয় ফরমান জারির মাধ্যমে গৃহীত মৌলিক আইন অনুযায়ী বাদশাহকে অবশ্যই শরিয়া (ইসলামি আইন) এবং কোরআন মেনে শাসন করতে হবে। এই আইনে কোরআন এবং সুন্নাহকে সৌদি আরবের সংবিধান হিসাবে গৃহীত হয়। আইন প্রয়োগে ইসলামি শরিয়া অবলম্বন করা হয়।
জীবনযাত্রা
সৌদি নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত। শিক্ষার হার প্রায় ৮০.৫ শতাংশ। নাগরিকেরা বিলাসবহুল জীবন যাপন করেন। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী অপরাধের হার প্রায় শূন্য।
প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ
সৌদি আরব মূলত ৫টি আমিরাতে/রাজ্য বিভক্ত। মধ্যাঞ্চলীয় আরব নজদ, উত্তরাঞ্চলীয় আরব আরার, দক্ষিণাঞ্চলীয় আরব আসির, পূর্বাঞ্চলীয় আরব আহসা ও পশ্চিমাঞ্চলীয় আরব হেজাজ। প্রশাসনিকভাবে ১৩টি প্রদেশে বিভক্ত (মিনতাকাহ)।
ধর্ম-ব্যবস্থা
ইসলাম সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় ধর্ম। অমুসলিমদের দ্বারা ধর্ম প্রচার করা অবৈধ। রাজার সরকারী উপাধি হলো ‘দুটি পবিত্র মসজিদের রক্ষক’। এ দুটি মসজিদ হল মক্কার আল-মসজিদ আল হারাম এবং মদিনায় আল-মসজিদ আল-নববি।
পোশাক ও সংস্কৃতি
সৌদি নারীরা আবায়া, বোরকা, হিজাবসহ অন্যান্য শরিয়া সমর্থিত পোশাক পরেন। পুরুষেরা আলখাল্লা, জুব্বা, গুত্রা (মাথায় পরার আরব্য পোশাক) এবং টুপি পরিধান করেন। পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে ইসলামি শরিয়া মেনে চলা হয়। সাধারণত এখানকার সংস্কৃতি প্রায় ইসলামী নিয়ম মেনে চলে।
ইতিহাস
প্রথম সৌদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় ১৭৪৪ সালে। দ্বিতীয় সৌদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮২৪ সালে। তৃতীয় সৌদি রাষ্ট্র ঘোষিত হয় ১৯২৬ সালের ৮ জানুয়ারী। ১৯২৭ সালের ২০ মে স্বীকৃতি লাভ করে। রাজতন্ত্র একীভূত হয় ১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর।
আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ ১৯৩২ সালে এই ৫টি রাজ্য দখল করে সৌদি আরব সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯০২ সালে নজদ, ১৯১৩ সালে আহসা, ১৯২১ সালে আরার, ১৯২৫ সালে হেজাজ ও ১৯৩০ সালে আসির এই ৫টি রাজতান্ত্রিক দেশ দখল করে সৌদি আরব সাম্রাজ্য গঠন করে।
জাতিসঙ্ঘের সদস্যপদ লাভ করে ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর। বর্তমান সংবিধান গৃহীত হয় ১৯৯২ সালের ৩১ জানুয়ারি।
সৌদি আরবের ইতিবাচক দিক
শ্রমিকবান্ধব নীতি
বিদেশি শ্রমিকদের নিয়োগ বিষয়ক ‘কাফালা’ ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনেছে সৌদি আরব। দেশটিতে অবস্থানরত বিদেশি শ্রমিকরা নিয়োগকর্তার অনুমতি ছাড়াই চাকরি পরিবর্তন করতে পারে। শ্রমিকদের সৌদি আরবে যাওয়া ও সেখান থেকে চলে আসার স্বাধীনতা রয়েছে। নিয়োগকর্তা বা স্পন্সরের অনুমোদন লাগবে না। সরকারি অনুমোদন ছাড়াই কাজে যোগ দিতে পারবেন শ্রমিকরা।
নারীবান্ধব নীতি
নারীদের সব ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীতে নিয়োগ পাচ্ছে। বিচারকের আসনে বসছে। শ্রমবাজারে অংশগ্রহণের হার ৩১ শতাংশে পৌঁছে গেছে। সরকারি চাকরিতে অংশগ্রহণ ৩৯ থেকে ৪১ শতাংশ। নারীরা গাড়ি চালাচ্ছে, ফুটবল মাঠে বসে খেলা দেখছে, চাকরি করছে ও ব্যবসা করছে। স্বামী ও অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া হোটেলেও থাকতে পারছে।
নারী বিমানবালা নিয়োগ করা হয়েছে। মক্কার দুই পবিত্র মসজিদের বিভিন্ন বিভাগে দেড় হাজার নারী কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রদূত হিসেবেও নারীদের নিয়োগ দিচ্ছে সরকার। শূরা কাউন্সিলের ডেপুটি স্পিকার হিসেবেও নিয়োগ পেয়েছেন নারী। অ্যাম্বুলেন্স চালকের আসনে বসছেন। নারীদের জন্য ডিজিটাল কলেজ চালু করা হয়েছে। ভোটাধিকার পেয়েছে ও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।
ছাত্রীদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের অনুমতিও দেওয়া হয়েছে। পবিত্র দুই মসজিদ মক্কা ও মদিনার পরিচালনা কমিটির ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে ১০ জন নারীকে নিয়োগ দিয়েছে । মক্কা নগরীতে পবিত্র হজে নিরাপত্তার কাজে নারী পুলিশ মোতায়েন করেছে।
স্বাস্থ্যবান্ধব নীতি
বিশ্বের সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর নগরীর মর্যাদা পেয়েছে সৌদি আরবের পবিত্র নগরী মদিনা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মীরা আন্তর্জাতিক মাপকাঠিতে নগরীটিকে জরিপ করে এ স্বীকৃতি দিয়েছেন।
পরিবেশবান্ধব নীতি
সৌদি আরবের উত্তর পশ্চিমে লোহিত সাগরের তটবর্তী এলাকায় প্রায় ২৬ হাজার ৫০০ বর্গকিলোমিটার জুড়ে বানানো হচ্ছে দূষণমুক্ত শহর। ভবিষ্যতের শহরটিতে থাকবে না কোনো যানবাহন, কোনো রাস্তা এবং কোনো কার্বন নির্গমন।
শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে ২০ মিনিটের বেশি সময় লাগবে না। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে এই শহরে। এখানকার সবকিছু চলবে পরিশ্রুত জ্বালানির সাহায্যে, যা পুরোপুরি পরিবেশবান্ধব।
ফ্যাশনবান্ধব নীতি
সৌদি সমাজ পশ্চিমা ঢঙের উদারনৈতিকতার দিকে ঝুঁকেছে। ফ্যাশন সচেতন সৌদি তরুণীরা প্রকাশ্যে আসছেন পশ্চিমা পোশাকে। বিভিন্ন রং ও স্টাইলের দিকে ঝুঁকছেন তারা। দৈনন্দিন ব্যবহারের পোশাকেও এসেছে পরিবর্তন। আবায়ার ভেতর জিন্স-শর্টস পরছেন। নতুন স্টাইলের পার্টি ড্রেস পরছেন। খোলামেলা আবায়া ও কাফতান আবায়ার চল শুরু হয়েছে। এসেছে স্বল্পদীর্ঘ ও শর্ট স্লিভস আবায়ারও প্রচলন।
বিভিন্ন অনুষ্ঠানের থিমের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বানানো হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনের আবায়া। পৃথক অনুষ্ঠানের জন্য পৃথক আবায়া পরিধানের রেওয়াজ শুরু হয়েছে। গাউন স্টাইল, পশ্চিমা নারীদের কোটের মতো করে বানানো হচ্ছে আবায়া। পছন্দের মানুষ বা তারকার ছবি সংবলিত আবায়ার প্রতি ঝুঁকছেন সৌদি নারীরা।
নেকাবেও এসেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। পাতলা ফিনফিনে কাপড়ের নেকাবের পাশাপাশি আগের হাত মোজার জায়গায় স্থান পেয়েছে গ্লাভস। নিত্যনতুন স্টাইল ও নতুন ধরনের কাপড় স্থান করে নিচ্ছে পছন্দের তালিকায়।
ব্যবসাবান্ধব নীতি
খ্রিস্টানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব বড়দিন উপলক্ষে ক্রিসমাস সামগ্রী বিক্রিরও অনুমতি দেয় হচ্ছে। শুধু ক্রিসমাস সামগ্রীই নয়, হ্যালোইনের পোশাকও বিক্রি হচ্ছে। নিজ নামে ব্যাংক হিসাব খোলা ও রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যবসা করার অনুমতি পেয়েছেন সৌদি নারীরা।
পর্যটনবান্ধব নীতি
সৌদি আরব পর্যটন ভিসা চালু করার পরিকল্পনা নিয়েছে। সিংহাসনের উত্তরসূরি মোহাম্মদ বিন সালমানের উচ্চাভিলাষী সংস্কার কৌশলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তম্ভ হচ্ছে পর্যটন। তেলের ওপর থেকে অর্থনৈতিক নির্ভরতা কমাতে চাচ্ছে সৌদি সরকার। বিবাহের প্রমাণ ছাড়াই বিদেশি নারী ও পুরুষ পর্যটক এক রুমে থাকতে পারছেন। বিভিন্ন স্থানে বিনোদন পার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে।
ইসলামবান্ধব নীতি
ফ্রান্সে মহানবী হযরত মোহাম্মদকে (সা.) নিয়ে বিদ্রূপাত্মক কার্টুনের নিন্দা জানায় সৌদি আরব। সৌদি মন্ত্রিপরিষদ সবসময় ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশে দেশে মসজিদ নির্মাণে ও কুরআন বিলাতে সহায়তা কওে থাকে।
সৌদি আরবের নেতিবাচক দিক
দেশটিতে রাজনৈতিক সংগঠন কিংবা জাতীয় নির্বাচন নিষিদ্ধ। অর্থাৎ সাধারণ জনগণ মুক্ত নয়। দ্য ইকোনমিস্ট প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সৌদি আরব সরকারকে পৃথিবীর পঞ্চম সর্বোচ্চ স্বৈরাচারী সরকার হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন অস্ত্রের সবচেয়ে বড় ক্রেতা সৌদি আরব। ট্রাম্পের মেয়াদের শেষ দিনগুলোতে দেশটির কাছে ৩০০০ স্মার্ট বোমা বিক্রি করছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২০ সালেও অস্ত্র আমদানি ৬১ শতাংশ বাড়িয়েছে সৌদি আরব।
জুমার খুতবায় মুসলিম ব্রাদারহুডের নিন্দা না করায় ১০০ ইমাম ও ধর্ম প্রচারককে বরখাস্ত করা হয়েছে। ইসরাইলের বাণিজ্যিক বিমানকে নিজেদের আকাশপথ ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে মার্কিন আদালতে মামলা করেছেন নিহত সাংবাদিক জামাল খাশোগির বাগদত্তা খাদিজা সেনজিজ।
প্রতিবছর সৌদি আরবে ৮৩ লাখ টন খাদ্য অপচয় হয়। যা বর্তমান বিশ্বে সর্বোচ্চ। সৌদি আরবে প্রতিবছর যে পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য উৎপাদিত হয় তার ৩০ শতাংশই অপচয় হয়। গড়ে একজন সৌদি নাগরিক প্রতিবছর ২৫০ কেজি খাদ্যদ্রব্যের অপচয় করে। সৌদিতে সবচেয়ে বেশি খাদ্য অপচয় হয় ডিনার পার্টি, বিয়ে, রেস্টুরেন্ট ও হোটেলগুলোতে।
গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য
পবিত্রতম নগরী মক্কা
মক্কার পূর্ণ নাম মাক্কাহ্ আল মুকাররামাহ্। হেজাজের একটি শহর ও প্রদেশটির রাজধানী। সমুদ্রতল থেকে ২৭৭ মিটার উপরে একটি সংকীর্ণ উপত্যকায় শহরটি অবস্থিত। এই শহরে মুহাম্মদ (সা.) এর জন্ম। এখানেই শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে হেরা গুহায় তিনি কুরআনের প্রথম ওহী লাভ করেন।
বিশ্বের চতুর্থ উচ্চতম ভবন মক্কা রয়েল ক্লক টাওয়ার এই শহরেই অবস্থিত। উক্ত ভবনের মেঝের আয়তন সারা বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম। ১৫ মিলিয়ন মুসলিম প্রতিবছর হজ্জ্ব ও উমরাহ পালনের জন্য এখানে আসেন। শহরটি সারা বিশ্বের অন্যতম প্রধান বিশ্বজনীন শহরে পরিণত হয়েছে। এই শহরে অমুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধ।
হাজিদের জন্য সকল স্বাস্থ্য সেবা বিনামূল্যে দেওয়া হয়। আজইয়াড হাসপাতাল, বাদশাহ ফয়সাল হাসপাতাল, বাদশাহ আব্দুল আজিজ হাসপাতাল, আল নূর বিষেশায়িত হাসপাতাল, হিরা হাসপাতাল, মা ও শিশু হাসপাতাল ও বাদশাহ আব্দুল্লাহ মেডিকেল সিটি। উচ্চশিক্ষার জন্য একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়, উম্মুল-কুরা বিশ্ববিদ্যালয়।
নবীর শহর মদিনা
আল-মদিনা আল-মুনাহওয়ারা হেজাজ অঞ্চলের একটি শহর এবং আল মদিনাহ প্রদেশের রাজধানী। ইসলামের দ্বিতীয় পবিত্র শহরটিতে মুসলমানদের শেষ নবী মুহাম্মাদ (সা.) এর রওযা। ইসলামের প্রাচীনতম ও ঐতিহাসিক তিনটি মসজিদ- মসজিদে নববী, কুবা মসজিদ (ইসলামের ইতিহাসে প্রথম মসজিদ) এবং মসজিদ আল কিবলাতাইন (যে মসজিদে মুসলমানদের কিবলা পরিবর্তন হয়েছিল) অবস্থিত। রয়েছে ঐতিহাসিক উহুদ পর্বত।
উদ্ভাবনের শহর জেদ্দা
সৌদি আরবের পশ্চিমাঞ্চলে লোহিত সাগরের তীরে অবস্থিত তিহামাহ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ শহর জেদ্দা। এটি মক্কা প্রদেশের সর্ববৃহৎ ও সৌদি আরবের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। লোহিত সাগরের উপর অবস্থিত সর্ববৃহৎ সমুদ্রবন্দর এই শহরেই অবস্থিত। শহরটি সৌদি আরবের অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র।
জেদ্দা হল মুসলিম উম্মাহর জন্য পবিত্রতম নগরী মক্কার প্রধান প্রবেশদ্বার। মুসলিমদের জন্য দ্বিতীয় পবিত্রতম নগরী মদিনারও অন্যতম প্রবেশদ্বার জেদ্দা। আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির মধ্যে উদ্ভাবনের শহর সূচক অনুযায়ী জেদ্দা চতুর্থ অবস্থান অর্জন করেছে।
পৃথিবীর প্রথম মসজিদ কাবা
মক্কার প্রাণকেন্দ্রে কাবা অবস্থিত। কাবা হলো পৃথিবীর প্রথম মসজিদ। মুসলিমরা প্রতিদিন পাঁচ বার নামায আদায়ের সময় এই কাবার দিকে মুখ ঘুরিয়ে রাখেন। কাবা শরীফ মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে। কাবা সবচেয়ে পবিত্র স্থান। এটি মুসলমানদের কিবলা। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।
কাবা কালো সিল্কের উপরে স্বর্ণ-খচিত ক্যালিগ্রাফি করা কাপড়ের গিলাফে আবৃত থাকে। কাপড়টি প্রতিবছর পরিবর্তন করা হয়। কালেমা শাহাদাত এ কাপড়ের মধ্যে সুতা দিয়ে লিখার কাঠামো তৈরি করা হয়। এর দুই তৃতীয়াংশ কোরানের বাণী স্বর্ণ দিয়ে এম্রোয়ডারি করা হয়। কাবা শরিফে চড়ানো নতুন গিলাফে ৬৭০ কেজি খাঁটি রেশম, ১২০ কেজি খাঁটি স্বর্ণ এবং ১০০ কেজি রূপার সুতা ব্যবহার করা হয়েছে। গিলাফে ব্যবহৃত খাঁটি রেশম আনা হয়েছে ইতালি থেকে। স্বর্ণ জার্মান থেকে।
সৌদি আরবে যেসব কাজ নিষিদ্ধ
যৌনতা প্রকাশ পায় এমন আচরণ। আবাসিক এলাকায় উচ্চ শব্দে গান বাজানো। নামাযের সময়ে গান বাজানো। পোষা প্রাণীর বিষ্ঠা পরিস্কার না করা। নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া যত্রতত্র থুথু ও ময়লা ফেলা। গণপরিবহনে বয়স্ক আর প্রতিবন্ধীদের আসনে বসা। পাবলিক প্লেসে বাধা ডিঙ্গানো। পাবলিক প্লেসে যথাযথ পোশাক না পরা।
পোশাকে নগ্নতা। গণপরিবহন ও দেয়ালে লেখালেখি। কাউকে শারীরিক বা মৌখিকভাবে আক্রমণ করা। পাবলিক প্লেস বা পার্কে অগ্নি প্রজ্বলন। অপেক্ষারত লাইন ভাঙা। বৈদ্যুতিক বা লেজার বিম ব্যবহার করে ভয় দেখানো বা ক্ষতি করা। অনুমতি ছাড়া কারো ছবি বা ভিডিও তোলা।